এক মাস পরই কোরবানির ঈদ। এ বছর করোনাভাইরাসের মধ্যে হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কিনবেন কিনা তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় রয়েছেন। আবার করোনার কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে কোরবানির সংখ্যা কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য অনলাইন মার্কেট প্লেস ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বলে আশা করছেন অনলাইন মার্কেট প্লেসগুলো। তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
গত কয়েক বছর ধরে অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনা হচ্ছে। বেঙ্গলমিট, বিক্রয় ডটকম, এখনি ডটকম, এখানেই ডটকম, দারাজ, আজকের ডিল, প্রিয়শপ ডটকম, আমেরিকান ডেইরি, দেশি মিট, আমার দেশ আমার গ্রামসহ বিভিন্ন ফেসবুক পেজ অনলাইনে গরু, ছাগল, উটসহ কোরবানির পশু বেচাকেনা করেছে। এ বছরও এসব প্রতিষ্ঠান কোরবানির পশু বিক্রি করবে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে আগামী কোরবানির জন্য অনলাইনে পশু কেনাবেচার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে কেউ কেউ। তবে সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, তারা মনে করছেন এ বছর কোরবানিতে পশুর চাহিদা কম থাকবে। সে অনুযায়ী তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বেঙ্গলমিট গত ছয় বছর ধরে অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনা করে আসছে। গত বছর দেড় হাজারের বেশি কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ বছর বেঙ্গলমিট সরাসরি গরু বিক্রি করবে না। ক্রেতা অনলাইনে গরু দেখে কিনতে পারবেন। ওই গরু বেঙ্গলমিট প্রক্রিয়া করে ক্রেতার বাসায় প্যাকেট করে পৌঁছে দেবে। ঝামেলা ও খরচ বেশি হলেও করোনাভাইরাসের কারণে এই ‘ফুল প্রসেস সার্ভিস’ দেবে বেঙ্গলমিট।
প্রতিষ্ঠানটির হেড অব রিটেইল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান বলেন, এবার কোরবানিতেও অনলাইনে বেচাকেনা করা হবে। তবে ক্রেতাকে গরু সরবরাহ করা হবে না। মাংস প্রক্রিয়াজাত করে সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে কোন কোন গরু বিক্রি করা হবে, সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে ক্রেতারা বেঙ্গলমিটের ওয়েবসাইটে গরু দেখতে এবং কিনতে পারবেন। ক্রেতারা বেঙ্গলমিটের অনলাইনে গরু পছন্দ করার পর ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে মূল্যে পরিশোধ করে তা নিশ্চিত করতে পারবেন। এ ছাড়া ঢাকার ২৯টি আউটলেটেও এ মূল্য পরিশোধ করা যাবে।
একই রকম প্রস্তুতি নিচ্ছে আরও কয়েকটি বড় অনলাইন মার্কেট প্লেস। তবে পরিকল্পনা চূড়ান্ত না হওয়ায় তারা এখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে চাননি। এদিকে কোরবানি উপলক্ষে গ্রাম পর্যায়ে যারা গরু পোষেন তারাও এ বছর অনলাইনে বেচাকেনা করার কথা ভাবছেন। বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার একজন ব্যবসায়ী নাজমুল হাসান। তিনি কোরবানিতে বিক্রির জন্য দুটি গরু পুষেছেন। নাজমুল বলেন, অন্যান্য বছর বরিশাল ও ঢাকায় গরু নিয়ে গেছি বিক্রির জন্য। এ বছর সে রকম পরিকল্পনা নেই। বাড়ির কাছের হাট এবং অনলাইনে বিক্রির চেষ্টা করবেন তিনি।
অনলাইন হাট পরিচালনায় যুক্ত উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছরই অনলাইনে পশু কেনাকাটা বাড়ছে। তবে বিক্রি হওয়া পশুর সংখ্যা এবং দাম সম্পর্কে কারও কাছেই সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। অনলাইনে বিভিন্ন জাত ও আকারের পশুর ছবি, ভিডিও থাকে। দেওয়া থাকে দাম আর সম্ভাব্য ওজন। ক্রেতারা সরাসরি ভিডিও কলের মাধ্যমে পশু পছন্দ করতে পারেন।
গত বছর ৪০ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের গরু পাওয়া গেছে অনলাইনে। দেশি-বিদেশি জাতের গরু পাওয়া যায়। পাওয়া যায় বিভিন্ন জাতের ছাগল ও উট।
তবে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করেন আব্দুস সোবহান। তিনি গত বছর অনলাইনে একটি গরু কিনেছিলেন। সোবহান বলেন, অনলাইনে পশু কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রথম কাজ হবে পশুটি ভালোভাবে দেখা। এ জন্য বিক্রেতার কাছ থেকে বিভিন্ন কোণের যত বেশি সম্ভব ছবি চেয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে ভিডিও কল করা যেতে পারে। যদি কোনো বিক্রেতা তার গরু ভালোভাবে দেখাতে ব্যর্থ হন, তাহলে তা না কেনাই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয়, অনলাইনে পছন্দের পশু বাছাইয়ের পর সশরীরে গিয়ে যাচাই করে দেখা। এদিকে প্রক্রিয়া করা মাংস নেওয়ার বিষয়ে আব্দুস সোবহান বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। যে বা যারা গরু জবাই করে মাংস প্রক্রিয়া করে দেবে, তাদের শারীরিক অবস্থা নিশ্চিত করবে কে? আবার গরুটি যে বাড়িতে পোষা হচ্ছে তাদের কী অবস্থা- সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১ আগস্ট মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে বাংলাদেশে। সারাবছর দেশে যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার বড় অংশ এই কোরবানির ঈদের সময় হয়। ইতোমধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে কোরবানির ২৪টি পশুর হাট বসানোর তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশে পশুর হাট বসানোর কথা বলেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তবে করোনাভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে বলে জনসমাগমে তা ছড়ানোর ঝুঁকিও বেশি; ফলে হাটের মতো স্থানে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকে নিতে চাইবেন না। যেহেতু এ সময়ে মানুষের অনলাইনে নিত্যপণ্য কেনা অনেক বেড়েছে, তাতে ধারণা করা যায় কোরবানির পশুও অনেকে এবার সেভাবেই কিনতে চাইবেন।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট নিয়ে বড় ‘ক্যাম্পেইন’ চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে কোরবানির পশু সরবরাহ করা যায় তা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।