জালিস হোসেন তন্ময়,তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি: ভিয়েতনামে দালাল চক্র দ্বারা প্রতারিত ২৭ প্রবাসীর মানবেতর জীবন যাপন নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়া বেশ উত্তপ্ত।এরই মধ্যে বাংলাদেশে ভিয়েতনামের দালাল চক্রের মূল হোতা সহ ৩ জনকে আটক করেছে র্র্যাব৷
এইদিকে গত ৬ই জুলাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এ কে আব্দুল মোমেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এক বিবৃতিতে জানান যে, ভিয়েতনাম দূতাবাস থেকে তিনি জানতে পেরেছেন যে দালাল চক্র ধারা প্রতারিত ২৭ প্রবাসী ভিয়েতনামের বাংলাদেশ দূর্তাবাস দখলের চেষ্টা করে। এবং পরবর্তীতে দূর্তাবাস থেকে তাদেরকে এইটি হোটেলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে প্রতারিত এই সকল প্রবাসীরা সেখানে কোন বৈধ ভিসায় যায় নাই। অন্যদিকে এপিএস নিউজ২৪ কে আটকে পড়া প্রবাসীরা জানায় যে, তাদের কাছে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের ক্লিয়ারেন্স সহ বৈধতার কাজগপত্র সব কিছু থাকার পরেও তারা কেন অবৈধ হবে, আর তারা অবৈধ হলে এর দায়ভার কার? তারা আরো জানায়, আমরা মানবিক সাহায্যের জন্য দূতাবাসে গেছি, সেখানে দূতাবাস দখলের চেষ্টা বা কোন হাঙ্গামা করা হয়নি। ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ দূতাবাস থেকে কোন প্রকার সহায়তা না করে আমাদেরক বের করে দেওয়া হয়েছিল তখন আমরা খোলা রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলাম তখন ভিয়েতনাম পুলিশ মানবিক কারনে আমাদেরকে হোটেলে এনে রেখেছে।এক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাস আজ পর্যন্ত আমাদের কোন প্রকার সহায়তা করেনি।
গত ৬ই জুলাই পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ২ রা জুলাইয়ের ফ্লাইট সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানায় যে, ২ তারিখের যে ফ্লাইট ভিয়েতনাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে সেই ফ্লাইট ধরার জন্য বাংলাদেশ এম্বাসী আমাদের কাছে জন প্রতি ৬০ হাজার করে টাকা চেয়েছিল কিন্তু আমাদের কাছে টাকা না থাকার কারনে সেই ফ্লাইটে আমরা যেতে পারবো না বলে জুন মাসের শুরুর দিকে আমরা দূতাবাসকে অবহিত করেছিলাম। মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথামতে ভিপি নুর সম্পর্কে তাদের প্রশ্ন করা হলে তারা জানায় “আমাদের সাথে কোনদিন কখনোই ভিপি নুরের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ বা কথা হয় নি।” এমনি কি দূতাবাসে যাওয়ার পূর্বে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ এর সাথেও আমাদের কোন যোগাযোগ ছিল না। যখন দূতাবাসের সাহায্য চাওয়ার পর আমরা সাহায্য পায়নি তখন ভিয়েতনাম পুলিশ আমাদেরকে একটা হোটেলে নিয়ে রাখেন। এরপর জীবন বাঁচানোর জন্য আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনার জন্য ‘বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ’ নামক একটি ফেসবুক পেইজে লাইভে এসে সবার কাছে মানবিক সহযোগিতা চাওয়ার জন্য অনুরোধ করি৷তার ই পরিপ্রেক্ষিতে তারা মানবিক সহায়তা করার জন্য ফেসবুকে লাইভ করার ব্যবস্থা করেন ও আমাদের খাবারের জন্য কিছু আর্থিক সহায়তাও করেন। এবং এখনো তারা আমাদের মানবিক সহায়তা করে যাচ্ছেন। তারা আরো বলেন যে,মানবিক সাহায্যের জন্য তারা দরখাস্ত নিয়ে দূতাবাসে গিয়েছে কিন্তু তাদেরকে কোন সহায়তা না করে বের করে দেওয়া হয়েছে। বাহিরের দেশে বিপদে পড়লে নিজ দেশের দূতাবাসের সাহায্য চাওয়া অপরাধ কিনা বলে তারা প্রশ্ন রাখে। আমরা বারবার বলেছি এই দেশের পুলিশ আমাদেরকে মানবিক কারনে হোটেলে এনে রেখেছে ও খাবারে সহায়তা করছে। এইক্ষেত্রে দূতাবাসের কোন ভূমিকা নেই, জানিনা কেন আমাদের সাথে সবাই এমন বিরূপ আচরন করছে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা দূতাবাস কর্মকর্তা জনাব আলী রেজা সাহেবকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে বলে “তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে আমাদের জন্য ওনারা কাজ করতেছেন এবং দালালের কাছ থেকে পাসপোর্ট উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। যদিও আমরা এখানে খুব কষ্টে আছি তবুও বাংলাদেশ সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অশেষ ধন্যবাদ আমাদেরকে দেশের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ করার জন্য। আমরা শুধু এই অনিশ্চিত জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাই, নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যেতে চাই। আপনাদের ও দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই যাতে আমরা নিশ্চিন্তে দেশের মাটিতে ফিরে যেতে পারি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী বাংলাদেশ র্র্যাব অভিযান চালিয়ে ভিয়েতনামে মানবপাচারকারী মূল হোতা সহ ৩ জনকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে গ্রেফতার করেছে এবং তাদের কাছ থেকে ২৫৪ টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে ।