নুরন্নবী সবুজ
আমি ছেলে। আমি যার সাথে প্রেম করছি সে একজন মেয়ে। আর যে মেয়ে আমার সাথে প্রেম করছে আমি ছেলে বলেই প্রেম করছে। প্রেম ও বিয়ের পর প্রথম যে সমস্যা হয় ছেলেটা মেয়েটাকে ছেলে বানাতে চায় আর মেয়েটা চায় ছেলেটাকে মেয়ে বানাতে। ছেলেটাকে ছেলের মত দেখতে ও ভাবতে দিতে হবে আর মেয়েকে তার মত চিন্তা ও ভালোবাসার সুযোগ দিতেই হবে। আমরা যদি এই সুক্ষ কাজটা খুব সহজ আর সাবলীলভাবে করতে পারি তাহলে পারস্পারিক জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান খুবই বাস্তব সম্মত ভাবে হবে। নারীবাদী বা পুরুষবাদী যে চিন্তা তার ক্ষেত্রেও এই চিন্তার ফল হবে ইতিবাচক ও সুদূরপ্রসারী।
ভালোবাসলে অবশ্যই দুই জনকেই কিছু পারস্পারিক চাওয়া পাওয়া পরিত্যাগ করতে হয়। সহনশীল হয়ে রুচি অভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। দুই জনার আলাদা আলাদা ভালো লাগার ও ভালোবাসার অভ্যাস ও রুচির মাঝে সম্বনয় করে চলতে হয়। এই সম্বনয় মানুষ হিসেবে তাকে মূল্যায়ন করা, শ্রদ্ধার মাধ্যমে দুই মেরুর চিন্তাকে এক মেরুকরণ ও দুই জন আলাদা হয়েও একজন হওয়া। একজনের ত্যাগ অপর জনের কাছে ভোগের না হয়ে যখন শ্রদ্ধার হয় ও ত্যাগের উদ্দেশ্যে যখন হয় শ্রদ্ধা আর সম্ভাবনা তখন সম্পর্ক থেকে শুধু সুগন্ধ ছড়ায়। ভোগের স্থানে বা নিজের জেদ ধরে রাখার জন্য সম্পর্ক সঠিক হয় না তাই নমনীয় তাড়না দিয়েই তাড়িত হতে হবে।
একজন মা তার সন্তানের সাথে খুব সহজ ভাবে মেশে। মায়ের সাথে রাগ করা অভিমান করা বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা খুবই সহজ। মা তার অহংকার বোধ দূরে রেখেই সন্তানের প্রতি তার ভালোবাসার সহজ প্রকাশ ঘটায় বলেই এমনটি সম্ভব হয়। যখন অহংকারবোধ নিয়ে সম্পর্ক তৈরী হয় তখন কেউ একজন কথা না শুনলেই তার যুক্তি বা ঘটনার পিছনে ঘটনা না শুনেই রাগারাগি ও সম্পর্ক ছিন্ন করে দিতে পারে। পরস্পেরের উপর শ্রেষ্ট্রত্ব ও কতৃত্ব ধরে রাখার নাম প্রেম নয়। যে কাজটা করা যায় না জেনেও ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে করতে বল হয় নেবার নাম প্রেম নয়। পরস্পর যত সহজ আর সাবলীল হবে যত বেশী নিরহংকারী হবে ততই মজবুত ও স্থায়ী হবে সম্পর্ক।
একজন মেয়ে সুন্দর করে সাজার পর তার প্রিয় জনের কাছ থেকে প্রসংশা শুনতে চায়। রান্না করা খাবারের গুণগান সহ একত্রে সময়গুলো শুধু মাত্র তার জন্যই চায়। এই প্রত্যাশা সম্পর্ক থেকে করাই যায়। এটা খুবই সুন্দর চাওয়া ,দোষের কিছু অবশ্যই নয়। এই বোধের উপর একজন পুরুষকে সচেতন হতে হবে, সম্মান জানিয়ে তা পালন করা পুরুষজাতির জন্য লজ্জার কিছু নয় বরং মানুষ হিসেবে একজন প্রকৃত মানুষের চিহ্ন বহন করে। একজন মেয়ে তেলাপোকা দেখে ভয় পেতে পারে। এটি তার জন্মগত,কোন অভিনয় নয়। এমন আচরণে তাকে খোটা দেয়া মানেই আপনি তাকে ছেলে বানতে চাচ্ছেন, তার অস্তিত্বে আপনি আঘাত করছেন। মেয়েটির মেয়েলি আচরণগুলো মেনে নিন ও সম্মান করুন দেখবেন আপনার জীবনেও সম্মান আর সুখ ভরে গেছে।
একজন পুরুষ বিকালে চায়ের আড্ডায় বন্ধুদের সাথে কিছু ব্যাক্তিগত সময় কাটাতে ভালোবাসে। মাঝে মাছে হয়ত সিনেমা দেখে বা সংসারের চাপে কিছু সময় অন্যমনস্ক হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করে। এই প্রত্যাশাগুলো একজন মেয়ের বুঝতে হবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তাকেও সহজ হয়ে সম্পর্ক আরো সহজ করতে হবে। এই আচরণগুলোর উপর নির্ধারণ করতে পারে সম্পর্ক কতটা সুখের আর শান্তি।
ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সম্পর্ক তৈরী করা মানে পরস্পরের স্বত্তায় বিশ্বাস করা ও সম্মান করা। ছেলে যদি মেয়েকে ছেলে বানাতে চেষ্টা করে ও মেয়ে যদি ছেলেকে মেয়ের বৈশিষ্ট ধারন করতে বলে তার ফল কখনোই সুখকর হবে না হতে পারে না। মেয়েকে মেয়ে হিসেবে বিবেচনায় তার রুচি অভ্যাসে সম্মান রাখতে হবে ছেলেকেও দিতে হবে তার প্রাপ্ত সম্মান। কোন রকমের গোড়ামী নষ্ট করে দিতে পারে আজীবন লালিত প্রত্যাশিত সুখ।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে আর যে বিষয়টি খুব কাজে দিবে তা হলো গোপনীয়তা রক্ষা। যখন কেউ তার সম্পর্ক নিয়ে ৩য় কোন ব্যক্তির কাছে বলে তখন ৩য় ব্যাক্তির মন্তব্যের উপর পরোক্ষভাবে সম্পর্ক সম্পর্কযুক্ত হয়ে। যখন সম্পর্কের গোপনীয়তার বিষয় অনেকেই জানে তখন সম্পর্ক ও সম্পর্কের উপলদ্ধিগুলো শুধু মাত্র ব্যাক্তিগত থাকে না তা সরকারী হয়ে যায়। পারস্পারিক আচরণ সমস্যা ও তার সমাধান নিজের মত করে তৈরী হবে ও তা নিজের মত করে সমাধান করতে হবে। এই আচরণ নিজস্বতা তৈরী করবে ও সম্পর্কে ক্ষেত্রে একান্ত সুখের মুহূর্তগুলো একান্ত করে তুলবে। নিজেকে অন্যের কাছে গল্পের বিষয়বস্তু হিসেবে তৈরী না করে রহস্যের বিষয়বস্তুতে পরিণত করতে হবে।
পরকীয়া, তালাক ও নির্যাতনের মত ঘটনাগুলোতে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের যে অভাব তার প্রভাব আছে। কর্মজীবী নারীর তালাকের প্রবণতা বা সংসার জীবনে গিয়ে মতের মিল না হওয়ায় তালাক বা বিচ্ছেদ মেয়েকে মেয়ে হিসেবে ও ছেলেকে ছেলে হিসেবে গণ্য না করার ফল। প্রত্যেকে তার নিজের জায়গায় সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে দিতে হবে। ত্যাগ হবে শ্রদ্ধা আর সম্ভাবনা থেকে জেদ থেকে নয়। দুজনের অবদানকে দুজনই স্বিকার করতে হবে ও তার প্রতিফলন হতে হবে বাস্তবে। ব্যাক্তির ইতিবাচক ব্যাক্তিত্ব ধরে রাখার প্রচেষ্টাই পারে পরস্পরকে পরস্পরের প্রতিযোগী না করে সহযোগী করতে ও সম্পর্ক স্থায়ী করতে।
লেখকঃ নূরুন্নবী সবুজ । আইন বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট।, nurunnobiislam379@gmail.com