দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কোরবানির পশুর জন্য ন্যূনতম খাবার জোগাড় করতে পারছেন না কৃষক ও খামারিরা।
বন্যায় খড়ের গাদা পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে, মাঠের আবাদি ঘাসও ডুবে গেছে। উঁচু জমিতে যে ঘাস ছিল অতি বৃষ্টির কারণে সেগুলোর গোড়া পচে গেছে। ফলে গো-খাদ্যের তীব্র সংকটে স্বাস্থ্যহানি ঘটছে কোরবানির পশুর। আর গরুর দাম কমে গেছে ২০-২৫ শতাংশ।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার উল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক হেলাল খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যারা কোরবানির জন্য সারা বছর গরু মোটাতাজা করেছেন, এখন ওই গরু তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরুকে ঠিকমতো খেতে দিতে পারছেন না, আবার দাম কমে যাওয়ায় বিক্রিও করতে পারছেন না।
কোরবানি সামনে রেখে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, গোবিন্দগঞ্জের চরাঞ্চলের মানুষ পশু পালন করেন। এ ছাড়া চরের মানুষের প্রধান সম্পদ গবাদি পশু। কোরবানির সময় অনেকেই গরু-ছাগল বিক্রি করে সংসারের চাকা সচল রাখেন। কেউ বা শোধ করেন ঋণ। কিন্তু এবারের দৃশ্যটা একেবারেই ভিন্ন। করোনার কারণে কোরবানি পশুর দাম অনেক কমে গেছে। তার ওপর বন্যা। এর ফলে গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে আছেন অনেক কৃষক। পশুকে খাদ্য দিতে পারছেন না তারা।
এবার বোরো মৌসুমে প্রতিদিন বৃষ্টির কারণে ধান গাছের অর্ধেক কাটতে হয়েছে। সেটাও অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টি কারণে বলা চলে বোরো ধানের খড় প্রায় সব নষ্ট হয়েছে। এখন বন্যার কারণে অনেকের ঘাসের জমি পানির নিচে। অনেক গৃহস্থ উঁচু জমিতে ঘাস করেছিল, সেখানে এখনো পানি ওঠেনি। কিন্তু প্রতিদিন বৃষ্টির কারণে ঘাসের গোড়া পচে গেছে।
কুড়িগ্রামের হলোখানা গ্রামের এক বাসিন্দা বাড়িতে বন্যার পানি ওঠার পর বাঁধের ওপর গরু রেখেছেন। ঘাস খাওয়াতে পারছেন না। ভূষির দাম বেড়ে যাওয়ায় তাও কিনতে পারছেন না। কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য যে গরু পালন করেছেন তার দাম অনেক কমে গেছে।
তিনটা গরু নিয়া বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন গাইবান্ধার ভাষার পাড়া গ্রামের মালেক মিয়া। তিনি বলেন, ‘কোনোমতে চালা তুলি আছি। গরুর খড় শেষ হয়া গেছে। নিজের খাবারই জোটে না, গরুক কি খাওয়ামো।’
নাটোরে বানভাসিরা রাস্তা, উঁচু স্থান ও বাঁধে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। চলনবিলের কৃষক আল রইসুল জানান, বাড়ির মধ্যে পানি শুকায়নি। গরুকে তো খাবার দিতে পারি না। এজন্যই রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি। বন্যার কারণে গরু শুকিয়ে গেছে।
বন্যায় গো-খাদ্যের সংকটে পড়েছেন কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বানভাসি মানুষ ও খামারিরা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ উঁচু বাঁধ ও রাস্তার ধারে নিরাপদ স্থানে গবাদিপশু সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু গবাদিপশুর একমাত্র খাদ্য খড় বন্যার পানিতে পচন ধরেছে, আবার কোথাও ভেসে গেছে।
কলমাকান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, উপজেলায় এখন পর্যন্ত গবাদিপশুর খাদ্য সরকারিভাবে বরাদ্দ নেই। আমরা ইতিমধ্যেই মেডিকেল টিম করে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গবাদিপশুর চিকিৎসা দিয়ে আসছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠিয়েছি।
ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/এমআর