জালিস হোসেন তন্ময়,তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি: দেশে চলছে করোনা মহামারী। তাই দীর্ঘদিন গনপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। এমনকি লকডাউনের কারণে মানুষের চলাচলও ছিলো নিয়ন্ত্রিত। তবুও থেমে নেই সড়ক দুর্ঘটনা।
করোনা মহামারীর এ সময়েও গত জুন মাসেই ৩৯৫ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে ৪১৭ জনের। দুর্ঘটনার অধিকাংশই ঘটেছে সড়ক ও মহাসড়কে। এসময়ে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৫৮টি দুর্ঘটনায় ৩৬৮ জন নিহত ও ৫১৮ জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ২০ টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১৭টি দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহত ও ৬০ জন আহত এবং ১০ জন নিখোঁজ সংবাদ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে রোববার (১২ জুলাই) সংগঠনটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দুর্ঘটনায় এইমাসে সড়কে দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১৬২ জন চালক, ১২৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ১১৩ জন পথচারী, ৬২ জন নারী, ৫৭ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ২১ জন বিজিবি, ১৮ জন আনসার, ১৩ জন পুলিশ ও ৫জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ২৮ জন শিশু, ২৩ জন শিক্ষার্থী, ১১ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৭ জন শিক্ষক, ১ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছে ১১৬ জন চালক, ৯৮ জন পথচারী, ৪৯ জন নারী, ৪৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ২১ জন শিশু, ১৯ জন শিক্ষার্থী, ৮ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৭ জন শিক্ষক ও ১ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১ জন প্রকৌশলী, ৫ জন পুলিশ ও ২ জন বিজিবি সদস্য। এইমাসে সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৩৪.৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২৪.১৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১২.১ শতাংশ বাস, ৯.২৪ শতাংশ নছিমন-করিমন, ৮.১১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭.১৫ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৪.৩৪ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ৮ জুন এইদিনে ২২ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ২৫ জন আহত হয়। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ১০ জুন ৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ১৪ জন আহত হয়। মোট দুর্ঘটনার ৫১.১২ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৪.৫৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.০৮ শতাংশ খাদে পড়ে, ৭.৫৪ শতাংশ বিবিধ কারনে, ১.১২ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ এবং ০.৫৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পরিসংখ্যানে দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে এইমাসে মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৪৮.৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩১.৫৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৩.৯৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২.৭৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৯৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১.১২ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়। মে মাসের তুলনায় বিগত জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ৫৬.১৪ শতাংশ, নিহত ৫৭.৩৪ শতাংশ ও আহতের হার ৪৩.৮২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, সড়ক নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতার অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। সরকারের আন্তরিকতা ও বিগত নির্বাচনে রাজনৈতিক অঙ্গিকার থাকলেও বর্তমান সরকারের দুটি বাজেটে তার কোন প্রতিফলন ঘটেনি। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পদ্ধতি ঢেলে সাজানো ব্যাতি রেখে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।