তালহা জাহিদঃ রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। আর সেজন্য কর্মব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ির দিকে ছুটছেন ঘরমুখো হাজারো মানুষ। ঈদের আগের কর্মদিবস (বৃহস্পতিবার) শেষ করে যারা পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে যেতে পারেনি তারা শুক্রবার (৩১ জুলাই) ভোর থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল হয়ে নৌ পথে ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। এজন্য ভোর থেকে সদরঘাট টার্মিনালসহ পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়েছে।
এ অবস্থায় লঞ্চগুলোও সুযোগ বুঝে বাড়তি যাত্রীবোঝাই করে নির্দিষ্টি সময়ের আগেই ছেড়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সকালে সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের কর্মজীবী মানুষ রাজধানী ছাড়ায় টার্মিনালে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সব জায়গাতেই মানুষের ভিড়। তবে সরকারি নির্দেশনা মেনে মাস্ক ছাড়া কাউকে টার্মিনালে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে মাস্ক পরে প্রবেশ করে মাস্ক খুলে রাখছেন। এতে করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার বাড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, এ বছর ঈদ উদযাপনে সদরঘাট হয়ে ঘরে ফিরবেন প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। এজন্য দেশের ৪৩ রুটে যাত্রী পরিবহন করছে ২২০টি লঞ্চ। ভোর থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে ২২টি লঞ্চ। অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৫০টি, বাকিগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যাবে।
সদরঘাটে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নৌ-পুলিশের একাধিক দল নদীতে ও টার্মিনালে দায়িত্ব পালন করছেন। রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা। মাঝ নদী থেকে যাত্রীরা যেন লঞ্চে উঠতে না পারে সেজন্য নৌপুলিশ তৎপর রয়েছে।
এদিকে লঞ্চের কেবিনের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী। কর্ণফুলি লঞ্চের যাত্রী আবুল কাশেম বলেন, ঢাকা-ভোলা রুটে ডাবল কেবিন ভাড়া ২ হাজার টাকা। আমি সাড়ে ৩২০০ টাকায় কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করেছি। ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পারাবাত-১১ লঞ্চের যাত্রী সোহাগ বলেন, ঢাকা-বরিশাল রুটে ডাবল কেবিন ভাড়া ২ হাজার টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ১০০০ টাকা। আমি ৩৩৫০ টাকায় কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করেছি। ডেকের ভাড়া ২০০ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা।
পারাবত লঞ্চের মালিক শহীদ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, গত এক মাস তেলের খরচও তুলতে পারিনি। বৃহস্পতিবার থেকে কিছুটা চাপ বেড়েছে। অন্যান্য সময়ে ঈদে প্রতি ট্রিপে তৃতীয় শ্রেণিতে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার যাত্রী বহন করা হতো। সেখানে এখন প্রতি ট্রিপে সামাজিক দূরত্ব মেনে ৭০০ থেকে ৭৫০ যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। কারো কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
নৌ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের ঈদ উপলক্ষে এলাকাভিত্তিক লঞ্চ ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে- ঝালকাঠি মাদারীপুর-৪ নম্বর গ্যাংওয়ে, রায়েন্দা, গোমা, মুলাদি, ভাষানচর ৭ নম্বর গ্যাংওয়ে, সবুজবাগ, আমতলী, পয়সার হাট, বরগুনা ৮ নম্বর গ্যাংওয়ে, লালমোহন, বেতুয়া, কালাইয়া ৯ নম্বর গ্যাংওয়ে, হাতিয়া, মাস্টারহাট, দৌলতখাঁন ১০ নম্বর গ্যাংওয়ে, বোরহানউদ্দিন, পাতারহাট, ভোলা, ১১ নম্বর গ্যাংওয়ে, ভোলা লেতরা, ঘোষের হাট ১২ নম্বর গ্যাংওয়ে, রাঙ্গাবালী, টরকী ১৩ নম্বর গ্যাংওয়ে, সুরেশ্বর, ওয়াপদা, দুবলার চর বালাবাজারগামী লঞ্চ ১৩ নম্বর গ্যাংওয়ে, গ্রিন লাইন (ডে সার্ভিস), চাঁদপুরগামী লঞ্চ এবং বিআইডব্লিউটিসির রকেট স্টিমার লালকুঠি ঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। পটুয়াখালী ও গলাচিপার লঞ্চ থাকবে, ওয়াইজ ঘাট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে।
বরিশালের লঞ্চ থাকবে ও ছেড়ে যাবে ১, ২ ও ৩ নম্বর গ্যাংওয়ে থেকে, হুলারহাট-ভান্ডারিয়াগামী লঞ্চ ৫ ও ৬ নম্বর গ্যাংওয়ে থেকে ছেড়ে যাবে।
ঢাকা সদরঘাট নৌবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, মনিটরিং ক্যাম্প ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে স্থাপন করা হয়েছে। মানুষের চাপ সামাল দিতে ও পন্টুনে অতিরিক্ত যাত্রী যেন যেতে না পারে এজন্য টার্মিনালগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। টার্মিনাল এলাকায় জীবাণুনাশক টানেল এবং নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
লঞ্চে মাঝনদী থেকে যাত্রী উঠতে না পারে সেজন্য নৌপুলিশ টহল দিচ্ছে। কেউ অতিরিক্ত যাত্রী নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, লঞ্চে যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াত করছে কি না তা মনিটরিং করা হচ্ছে। লঞ্চে যাত্রী ভরে গেলে লঞ্চ ছেড়ে দেওযা হচ্ছে। এবার নতুন ভবনের ছাদে স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এ টাওয়ারের মাধ্যমে আশপাশের এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম হলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নৌযানে যাতে অতিরিক্ত যাত্রীবহন রোধ এবং মাস্টার-ড্রাইভার দিয়ে লঞ্চ পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।