মো: অারিফুল ইসলাম
করোনা প্রকোপে হাপিয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ব- প্রথম বিশ্ব, দ্বিতীয় বিশ্ব, তৃতীয় বিশ্ব সকলেই।
প্রসঙ্গত, প্রথম বিশ্ব বলতে অামরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র রাষ্ট্র সমূহকে বুঝি -যারা ন্যাটোভুক্ত। এরা সকল দিক থেকে-ই অন্যদের চেয়ে উন্নত। উন্নত স্বাস্থ্যব্যাবস্থা, উন্নত প্রযুক্তি, শিক্ষা-দীক্ষা, মেধা-মননে সর্ব ক্ষেত্রে উন্নত।
দ্বিতীয় বিশ্ব বলতে রাশিয়া এবং তার মিত্র রাষ্ট্র সমূহ -যারা ওয়ার’শ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। এরাও কোনোদিক থেকে কম নয়, প্রথমবিশ্বকে টেক্কা দিয়ে চলা-ই এদের কাজ। উভয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার সম্পর্ক।
অার তৃতীয় বিশ্ব হচ্ছে, উপর্যুক্ত দুই বিশ্বের তাঁবেদার রাষ্ট্র সমূহ। ক্ষমতার মেরুকরণে মোড়ল দুই বিশ্বের অাশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কোনোরকম বেঁচে থাকা-ই তাদের প্রধান কর্তব্য।
তবে, এ নীতিতে কিষ্কিন্ধ্যাকান্ড বাধিয়ে তুলেছে অদৃশ্য করোনা। বৈষম্যহীনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সকল বিশ্বে। উচু-নীচু শ্রেনীবিভাগ ভুলে সবার-ই লক্ষ্য এক; করোনা নিরোধ। সমান্তরাল রেখায় দাড়িয়েছে তিন বিশ্ব। ক্ষমতাশালীদের ক্ষমতার দূর্গে ফাটল ধরেছে।
তাঁবেদারি করতে হচ্ছে একমাত্র অদৃশ্য সত্ত্বার। মহামারীর তান্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ।
সুতরাং এই মহামারি রোধকল্পে সচেষ্ট অংশগ্রহণ করতে হবে সবার। জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। মানব সেবাই তাদের ব্রত।
‘I Pledge to consecrate my life to the service of humanity. I will not use my knowledge contrary to the laws of humanity. I will maintain the utmost respect of human life from the time of conception.’ এ প্রতিজ্ঞা করেই চিকিৎসা পেশায় অাত্ননিয়োগ করেছেন তারা।তবে, সকলে যে এ প্রতিজ্ঞা যথাযথভাবে রক্ষা করছেন সেটা বলা মুশকিল। এ মুহুর্তে একজন চিকিৎসক যে সাধারণ মানুষের কাছে দেবতা প্যনাসিয়া( যিনি সর্বরোগের সমাধান করেন) সেটা সন্দেহাতীতভাবে বলা যেতে পারে। এছাড়াও, শৃঙ্খলা রক্ষায় ঝুঁকি সত্ত্বেও কাজ করে চলেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছেন তরুণদের বৃহৎ একটি অংশ। তারা নির্ভীক। শ্বশ্রোদ্ধ অভিবাদন তাদের। তাদের ত্যাগের উপাখ্যান স্মরণ করে প্রায়শই অামরা ‘করোনাযোদ্ধা’ উপাধিতে ভূষিত করে থাকি। অবশ্যই তারা যোদ্ধা; সম্মুখ যুদ্ধ করছেন তারা।
এ যুদ্ধে হাল ধরতে হবে অামাদের শিক্ষিত-সচেতন যুবসমাজকে। বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে কমপক্ষে একজন করে হলেও শিক্ষিত-সচেতন যুবক রয়েছে। তাদেরকে পরিবারের অন্যসবার সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। ‘বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন’ নীতি মানতে হবে। তবে এ নীতি কেবল তাদের জন্য-ই প্রযোজ্য যাদের অাগামীদিনের খাবারের ব্যাপারে ভাবতে হয়না। জীবিকার জন্য পরিবারের অধিকাংশ উপার্জনক্ষম ব্যাক্তির-ই কর্মস্থলে যেতে হয় সুতরাং তাদের সুরক্ষার উপর জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে সুরক্ষার স্তরকে ধাপে ধাপে ভাগ করে নিন- যেমন, অাক্রান্তের পূর্বে করণীয়, অাক্রান্ত অবস্থায় করণীয়।
অাক্রান্তের পূর্বে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে যাতে অাক্রান্ত না হই। নিজের এবং নিজের পরিবারের সুরক্ষার ব্যাপারে একজন যুবক দায়িত্ব নিন। মনে করুন এই মহামারিকালীন সময়ে অাপনার পরিবারের সুরক্ষার গুরুদায়িত্ব অাপনার। এসময়ে নিজে মাস্ক পড়া এবং অন্যদের মাস্ক পড়তে বাধ্য করা, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে কাউন্সেলিং করা,হাতে এবং ঘরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জীবানুনাশক দেয়া ইত্যাদি বিষয়ে নজরদারি করতে হবে অাপনাকে-ই।
তবে,পরিবারের কোনো সদস্য অাক্রান্ত হয়ে পড়লে তাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে সাহস যোগানো, সাবধানতাবশত তার পরিচর্যা করা,পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা, অাক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে অাসলে অাক্রান্ত, অনাক্রান্ত উভয়ের মাস্ক পড়া এসব বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অাপনাকেই হতে হবে অাপনার পরিবারের প্রশাসক। অাপনাকেও যুদ্ধ করতে হবে অদৃশ্য করোনার বিরুদ্ধে। প্রতিজ্ঞা করতে হবে অাপনার পরিবারের সুরক্ষায় সর্বদা সজাগ থাকবেন অাপনি। তাহলে অাপনিও হবেন একজন করোনাযোদ্ধা। এ যুদ্ধ কেবল চিকিৎসক,প্রশাসক কিংবা রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের নয়। এ যুদ্ধ সবার,লড়তে হবে সবাইকে ।
মনে রাখতে হবে, করোনা অাক্রান্ত রোগীর ৮০ভাগেরও অধিক বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যান। শুধু দরকার সঠিক পরিচর্যা। অামি অাশাবাদী শক্ত মনোবল অার সঠিক পরিচর্যা পেলে এ হার অারো উন্নীত হবে। তবে,এর অবনতি ঘটলে বিপাকের অন্ত থাকবেনা অামাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের। যেখানে প্রথম বিশ্বের মজবুত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে-ই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে অদৃশ্য করোনা সেখানে অামাদের বঙ্গদেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর নির্ভর করা নিতান্তই বালখিল্যতা।
সুতরাং এই অদৃশ্য শত্রু রোধে একমাত্র সচেতনতা-ই হতে পারে মূখ্য হাতিয়ার। প্রত্যেকে নিজের পরিবারের সুরক্ষার ব্যপারে সজাগ থাকলে বেঁচে যাবে তাদের পরিবার। সবার পরিবার সুরক্ষিত থাকলে সুরক্ষিত থাকবে দেশ। এ যুদ্ধ অাপনার,অামার, সাবার। মনে রাখতে হবে,
‘এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি,নিতে হবে তরী পার’।
arifulkholifa528@gmail.com