করোনা সংক্রমণের ১০৩তম দিনে এসে আক্রান্তের তালিকায় কানাডাকে পেছনে ফেলে বিশ্বে ১৭ নম্বর স্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। গত ৮ মার্চ দেশে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম ৮৭ দিনে গত ২ জুন আক্রান্তের সংখ্যা ৫২ হাজার ৪৪৫ জনে পৌঁছায়। গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩ হাজার ৮০৩ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জনে পৌঁছাল। গত ১৬ দিনে ৪৯ হাজার ৮৪৭ লোক সংক্রমিত হয়েছেন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪৩ জনে। প্রথম ৮৭ দিনে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭০৯ জন। পরবর্তী ১৬ দিনে ৬৩৪ জন মৃত্যুবরণ করলেন।
সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের ৬৪ জেলাতেই করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে আক্রান্তদের অধিকাংশই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে। এর বাইরে এক হাজারের বেশি করোনা শনাক্ত ব্যক্তি আছে কুমিল্লা, কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও নোয়াখালী জেলায়। ময়মনসিংহেও আছে এক হাজারের কাছাকাছি। বর্তমানে আক্রান্ত ব্যক্তির ৪৪ শতাংশ শুধু ঢাকা শহরে। সব মিলে ঢাকা বিভাগে আছেন আক্রান্তের প্রায় ৬৫ শতাংশ। এরপর প্রায় ২০ শতাংশ আছে চট্টগ্রাম বিভাগে। রংপুর বিভাগে ৩ শতাংশ ও বাকি পাঁচ বিভাগে ২ শতাংশেরও কম আক্রান্ত।
আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি পুরুষদের : দেশে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭১ শতাংশ পুরুষ ও ২৯ শতাংশ নারী। আর বয়স বিবেচনায় এগিয়ে আছেন ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। মোট শনাক্তের ৫৪ শতাংশ এ বয়সীরা। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা ১৭ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা ১১ শতাংশ, ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৭ শতাংশ হারে শনাক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীরা ৭ শতাংশ ও ১০ বছরের কম বয়সীরা ৩ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ পুরুষ ও ২৩ শতাংশ নারী। তবে এর বাইরে দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছে, যা সরকারি হিসাবে যুক্ত হয় না।
নমুনা পরীক্ষায় পিছিয়ে বাংলাদেশ : আক্রান্ত এক লাখ ছাড়ালেও নমুনা পরীক্ষায় এখনও পিছিয়ে বাংলাদেশ। এখানে এক লাখ ২ হাজার ২৯২ রোগী শনাক্তের বিপরীতে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৫০৩টি। বাংলাদেশের ওপরে ১৬তম অবস্থানে থাকা সৌদি আরব নমুনা পরীক্ষা করেছে ১১ লাখ ৬৭ হাজার। বাংলাদেশের নিচে থাকা কানাডায় নমুনা হয়েছে ২২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৮১টি। নমুনা পরীক্ষার হার কম হলেও রোগী শনাক্তের ঊর্ধ্বমুখী হার আগামীতে বাংলাদেশকে তালিকার আরও ওপরে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
১০ শতাংশ বিভিন্ন বাহিনীর : মোট আক্রান্তের তালিকায় ১০ শতাংশের বেশি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। এখন পর্যন্ত এসব বাহিনীর ১১ হাজারের বেশি সদস্যের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে হয়েছে বেশি বাংলাদেশ পুলিশের। এ বাহিনীর আট হাজারের বেশি সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই হাজার শুধু ঢাকা শহরের। পুলিশের ২৭ জন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। আনসারের সাড়ে চারশ’র বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন।
চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী ৩ শতাংশ : আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের হার ৩ শতাংশের বেশি। বৈশ্বিকভাবে এ হার আড়াই শতাংশ বলছে আন্তর্জাতিক নার্সেস কাউন্সিল। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বলছে, গতকাল পর্যন্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী মিলে ৩ হাজার ২৭৪ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক ১ হাজার ৩৫, নার্স ৮৮৫ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ১ হাজার ৩৫৪ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়, গত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৩৪৯টি। এ সময় দেশের ৫৯টি ল্যাবে ১৬ হাজার ২৫৯টি পরীক্ষা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ।