হযরত জুনায়েদ ইরাকের বাগদাদ নগরীর অধিবাসী ছিলেন। তিনি ছিলেন পীরানে-পীর এবং মা’রিফাতের বাদশাহ তুল্য। তিনি যবরদ্স্ত আলেম ও মুফতী এবং ধর্মীয় বহু শাস্ত্রে পন্ডিত ছিলেন। অমিয় উক্তি এবং সূক্ষ্ম ঈঙ্গিতপূর্ণ বাণী করতে তাঁর সমতুল্য কেউ ছিল না। প্রথম হতে শেষ পযর্ন্ত তিনি সকলের নিকট সম্মানিত ছিলেন। তাঁর পূর্বাপর সকল অবস্থা সকলের নিকট আদরণীয় ও প্রশংসনীয় ছিল এবং তিনি দল-মত নির্বশেষে সকলের ইমামরূপে বরেণ্য ছিলেন। তাঁর বাণী তরিকত শাস্ত্রে দলীলরূপে পরিগণিত হয়ে থাকে। সকলের মুখেই তাঁর প্রশংসা শোনা যায়। কেহই তাঁর যাহেরী ও বাতেনী ইলমে দোষারোপ করতে পারেনি। তিনি সুফীদের সরদার ও নেতা ছিলেন। তাঁকে ‘লেসানুল কওম’ বা জাতির মুখপাত্র বলা হত। তিনি নিজেকে ‘আবদুল মাশায়েখ’ অর্থাৎ পীরদের খাদেম বলে নিজ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাঁকে ‘তাওসুল উলামা’ এবং ‘সুলতানুল মুহাক্কেকীন’ও বলা হতো। তিনি শরীয়ত, তরীকত ও হাকীকতের গভীর তলদেশে পৌঁছে ছিলেন। তিনি ‘ইশক’ (প্রেম) ও যোহদে (সাধনায়) অতুলনীয় ছিলেন। তিনি তরীকতের যুগ-প্রবর্তক ইমাম ছিলেন। বহু মাশায়েখ তাঁর মাযহাবের অন্তর্ভূক্ত হন। তরীকতে তাঁর মাযহাবই সবচেয়ে বড় এবং মশহুর (বিখ্যাত)। সে সময়ে তিনি সকল মাশায়েখের কেন্দ্রস্থল ছিলেন। তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন। মা’রিফাত তাঁর সাহায্যেই বিস্তৃতি লাভ করে, এটা বললে খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবে না। তাঁর এই উচ্চ মযার্দা ও অসীম গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও হিংসুটে দুশমনরা তাঁকে কাফের ও যিন্দিক বলতেও কুন্ঠিত হতো না। তিনি হযরত মুহাসেবীর (রহঃ)ও সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। তিনি হযরত সররী সকতীর (রহঃ) ভাগিনা ছিলেন। একবার হযরত সররী সকতী (রহঃ)-কে লোকে জিজ্ঞেস করেছিল, “কোনও মুরীদ কি পীরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে’’ ? হযরত সররী সকতী (রহঃ) বললেন, “হ্যাঁ, নিশ্চয় ! তার প্রকাশ্য প্রমাণ ত এটাই যে, জুনায়েদের পদ ও মযার্দা আমার চেয়ে অনেক উচ্চে”। ছেলেবেলা হতেই জুনায়েদ অত্যন্ত সাবধান, তীক্ষ্ম-বুদ্ধিমান এবং আল্লাহ্ প্রেমিক ছিলেন। একবার বাল্যকালে জুনায়েদ মাদ্রাসা হতে ঘরে ফিরছিলেন, পথে দেখলেন তাঁর পিতা কাঁদছেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে তাঁর পিতা বললেন, “আমি আজ কিছু যাকাতের মাল তোমার মামা সররীর কাছে পাছিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি তা গ্রহন করেন নি। আমি এজন্য কাঁদছি। কারণ আমি সারাজীবনে এই পাঁচ হাজার দিরহাম হালাল উপায়ে রোযগার করেছি। তবুও তোমার মামা এ হালাল দিরহামের পাঁচটি দিরহামকেও পছন্দ করলেন না এবং তা প্রত্যাখ্যান করলেন”। একথা শুনে জুনায়েদ বললেন, “আব্বা, এগুলো আমাকে দিন, আমি এখনই মামাকে দিয়ে আসব”। তারপর তিনি এই মুদ্রাগুলো নিয়ে মামা সররীর দরজায় উপস্থিত হলেন। দরজা বন্ধ দেখে শিকল ধরে টানলেন। হযরত সররী সকতী (রহঃ) জিজ্ঞেস করলেন, “কে ?” উত্তরে বললেন, “আমি জুনায়দ, দরজা খুলুন এবং এই যাকাতের দিরহামগুলি রেখে দিন”। হযরত সররী বললেন, “অামি এই যাকাতের মাল রাখব না”। জুনায়েদ বললেন, “সেই আল্লাহ্র কসম দিয়ে বলছি, যিনি আপনার প্রতি অনুগ্রহ এবং আমার আব্বার প্রতি ন্যায় বিচার করেছেন”। সররী (রহঃ) বললেন, “হে জোনায়েদ ! আমার ওপর কি অনুগ্রহ করা হয়েছে এবং তোমার আব্বার প্রতি কি ন্যায় বিচার করা হয়েছে” ? জুনায়েদ বললেন, “আল্লাহ্ আপনাকে দুনিয়াদারী থেকে মুক্ত করে আল্লাহ্র কাজে লিপ্ত রেখে পরকালের ধনে ধনী করে আপনার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আর আমার আব্বাকে দুনিয়ার ধনে ধনী করে দুনিয়ার কাজে লিপ্ত রেখেছেন, এটা তাঁর প্রতি ন্যায়বিচার। এখন আপনার ইচ্ছা হয় গ্রহন করুন অথবা ফিরিয়ে দিন। তবে উপযুক্ত পাত্রে যাকাত পাঠিয়ে দেয়া আমার আব্বার কর্তব্য”। হযরত সররী সকতী […]
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬
editor@apsnews24.com,
info@apsnews24.com
Developed By Feroj