মহান আল্লাহ অন্যান্য মাখলুকের মতো মানবজাতিকেও সৃষ্টি করেছেন। তাদের দেহেই তিনি রেখে দিয়েছেন বহু রহস্য। বলা যায়, মানুষের দেহও মহান আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। বিশেষ করে মানুষের আঙুলের অগ্রভাবে তিনি রেখে দিয়েছেন মহা রহস্য, যা নকল করা সম্ভব নয়। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি তার আঙুলের অগ্রভাগসমূহও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।’ (সুরা : কিয়ামাহ, আয়াত : ৪)
মহান আল্লাহ ওই আয়াতে ইঙ্গিত করেছেন, মানুষের আঙুলের অগ্রভাগে তিনি সূক্ষ্ম কোনো রহস্য রেখেছেন, যা তিনি মানুষের পুনরুত্থানের সময়ও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।
বর্তমান যুগে মানুষের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বায়োমেট্রিক সিস্টেমটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মোবাইলের লক, অফিস/বাসার দরজার লকেও বায়োমেট্রিক সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে অন্য কেউ গোপনে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতে না পারে। এবং বাসা ও অফিসে বহিরাগতরা প্রবেশ করতে না পারে। অফিসের ক্ষেত্রে কর্মচারীদের অফিস কামাই দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এই বায়োমেট্রিক সিস্টেম। ব্যাংকের টাকা উত্তোলন করতেও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে বায়োমেট্রিক সিস্টেম। সরকারি ভোটার আইডি কার্ড তৈরি ও সিম কিনতে গেলেও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাতের আঙুলের ছাপ দিয়ে কিনতে হয়।
কারণ মানুষের হাতের ছাপ অন্যের সঙ্গে মেলে না। ফলে এর মাধ্যমে মানুষের আইডেনটিটি যাচাই করা হয়। কেউ অপরাধ করলে এর মাধ্যমে অপরাধীও শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়া মানুষের আঙুলের ছাপ থেকে বিভিন্ন আণবিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার জীবনযাত্রা সম্পর্কে, তার বসবাসরত পরিবেশ সম্পর্কে, তার কাজ, খাওয়ার অভ্যাস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা থাকলে সেগুলোও জানতে পারা যায়।কোনো কিছুর ওপর মানুষের আঙুলের ছাপ পড়লে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খালি চোখে দেখা যায় না। সেটা দেখার জন্য অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের আশ্রয় নিতে হয়। প্রযুক্তির দ্রুত উৎকর্ষের যুগে এই কাজটি আরো নিখুঁত হয়ে গিয়েছে এবং আঙুলের ছাপ শনাক্তকরণের পাশাপাশি আরো তথ্য এই ছাপ থেকে এখন পাওয়া যাচ্ছে। আঙুলের ছাপ যাচাই করার মেশিনগুলো এতই উন্নত যে সেগুলো আঙুলে রক্ত চলাচল আছে কি না, তাও যাচাই করে। ফলে অত্যাধুনিক মেশিন দিয়ে কারো আঙুলের ছাপ নকল করলেও তা ব্যবহার করে অন্যের তথ্য হাতানো যায় না।
বর্তমান যুগে আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে মানুষ কী ধরনের ওষুধ ব্যবহার করছে অথবা সে কোনো ধরনের বিস্ফোরকের সংস্পর্শে আছে কি না, সেটাও নির্ণয় করা যায়। আঙুলের ছাপে পরীক্ষা চালিয়ে শরীরের অনেক রোগব্যাধিও শনাক্ত করা যায় বলে দাবি করেন কেউ কেউ।
১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডে স্যার ফ্রান্সিস গোল্ট আবিষ্কার করেন, পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যার আঙুলের ছাপ অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে হুবহু মিলে যাবে। প্রত্যেক মানুষকে শনাক্ত করার জন্য তার আঙুলের ছাপই যথেষ্ট। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন অপরাধী শনাক্ত হয়ে যায় হাতের এই আঙুলের ছাপের মাধ্যমেই। অনেকটা হাতের ছাপই বলে দেয়, অপরাধী কে হতে পারে।
মৌখিক কোনো বক্তব্য না দিয়ে শুধুমাত্র হাত থেকে তথ্য নেওয়ার ধারণাটি পবিত্র কোরআনেও এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব এবং তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে ও তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে, যা তারা অর্জন করত।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৬৫)
বর্তমান যুগেও কেউ কোনো বিস্ফোরকের সংস্পর্শে থাকলে, কোনো কিছু হাত দিয়ে চুরি করলে, কাউকে হত্যা করলে, এমনকি অফিসে দেরি করে এলে তার মৌখিক বক্তব্য না নিয়ে তার আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করেই তার অপরাধ শনাক্ত করা সম্ভব। কোরআনের এই আয়াতের কিছুটা ব্যাখ্যা আমরা দুনিয়ায়ই পেয়ে গেছি আলহামদুলিল্লাহ। আখিরাতে এর রূপ কতটা অত্যাধুনিক হবে, তা আল্লাহই ভালো জানেন
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা