আবু মিছিল
যে জাতি উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা, তাদের অনিষ্ট ঠেকানো কঠিন! করোনা প্রাদুর্ভাবের একেবারে শুরুর দিকে আমি যখন ব্যাংকারদের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য লিখলাম। লেখাটি অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়লো। প্রথম আলো থেকে কপি করে অন্য কয়েকটি পত্রিকায়ও লেখাটি প্রকাশিত হলো। ব্যাংকাররা একাত্ম হয়ে সুরক্ষা সরঞ্জামের দাবি তুললো। এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু লোক দ্বিমত পোষণ করে বললেন এসব লাগেনা। এরপর দেখা গেলো করোনায় কয়েকজন ব্যাংকার মারা গেলেন। অন্যান্যরা আক্রান্ত হলেন এবং তারপরও ব্যাংক খোলাই রাখা হলো।
ব্যাংক হলো অর্থনীতির হাসপাতাল। তাই একে বন্ধ রাখা যায় না। ব্যাংকে ভিরের ছবি দেখলে আন্দাজ করা সহজ যে, বর্তমানে হাসপাতালের চেয়েও বেশি লোক ব্যাংকে যায়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জরুরি সেবা হিসেবে তাহলে ব্যাংক খাতকে কেন মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা? জাতীয় দুর্যোগে যারা বুক চিতিয়ে লড়ে যাচ্ছে, তাদের আর্থিক স্বীকৃতি দূরে থাক, মৌখিক কোনো স্বীকৃতিও জুটছে না। সংকট মোকাবিলায় একের পর এক পরিপত্র জারি হচ্ছে কিন্তু সেখানে ব্যাংকারদের নাম নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে সাধারণ ব্যাংকারদের মন জয় করতে পারছে কই? অফিস খোলা রেখে তারা রাস্তায় পুলিশি হয়রানিতে ফেলছেন ব্যাংকারদের।
পরিচয় দেয়ার পরেও মিলছে না নিস্তার। এ যেন ব্যাংকাররা ব্যাংকে সেবা দিতে যাচ্ছে না। যাচ্ছে আমোদ প্রমোদে শামিল হতে। অফিসারদের পথে পথে কেন হেনস্থা করা হচ্ছে? কেন তাদের ঝুঁকি ভাতার আওতায় আনা হয়না? নগদ প্রণোদনা না হোক, নূন্যতম একটা বীমা পলিসির আওতায় কেন আনা হবেনা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ডেস্কে বসা লোকটাকে? কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণ বীমার আওতায় কেন আসেনা? আল্লাহ না করুন, সহকর্মীরা যারা ব্যাংক লোন নিয়ে বাড়ি করেছে, তাঁরা এই ছোবলে গণহারে মারা পড়লে উত্তরাধিকারীরা ওই বন্ধক রাখা বাড়ি থেকে বের করে দেয়া ছাড়া কী পাবে? অর্থনীতির প্রাণভোমরা ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা পাচ্ছেন। অথচ তাদের ভালো মন্দের সহযোদ্ধা ব্যাংকারদের জন্য কী আছে? জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা কাজ করতে করতে আজ বিপর্যস্ত, তাদের পিঠ চাপরে বাহবা দেয়ারও কেউ নেই। ইতোমধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখা লক ডাউন করা হয়েছে। অন্যান্য ব্যাংকারদের ভাগ্যে কী আছে, আল্লাহ পাক-ই ভালো জানেন।
জনসাধারণের জন্য সরাসরি ব্যাংকিং সেবা মানেই ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং। ব্যাংকাররা সবাই নিজ ও তাদের সহকর্মীদের নিয়ে চিন্তিত। সমাজে প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ কাজের জন্য যথোপযুক্ত সম্মান করা উচিৎ। কিন্তু এই সমাজে ব্যাংকারদের অবদানকে সম্মানের চোঁখে দেখা তো দূরে থাক প্রাপ্য ধন্যবাদটুকু দিতেও এতো কার্পূণ্য কেন? নিজ উদ্যোগে নিরাপত্তা পোশাক পরিধান করে জনসেবা দিয়েও, তাদের নিয়ে টিটকারি কেন? আপনি ভাবছেন পিপিই শুধু ডাক্তারদেরই দরকার? হৃদয় দিয়ে ভাবলে দেখবেন এটা এখন বাড়ি বাড়ি যেয়ে ময়লা সাফ করা সুইপার ভাইদের-ও দরকার।
করোনা সংকটের মর্মার্থ বুঝেন নি? এই সংকটে আল্লাহ পাক চোঁখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, মানুষ মানেই সবাই এক। হ্যাঁ, কোন বৈষম্য নেই। অন্যকে খারাপ রেখে নিজে ভালো থাকা যাবেনা। এই রোগ সেই বার্তাই নিয়েই এসেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, স্পেনের রাজকুমারী আর আমাদের মতো সাধারণের জীবনের দাম একই। সেই মূল্য হলো ” অমূল্য “! কাজেই সম্মান নিয়ে বাঁচুন, সম্মান করে বাঁচুন। ব্যাংকারদের অন্তর্জালা বুঝতে চেষ্টা করুন।
লেখকঃ রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের আইন কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা সংগঠকঃ ” আমাদের স্বপ্ন ” ও আন্তঃপেশাজীবী সম্প্রীতি সমিতি।
মতামতের জন্য লেখক নিজেই দায়বদ্ধ থাকিবেন।