বিল্লাল বিন কাশেম
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা সংকট মোকাবেলা যে একা করা সম্ভব নয়, বুঝতে শুরু করেছে বিশ্ববাসী। সংকট মোকাবেলায় সকলকে এক সাথে কাজ করতে হবে এটা বুঝতে শুরু করছে সবাই। এ কারণে দেশে অনেক বড় প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না এলেও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক নিজ উদ্যোগেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। এগুলো দেখে আরো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন যোগ দিয়েছে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে। প্রতিটি দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের মানুষ যেমন ঘরে বসে না থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মোকাবেলা করেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বা হচ্ছে না। বাঙালি পারে না এমনটা কিছু নেই।
সংকটের এ সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটস বলেছেন, আমেরিকা যদি তার ব্যবসা-বাণিজ্য এ সময় আবার আগের মতো শুরু করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি শহরের রাস্তায় রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে থাকাটা একটা সাধারণ দৃশ্যে পরিণত হবে। তার এ কথাটাই আজ চরম সত্য বলেই বিবেচিত। দেশে দেশে ঘরে বাইরে চলছে লক ডাউন। জনবিচ্ছিন্ন মানুষ এখন ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে।
মানুষ মানুষের মধ্যে দূরত্ব রাখতে বিশ্বের সবচে পবিত্র স্থানগুলোকেও বন্ধ রাখা হয়েছে। মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম, মদিনাতে মসজিদে নববী, বেনারস, ভ্যাটিকান বন্ধ রাখা হয়েছে। জরুরী সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল, কলেজ’সহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড। মানুষের প্রত্যাহিকক অভ্যাসও বদলে দিয়েছে এই করোনা।
এ মহামারীতে কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, সমাজিক দূরত্ব একটা প্রাথমিক কৌশল হতে পারে। যা থেকে সংক্রমণ কমতে পারে। কিন্তু এটা কোন চুড়ান্ত সমাধান না। চুড়ান্ত সমাধান হল ভ্যাকসিন আবিস্কার। যা খানিকটা সময়সাপেক্ষ। আধুনিক বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কানে ধরে উঠবস করাচ্ছে এই করোনা। মানবজাতি আজ রিক্ত, নিঃস্ব ও অসহায় প্রকৃতির সৃষ্ট করোনা দাপটের কাছে।
আমাদের সমাধানের পথে হাটতে হলে চীন কিংবা রাশিয়াকে অনুসরণ করতে হবে। এ দশদিনে সংক্রমণ কমে গেল। আবার আমরা আগের মত ঘরে বাইরের জীবন শুরু করলাম। লক ডাউনের পরের প্রস্তুতি কি আমাদের আদৌ জানা আছে? আমাদের সবার আগে জানতে বা বুঝতে হবে সামাজিক দুরত্ব। ৩ ফিট দুরত্বে বনের পশু চলতে পারবে। তবে বাঙালীর দুরত্ব বজায় রেখে চলা কঠিন হলেও না মেনে উপায় নেই। পুরো পৃথিবী আজ প্রকৃতির দখলে। যে প্রকৃতির টানে আকাশে-বাতাসে, ভূমিতে-পানিতে মানুষ দাপিয়ে বেড়াত সে মানুষগুলো এক অদৃশ্য জীবাণুর ভয়ে গুহামানবের মতো নিজ গৃহে লুকিয়ে আছে ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে।
করোনা একটি বিবর্তিত সমাজের হাতছানি দিচ্ছে। যে প্রকৃতি মানুষকে এতটা উজাড় করে দেয় ও দিয়েছে আজ সে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে! সেই প্রকৃতিকে এখন বিশ্রাম দিতে হবে। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আমরা শুধু তহবিল গঠন করি। আর এসব টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিশ্ব নেতারা। উন্নত দেশগুলো মানে না কিছুই। তারা শুধুই স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে কিছু প্রণোদনা দিয়েই খালাস। পৃথিবীর বৈশ্বিক উষ্ণতার সমাধানে কাজ করে না কেউই। আজ সময় এসেছে এই ভাবনাতেই নিহিত হওয়ার। করোনা বা কোভিড -১৯ ও সাম্প্রতিক দূর্যোগগুলো আমাদের সেই সংকেতই দিয়ে যাচ্ছে।
ভূমন্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি বা বিশ্ব উষ্ণায়ন Global Warming হলো জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বিশেষ ঘটনা। সাধারণত সময় বা কারণ-নিরপেক্ষ হলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ বলতে মূলত ইদানীং কালের উষ্ণতা বৃদ্ধিকেই নির্দেশ করা হয় এবং এটি মানুষের কার্যক্রমের প্রভাবে ঘটেছে। UNFCCC বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে মানুষের কারণে সৃষ্ট, আর জলবায়ুর বিভিন্নতাকে অন্য কারণে সৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তন বোঝাতে ব্যবহার করে। কিছু কিছু সংগঠন মানুষের কারণে পরিবর্তনসমূহকে মনুষ্যসৃষ্ট (anthropogenic) জলবায়ুর পরিবর্তন বলে।
১৯৫০-১৯৮০ সালের তুলনায়, ১৮৮০-২০১২ পর্যন্ত বিশ্বের জল-স্থল ভাগের গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুন।
Map of temperature changes across the worldkey to above map of
temperature changes মানচিত্রটি ১৯৫১-১৯৮০এর তুলনায় ২০০০-২০০৯ পর্যন্ত ১০
বছরে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নির্দেশ করছে। সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা
বৃদ্ধি পেয়েছে উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধে। উৎস:NASA Earth Observatory।
এজন্য করণীয় হচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা রোধে মানুষকে সচেতন হতে হবে। গাড়ি , কারখানার ধোঁয়া ইত্যাদির ব্যবহার কমাতে হবে। সিএফসি নির্গত হয় এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমাতে হবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উন্নত বিশ্বসহ সকলে এ বিষয়টিতে নজর দিলে প্রকৃতি আমাদের সাথে বিরূপ কিছু করবে না বলে বিশ্বাস করি।
কবি, লেখক ও গল্পকার।