পবিত্র রমজানের মাঝামাঝি সময়ে এসেও নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে হাহাকার কমছেনা। উপজেলা নির্বাচন, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধসহ নানা ছুঁতোই বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে দাম। তবে সবজির দাম নিয়ে সন্তোষ রয়েছে ভোক্তাদের।
শুক্রবার সকালে শ্যামলী নতুন কাঁচা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রমজান শুরুর দিকে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম থাকলেও ভারতের অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির খবর শুনেই দাম বাড়তে শুরু করে। চলতি সপ্তাহেই ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ফলে ৬০ থেকে ৬৫ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। অতিদ্রুত পেঁয়াজের দাম আবারও সেঞ্চুরি হাঁকাবে বলে শঙ্কা ভোক্তাদের।
এদিকে কাঁচা মরিচ কেজি প্রতি ১০০ টাকায়, রসুন (দেশি) ১৬০ টাকায় এবং শুকনা মরিচ ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শ্যামলী নতুন কাঁচা বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আহসান শেখ। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানা কেন যাচ্ছে না তাও অজানা তার। বাজারভেদে দামের পার্থক্য কেন হয় এবং এগুলো কেন নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না সে বিষয়েও প্রশ্ন তার।
আহসান শেখ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রমজানের শুরু থেকেই বাজার করছি। কিন্তু পেঁয়াজ-মরিচ যাই কিনি দাম শুনে কোনো শান্তি পাচ্ছি না। আশেপাশের বিহারি ক্যাম্পের মার্কেট এবং কৃষি মার্কেটে কিছুটা কম দামে বিক্রি হয়। এই মার্কেটের পাশেই বাসা। এখান থেকেই কেনা কাটা করি। কিন্তু এখানে সব কিছুই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। কেন হচ্ছে জানি না। কবে দাম কমবে জানি না।’
এদিকে মাংসের বাজারেও নেই কোনো সুখবর। রমজানের শুরুতে মুরগির মাংস কেজি প্রতি যত দামে বিক্রি হতো এর চেয়েও ১৫ থেকে ২০ দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম রমজানের মাঝামাঝি সময়ে এসে কেজি প্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়, সোনালি মুরগীর দামও ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়।
এছাড়াও গরুর মাংসের দাম কেজি প্রতি ৭৫০-৮০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানেই দামে স্বস্তি ফেরেনি।
মোছাম্মত সায়মা কলেজে পড়ান। শুক্রবারের ছুটির দিনে নিজেই বাজার করতে এসেছেন। সোনালি মুরগি কিনতে গিয়ে দাম শুনে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।
মোছাম্মত সায়মা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দাম একেক জায়গায় একেক রকম চায়। কিন্তু কোথাও কম দামে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। সোনালি মুরগির দাম রাখলো ৩২০ টাকা। ছোট চিংড়ির দাম হয়ে গেলো ৭০০ টাকা। অথচ গত কয়েকদিন আগেই ৬০০ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে গেলাম।’
আলুর দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। পাইকারি বাজার থেকেই কিনতে হচ্ছে কেজি প্রতি ৩৮ টাকায়। ফলে খুচরা বাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ ব্যবধানেই দাম বেড়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের মতো।
এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, ‘কৃষি বাজারের পাইকারি মার্কেট থেকেই আলু কেজি প্রতি ৩৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি পরিবহন ও শ্রমিক ভাড়াসহ নানা কারণে কিছটা লাভে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
এদিকে কেজি প্রতি খেসারির ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা মসুর (মোটা) ১২০, এবং উন্নত মানের মসুর ডাল ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেসন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
চিঁড়া (মোটা) কেজি প্রতি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকায়। কলা (সাগর) হালি প্রতি ৬০ টাকায় এবং প্রতি তরমুজ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। রোজার শুরু হওয়ার পর বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৭০ থেকে ৮৫ টাকায়। এখন দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে গিয়ে বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। টমেটো কেজি প্রতি বিক্রি হতো ৬০ টাকায় এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, ফুলকপি বিক্রি হতো ৬০ টাকায় এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
সবজি কেনার পর মো. আরমান নামে এক ক্রেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ী। রমজানের শুরুতে বাজার করতে এসেছিলাম। সে তুলনায় সবজির দাম এখন কিছুটা কম মনে হচ্ছে। এটা ভালো।’