করোনাভাইরাসের মহামারি সময়ে সরকার ঘোষিত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট দুর্যোগকালীন বাজেট হয়নি বলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলছে, দুর্যোগ কাটিয়ে উঠার এবং অর্থনীতিকে চাঙা করার কোনো নির্দেশনা এই বাজেটে নেই।
আজ বৃহস্পতিবার সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন। এবারের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের স্লোগান হচ্ছে ‘অর্থনৈতিক উত্তোরণ ও ভবিষ্যত পথপরিক্রমা।’
বাজেট নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘জিডিপি এবং রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা দৃশ্যমানভাবেই প্রতারণার শামিল। বাজেটে বরাদ্দের বড় অংশ মেগা প্রজেক্টে দেওয়া হয়েছে। যা প্রশ্নবিদ্ধা। এগুলো অপেক্ষা করতে পারত। স্বাস্থ্যখাতে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা কিন্তু সেগুলো অনেকটা বঞ্চিত। এই প্রকল্পে টাকা যাওয়ার অর্থ হচ্ছে দুর্নীতি যে ধারা ছিল সেটাকে অব্যাহত রাখা। কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়াও দুর্নীতিকে অব্যাহত রাখবে। এ বাজেটে জনগণের জীবন ও জীবিকার বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এই মহামারীর সময়ে মানুষের কাছে মেগা প্রকল্পের চেয়ে তাদের জীবন ও জীবিকাই সবচেয়ে বড়। এই সময়ে মানুষ দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে চরম অসহায়ত্বের মধ্যে পড়ে গেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাত ও সামাজিক নিরাপত্তায় আশা জাগাতে পারেনি।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না তাঁর প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘দৃষ্টিনন্দন ডিজিটাল প্রেজেন্টেশন করা হয়েছে। গত বাজেটের মতোই সব একই জিনিস। এটা তো করোনার সময়কার বাজেট হয়নি। স্বাস্থ্য খাত ও সেবা খাতে কিছু করা হয়নি। সাড়ে ৫ লাখ হাজার কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতিই প্রায় ২ লাখ টাকার। করোনাভাইরাস কবে শেষ হবে কেউই জানি না। কিন্তু এই বাজেটে তার কোনো প্রস্তুতিই নাই। গতানুগতিক বাজেট। বাজেটে কোনো নির্দেশনা নেই, এ বাজেট অর্থনীতিকে চাঙা করতে পারবে না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ শাহ আলম সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, এ বাজেট ৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থবিরোধী, গতানুগতিক ও আমলাতান্ত্রিক। করোনা মহাবিপর্যয়কালে পীড়িত মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্য খাতের প্রাধান্য পাওয়ার জনআকাঙ্খা উপেক্ষিত হয়েছে। তাঁরা এ বাজেট প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং চলমান করোনাকালীন কঠোর বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা-কৃষি-কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সরকার করোনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাজেটে মানুষের কর্মসংস্থানের যথাযথ ব্যবস্থা নেই, দারিদ্রসীমা থেকে উত্তরণের কোনো দিকনির্দেশনা নেই। করোনা মোকাবিলায় সরকার জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিল গঠন করে সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের বিষয় উপেক্ষা করেছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে এ বাজেটকে অকল্পনীয় বলে উল্লেখ করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা রেজা কিবরিয়া। এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, আয় ও অর্থনায়নের অনুমানের ওপর ভিত্তি করে দুর্বল বাজেট করা হয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্যোগকালীন সময়কে মোকাবেলা করার বাজেট হয়নি। করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য যে ধরণের অর্থনীতি দরকার, মানুষের হাতে নগদ টাকা দেওয়া এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার বৃদ্ধি ঘটানো সেই নির্দেশনা দেখিনি। গণমুখী বাজেট হয়নি, সেই সুবিধাভোগীদের সুবিধা দেওয়ার পুরনো নীতিই করা হয়েছে।’
২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেটে করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য-চিকিৎসা এবং কৃষি ও গ্রামীণখাত যে মনযোগ ও বরাদ্দ পাবার কথা ছিল তা পায়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। এক তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, ‘এই দুর্যোগেও অর্থমন্ত্রী তাঁর মাথা থেকে প্রবৃদ্ধির ভুত নামাতে পারেননি।’ তিনি আরও জানান, অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যত পথ পরিক্রমা শীর্ষক বাজেটে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সরকারি উদ্যোগে গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে আসা আট কোটি মানুষের জন্য টেকসই ‘গণবন্টন ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার কোন পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দের প্রস্তাবনা নেই।