সব
facebook apsnews24.com
চীনের প্রতিবেশী দেশ হয়েও তাইওয়ান যেভাবে করোনাভাইরাস ঠেকাল - APSNews24.Com

চীনের প্রতিবেশী দেশ হয়েও তাইওয়ান যেভাবে করোনাভাইরাস ঠেকাল

চীনের প্রতিবেশী দেশ হয়েও তাইওয়ান যেভাবে করোনাভাইরাস  ঠেকাল

এপিএস নিউজ ডেস্ক

করোনাভাইরাস মহামারিতে পুরো বিশ্ব যখন লড়াই করছে, তখন এর বিরুদ্ধে সফল হওয়ার দৃষ্টান্ত দেখাল তাইওয়ান। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের খুব কাছাকাছি তাইওয়ানের অবস্থান হলেও এখন পর্যন্ত সেখানে মাত্র ৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন মাত্র একজন।

সেখানে জীবনযাত্রা একেবারেই স্বাভাবিক। শুধু গণপরিবহনে চলাচলের সময় লোকজনকে মাস্ক পরতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এই কৌতুহল এখন সর্বত্র যে যেখানে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে কী জাদুবলে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলল তাইওয়ান?

এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে—অতীত থেকে তাইওয়ানের নেওয়া শিক্ষা। ২০০৩ সালে তাইওয়ানের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের পরিচালক সু ইহ-জেনকে সার্সের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল। ওই সময় দেশটিতে সার্স ভাইরাস মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে যে ভয় ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও তাইওয়ানে নেই। চীনের খুব কাছে থাকায় ২ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দেশ তাইওয়ানকে ‘দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ অঞ্চল হিসেবে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। এখানকার সাড়ে আট লাখ মানুষ চীনের মূল ভূখণ্ডে কাজ করেন। একেবারে চীনা নববর্ষের সময় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা তাইওয়ান বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

শুধুমাত্র গণপরিবহনে চলাচলের সময় তাইওয়ানের মানুষ মাস্ক পরছে। ছবি: রয়টার্স

অধ্যাপক সু বলেন, ‘২০০৩ সালের শুরুতে তাইওয়ানে কয়েক সপ্তাহে সার্স যেভাবে ছড়িয়েছিল, তার মতোই পরিস্থিতই এখন অনেক দেশে। তারা প্রস্তুত নয়, তাদের অভিজ্ঞতাও নেই।’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালের ওই সার্স মহামারির পর অধ্যাপক সু তাইওয়ানের পুরো পাবলিক হেলথ সিস্টেম পরিবর্তন করে ফেলেন।

বাকি বিশ্বের জন্য ভালো খবর হচ্ছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে সাড়া দেওয়ার জন্য তাইওয়ান গত তিন মাসে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা অনুসরণ করা। তাইওয়ান রোগের বিস্তারের গতি ও এর প্রভাব কমাতে সক্ষম হয়েছে।

যেভাবে তাইওয়ান সফল হলো

প্রাথমিক স্তরের ভ্রমণের বিধিনিষেধ, আগ্রাসী পরীক্ষা, করোনাভাইরাস রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং কঠোর কোয়ারেন্টিন বা পৃথক্‌করণ বিধিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, জনস্বাস্থ্যের প্রতিক্রিয়ার জন্য পরিষ্কার ব্যবস্থাপনার কাঠামো এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করতে সক্রিয় যোগাযোগও সাহায্য করতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে যদিও চীন থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তবু স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তাইওয়ান মহামারি মোকাবিলায় পশ্চিমাসহ সব আক্রান্ত দেশের জন্য আরও ভালো মডেল হতে পারে।

সংক্রামক রোগের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ এবং সেন্ট্রাল এপিডেমিক কমান্ড সেন্টারে বিশেষজ্ঞের পরামর্শদাতা প্যানেলের আহ্বায়ক চ্যাং শান-চয়েন বলেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া সাফল্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ স্বচ্ছতা। চীনের মতো স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় প্রতি নাগরিককে বাড়িতে থাকতে বললে তারা তা পালন করবে। কিন্তু মুক্ত ও গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় তা সহজে অর্জন করা যায় না।’

করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের খুব কাছাকাছি তাইওয়ানের অবস্থান হলেও এখন পর্যন্ত সেখানে মাত্র ৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন মাত্র একজন। ছবি: রয়টার্স

সুনির্দিষ্ট কৌশল

স্ট্যানফোর্ড হেলথ পলিসির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সার্স ভাইরাসের সময় গৃহীত সুনির্দিষ্ট কৌশল ও পরিকল্পনামাফিক শুরুতেই গৃহীত ব্যবস্থাকেই তাইওয়ানের সফলতার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া যায়। সার্স আক্রমণের পর তাইওয়ানের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল হেলথ কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়। এর একটি বিশেষ শাখাকে বড় ধরনের মহামারির সময় কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে তার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটি সরাসরি, স্বচ্ছ যোগাযোগের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমান্ড পোস্ট হিসেবে কাজ করে। এটি করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা ও কোয়ারেন্টিনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। তাইওয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সেন্টার এপিডেমিক কমান্ড সেন্টার (সিইসিসি) সক্রিয় করে গত ২০ জানুয়ারিতে। এতে ইতিমধ্যে বিদ্যমান নীতি ও কৌশল কার্যকর করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। গত দুই মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নেতৃত্বে দ্রুততার সঙ্গে সিইসিসি ১২৪টি কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এ কার্যক্রমগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম একাধিক সংস্থার সহযোগিতায় সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে ছিল আকাশপথ ও সমুদ্রপথে সীমানা নিয়ন্ত্রণ, করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণ, সন্দেহভাজন রোগীকে কোয়ারেন্টিন করা, বরাদ্দ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, দৈনিক সংবাদ ব্রিফিং, ভুয়া তথ্য শনাক্তকরণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা ও পরিবারের জন্য অর্থনীতি নীতিমালা ঠিক করা।

বিগ ডেটা ও প্রযুক্তি

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় বিগ ডেটা এবং প্রযুক্তি সংযুক্ত করে তাইওয়ান সরকারের পক্ষে প্রচুর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে। এক দিনেই তাইওয়ান সরকার ন্যাশনাল হেলথ ইনস্যুরেন্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন এজেন্সির কাছ থেকে যাত্রীদের ১৪ দিনের ভ্রমণের তথ্য বের করে। এখান থেকে রোগী শনাক্ত করার কাজ করে। এ ছাড়া নাগরিকদের বাড়ির নিবন্ধন পদ্ধতি ও বিদেশিদের আগমনসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ রোগী শনাক্ত করে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের শনাক্তের পর কোয়ারেন্টিন ও তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থাও করে তাইওয়ান সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নির্ধারণ করা এবং বাজারে মাস্কের সরবরাহের বিষয়টিও লাইভ ম্যাপের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।

অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে শুরুতেই যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে তাইওয়ানে সংক্রমণের হার কম। ছবি: রয়টার্স

তথ্য দেওয়ায় স্বচ্ছতা

দৈনিক সংবাদ ব্রিফিং ছাড়াও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা নিয়মিত সম্ভাব্য সব অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে ভ্রমণ, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুপারিশসহ নানা ঝুঁকি সম্পর্কে জনগণের সামনে ঘোষণা নিয়ে হাজির হন। পাবলিক ও প্রাইভেট খাত থেকেও সরকারকে নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। কার্যত, প্রতিটি দোকান, রেস্তোরাঁ অফিস ভবনে ঢোকার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করা হয়। এর বাইরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সম্পদ বরাদ্দ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতেই সরকারের পক্ষ থেকে রপ্তানি বন্ধ করে উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়। তহবিল বরাদ্দের পাশাপাশি সেনাসদস্যদের উৎপাদন কাজে জোর দিতে বলা হয়। জানুয়ারি মাসের মধ্যেই তাইওয়ান ৪ কোটি ৪০ লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক, ১৯ লাখ এন ৯৫ মাস্ক মজুত করে। এ ছাড়া আইসোলেশন রুমও ঠিক করে রাখা হয়।

শিক্ষা ও প্রস্তুতি

ইতালি, ইরান, ফ্রান্স, স্পেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো তাদের বিলম্বিত প্রতিক্রিয়ার জন্য সমালোচিত হচ্ছে। অনেক দেশ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু তাইওয়ান সে ভুল করেনি। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে শুরুতেই যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে তাইওয়ানে সংক্রমণের হার কম।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো অনলাইন

আপনার মতামত লিখুন :

বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা

বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা

থানচিতে পুলিশ সন্ত্রাসী গোলাগুলি, থমথমে পরিস্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি

থানচিতে পুলিশ সন্ত্রাসী গোলাগুলি, থমথমে পরিস্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি

ফের বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম, স্বস্তি নেই মাছ-মাংসে

ফের বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম, স্বস্তি নেই মাছ-মাংসে

স্বাধীনতা দিবসে বীর শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

স্বাধীনতা দিবসে বীর শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

দেশে আইনের শাসন না থাকায় নিরপরাধীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে- মির্জা ফখরুল

দেশে আইনের শাসন না থাকায় নিরপরাধীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে- মির্জা ফখরুল

না ফেরার দেশে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদী মহাম্মদ

না ফেরার দেশে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদী মহাম্মদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj