আবুজার গিফারী
২০ শে মে বুধবার। অন্যান্য দিনের মতো সূর্যটা পূর্ব আকাশে উদিত হয়ে তার কিরণ পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে দিয়েছে।ভাইরাসের কারণে সবাই যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সীমিত পরিসরে। কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে সুপার সাইক্লোন “আম্পান” প্রতিরোধে।সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ তখনো জানে না, কি মহপ্রলয়ংকারী আম্পান ধেয়ে আসছে তাদেরকে সর্বস্বান্ত করতে। সকাল থেকেই আকাশে রাশি রাশি মেঘের ঘনঘটা দৃশ্যমান। তবুও সূর্যটা মেঘের ঘনঘটাকে পরোয়া না করে তার কিরণ ছড়াতে ব্যতিব্যস্ত।সকাল গড়িয়ে দুপুর আসলো,তখন কিছুটা মৃদুমন্দ বাতাস বইতে শুরু করেছে। সূয্যিমামা যখন পশ্চিমাকাশে খানিকটা হেলে পড়েছে তখন বাতাস ভারি থেকে ভারিতর হতে শুরু করেছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই সূয্যিমামা সারাদিনের কর্মব্যস্ততার অবসান ঘটিয়ে একটু বিশ্রাম নিবে।ইতিমধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইফতারকে সামনে রেখে ইফতারীর পশরা সাজিয়ে বসে আছে।
তখন বাতাসের মাত্রা দেখে বহুলাংশে আন্দাজ করা যাচ্ছে অন্য দু’পাঁচ সন্ধ্যার মতো আজ এ সন্ধা নয়,এ সন্ধ্যা অন্যদিন অপেক্ষা ভিন্ন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত যখন আসন্ন তখন দূর থেকে সুমধুর কন্ঠ ভেসে উঠলো ঈশার আযানের ধ্বনি। মানুষ তারাবীর নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন মহাপ্রলয়ংকারী আম্পানের শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে। এ যেন এক অপরিচিত বাতাস, বাতাসে মানুষ ও পশুপাখির আর্তনাদের শব্দ। রাত যত গভীর হয় সুপার সাইক্লোন আম্পানের ভয়াবহতা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।
গাছের মড়মড় শব্দ আর বাতাসের শা শা শব্দ মানুষের অন্তরকে প্রকম্পিত করছে। এ যেন আমাদের উপর প্রকৃতির মহা প্রতিশোধ। সারাবিশ্ব যখন করোনার থাবায় বিপর্যস্ত তখন মহাপ্রলয়ী আম্পান যেন “মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা”। রাত সোয়া ১২ টা, নিজের ভিতর অতি উৎসাহের কারণে ঘর থেকে বের হলাম। রাস্তা অবধি না উঠতেই চোখে পড়লো বিশালকার শিশুগাছ রাস্তা উপড়ে নিয়ে পুকুরে পড়ে আছে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না।সামনের দিকে একটু আগাতেই চোখ পড়লো বিদ্যুতের খুঁটির দিকে, দেখলাম বিদ্যুতের তাঁর বিচ্ছিন্ন।
পাশেই আমবাগান,গাছের আমগুলো ঝরে পড়েছে। দেখে মনে হলো অপরিপক্ক আমগুলো অভিযোগ দিচ্ছে ,তাদের এখনো ঝরে যাওয়ার সময় হয়নি,প্রকৃতির অভিশাপের শিকারে তাদের আজ এ পরিণতি। আশেপাশে একটু তাকালাম যা দেখলাম তা ভাষাই প্রকাশ করার মত শক্তি বা সামর্থ্য আমার নেই। তবে এটুকু বলতে পারি আম্পানের ধ্বংসলীলা দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী মনে রাখবে। সেহরীর সময় আগত,তবে ঝড়ের অন্তযাত্রা এখনো শেষ হয়নি। ভোরবেলা যখন রাস্তায় গেলাম তখন দেখি মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আম্পানের ধ্বংসলীলী পর্যবেক্ষণ করছে। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলো আজ নির্বাক তারা তাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।যাদের বাড়িঘর একটু নড়বড়ে ছিল তাদের আজ মাথা গুজার ঠাই নেই।
তাদের আর্তনাদ দেখে যে কারো চোখে জল নেমে আসবে নিঃসন্দেহে।আম ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের কিছু খুঁটি মাঝখান বরাবর ভেঙ্গে গেছে আবার কিছু গোড়া থেকেই উপড়ে গেছে।বিদ্যুৎ সংযোগ গত ২০ তারিখ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল ১০ দিন।মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্কের অবস্থা বিধিবাম।বিদ্যুৎ না থাকার কারণে এই আছে এই নেই।ছোটকালে রবীন্দ্রনাথের “দুর্বুদ্ধি ” নামক ছোটগল্পে পড়েছিলাম “হৃদয় যতই ব্যথিত হোক কর্মচক্র চলতেই থাকে”।
এদিক দিয়ে কিছুদিন পর মানুষ আম্পানের ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতি মেনে নিয়ে নতুন উদ্যোমে আবার কর্মব্যস্ততায় নিমজ্জিত হবে কিন্তু মানুষের মনে আজ যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা নিশ্চয় মনে পড়লে শিহরিত হয়ে উঠবে। আমরা সুন্দর একটা সকাল চাই, ঘুম থেকে উঠেই যেনো শুনি পৃথিবী করোনামুক্ত হয়েছে ও আম্পানের ধ্বংসলীলা কাটিয়ে মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে।এই দুর্দিনে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের উচিৎ সহায় সম্বলহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মুখে হাঁসি ফুটাতে সহায়ক হওয়া।
শিক্ষার্থী, আবুজার গিফারী, আইন বিভাগ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া। মোবা.০১৭৭০৯৮৫৬১৪
জেলাঃ- সাতক্ষীরা।