বরিশাল ব্যুরোঃ দুই নারীর দায়ের করা ধর্ষণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভোলার আলোচিত সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীমকে ক্লোজড করা হয়েছে।
বিষয়টি রবিবার (১২ জুলাই) ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুম আলম ছিদ্দিক নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীম ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শালীহর গ্রামের আব্দুল কদ্দুসের পুত্র। তিনি ৩৬তম বিসিএস উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে ভোলা জেলায় সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছেন। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীমের বিরুদ্ধে দুইজন নারী ই-মেইল যোগে ভোলা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আরও দুইজন তাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করেন। তবে নাদির হোসেন শামীম গত ৫ জুলাই বিয়ে করেছেন অন্য এক নারীকে। বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার বড় ভাই কবীর হোসেন সুজন।
অভিযোগকারী এক ভুক্তভোগী জানান, প্রায় ৮মাস পূর্বে হবিগঞ্জের এনডিসি নাদির হোসেন শামীমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট শামীমের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সিলেটের একটি হোটেলে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ করে। এরপর থেকে বিয়ের কথা বললে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছে। পারিবারিকভাবে বিয়ের বিষয়টি মেনে নেওয়ার জন্য তিনি নাদির হোসেন শামীমের ময়মনসিংহের গৌরীপুরস্থ বাসায় যান। সেখানে শামীমের পরিবারের লোকজন তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। মোবাইলে থাকা প্রমাণগুলো ডিলিট করে দেয়। ভুক্তভোগী সিলেটের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষিকা। অপরদিকে গৌরীপুরের আরেক মেয়ে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
তিনি জানান, ২০০৭ সালে শামীম গৌরীপুর সরকারি কলেজ হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করাকালীন তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি তখন ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। বর্তমানে বাংলা বিষয়ে অনার্স করছেন। মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট তার সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করে। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট শামীমের বিয়ের খবরে চট্টগ্রামের আরেক নারীও শামীমের স্ত্রী দাবি করেন। ওই নারী জানান, তার সঙ্গে মুনশী দিয়ে ধর্মীয় শরিয়া মোতাবেক বিয়ে করে আড়াই বছর ঘরসংসারও করেছেন। ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন সময়ে তার সঙ্গে এ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি এ অভিযোগটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও থানা প্রশাসনকেও অবহিত করেছেন। গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীমের বিয়ের খবরে এক মেয়ে তার বাবার ভাড়া বাড়িতে অবস্থান নেয়। জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌর কাউন্সিলার মাসুদ মিয়া রতন ও দিলুয়ারা আক্তারকে পাঠানো হয়। এখন আরও দুই মেয়ের সঙ্গে নাদির হোসেন শামীম সাহেবের অনৈতিক সম্পর্কের কথা জানা গেছে। তারাও মৌখিক অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় আমরা বিব্রত। নারী কাউন্সিলর দিলুয়ারা আক্তার জানান, মেয়েদের ঘটনা শোনে আমি বিস্মৃত।
কাউন্সিলর মাসুদ মিয়া রতন বলেন, ‘একজন ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে নারীদের এতো অভিযোগ শোনে আমরাও লজ্জিত।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি আরেক নারী বিয়ের দাবিতে নাদির হোসেন শামীমের বাবার রেলওয়ে স্টেশন এলাকার ভাড়া বাসায় অবস্থান নেয়। ওই নারী অযৌক্তিক দাবি নিয়ে পরিবারকে নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ এনে শামীমের বাবা উল্টো ওই নারীর বিরুদ্ধে গৌরীপুর থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। এ নারীর বান্ধবী ঘটনার সাক্ষী দেওয়া এবং তার বান্ধবীকে বিয়ে করার জন্য শামীমের পরিবারে অনুরোধ জানান। এই অনুরোধের ঘটনাকে ‘ভয়ভীতি প্রদর্শন’ উল্লেখ শামীমের ভাই কবীর হোসেন সুজন ২৩ ফেব্রুয়ারি আরেকটি সাধারণ ডায়রি করেন। সাধারণ ডায়রি প্রসঙ্গে গৌরীপুর থানার সাবইন্সপেক্টর মো. এমদাদুল হক জানান, সাধারণ ডায়রি করা হলেও অভিযোগকারীদের অনুরোধে তদন্তকাজ বন্ধ রাখা হয়।
ঘটনা প্রসঙ্গে গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বোরহান উদ্দিন জানান, গৌরীপুর উত্তর বাজার এলাকায় বিয়ের দাবিতে এক নারী অবস্থান নিয়েছে খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও ভোলার জেলা প্রশাসক স্যারকে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের বিচারের আশ্বাস ও মেয়েটিকে ঘটনা এলাকায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, রবিবার আরেকটি মেয়ে লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসে। তাকে জেলা প্রশাসক ময়মনসিংহের নিকট পাঠানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নাদির হোসেন শামীমের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মোবাইল ও সরকারি ওয়েবেসাইটে দেওয়া মোবাইল নাম্বারে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।