সোহাগ মাহমুদ খান, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: পৃথিবীর প্রথম ইউটিউব গ্রাম, তাও আবার বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায়। জেলার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামটি এরইমধ্যে আলোচিত সংবাদ হয়ে উঠেছে।
এ গ্রামের লিটন আলী খানসহ আরো ২৫-৩০ জন মিলে একটা ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করেন স্থানীয় দেলোয়ার মাস্টারের নেতৃত্বে। চ্যানেলটির নাম ‘এরাউন্ডমি বিডি’। গ্রামীণ জীবন, মূলত রান্না-বান্নাকে তারা তুলে ধরছেন বিশ্ব দরবারে। শত শত মানুষের জন্য রান্না করা হয়, আর এ রান্নার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শৈল্পিকভাবে তুলে ধরা হয় ভিডিওতে।
এখানে নেই কোনো উপস্থাপনা, নেই কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। গ্রামের মানুষের সহজাত কথা বার্তাগুলোই স্বাভাবিক সাউন্ডসহ হুবহু তুলে ধরা হয়।
পৃথিবী বিখ্যাত একজন ফুডরিভিওয়ার আছেন, সানি। তার চ্যানেলের নাম, ‘বেস্ট এভার ফুড রিভিও শো’। বছর খানেক আগে তিনি ইউটিউবে খুঁজে পান এ এরাউন্ড মি বিডিকে। সুদূর আমেরিকা থেকে তিনি আসেন বাংলাদেশে তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। সানি’র আগমন উপলক্ষে মহিষ জবাই করে ৪ হাজার মানুষ খাওয়ানো হয়। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের বিখ্যাত ফুড রিভিওয়ার আদনান ফারুক (টেলিভিশন নাটকের নায়ক হিল্লোল) ও আরেক বিখ্যাত ফুডরিভিওয়ার রাফসান দ্যা ছোটভাই।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জানান, বিষয়টি তার জানা নেই, ইউটিউব বিষয়ে তার ধারণা নেই।
শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। লিটন থাকেন ঢাকায়, আর দেলোয়ার মাস্টার শিমুলিয়ার ডাঙ্গি পাড়া প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। প্রতি মাসে লিটন গ্রামে এসে সবাই মিলে রান্না-বান্নার আয়োজন করে থাকেন। লিটনের সঙ্গে বিভিন্ন জেলার মানুষও আসেন। প্রতি মাসে রান্না করে তা ভিডিও করা হয় এবং গ্রামের মানুষদের খাওয়ানো হয়। মূলত এর মাধ্যমে গ্রামীণ জীবন তুলে ধরা হচ্ছে। বিষয়টা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য গর্বের।
এ বিষয়ে ‘এরাউন্ডমি বিডি’ চ্যানেলটির এ্যাডমিন লিটন আলী খান জানান, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তারা কাজ শুরু করেন। তার একটি সফটওয়্যার ফার্মও রয়েছে। মূলত গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করাই মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে ২৩ লাখেরও বেশি এরাউন্ড মি বিডি’র সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। মূলত গ্রাম্য ধারায় রান্না করা হয়। রান্নার পর মানুষকে বিনা খরচে খাওয়ানো হয়। সহজ, সরল গ্রামীণ জীবনে আনন্দ দিতে গেলে নিজেদের চেষ্টায় যতটা করা সম্ভব, সবই করা হচ্ছে এ ইউটিউব চ্যানেলে।
এ ব্যাপারে ‘এরাউন্ডমি বিডি’ চ্যানেলটির পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন, আমি ঢাকায় ভাগ্নে লিটন এর ফার্মে যাই। সেখান থেকে ভাগ্নেসহ আমরা পরিকল্পনা করি এ বিষয়ে। একদিন মাছ ধরার ভিডিও আপলোড করি। সেখান থেকে শুরু। এর পর রান্নাসহ গ্রামের বিভিন্ন দৃশ্য তুলে ধরা হয়। মূলত গ্রামের মানুষের খুশির জন্যই এটি করা। বর্তমানে ৩০ জন কর্মচারী এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। ভবিষ্যতে এটি আরো বৃহৎ আকারে করতে চাই।