এপিএস নিউজ ডেস্ক
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম শুরুর চতুর্থ দিনে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশের অধস্তন আদালত থেকে বিভিন্ন মামলায় ১ হাজার ৮২১ জন জামিন পেয়েছেন। গত চার দিনের তথ্য বিশ্লেষণে অধস্তন আদালতে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে জামিন শুনানি বাড়ছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কার্যক্রম শুরুর পর ১১ মে কুমিল্লার জেলা
জজ আদালতে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে এক মামলায় একজনের জামিন মঞ্জুর হয়।
পরদিন সারা দেশের অধস্তন আদালতে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শুনানির মাধ্যমে
১৪৪ জনের জামিন হয়। তৃতীয় দিনে ১৩ মে সারা দেশের অধস্তন আদালতে বিভিন্ন
মামলায় ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে ১ হাজার ১৩ জনের জামিন হয়।
ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে আজ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে বিচার
কার্যক্রম চলেছে। এ ছাড়া ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শুনানির জন্য হাইকোর্টের
পৃথক দুটি বেঞ্চে ৩১টি জামিন আবেদন আজ উপস্থাপিত হয়।
সুপ্রিম কোর্ট মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার সারা দেশের অধস্তন আদালতে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে ২ হাজার ৪৩৪টি জামিন আবেদনের শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়, যার মধ্যে ১ হাজার ৮২১ জনের জামিন মঞ্জুর হয়েছে।
হলুদ জোন স্থাপন এবং এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে রিট
প্রতিটি
বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের প্রবেশপথে হলুদ জোন স্থাপন করে আগত রোগীকে
জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে হাইকোর্টে
একটি রিট জমা দেওয়া হয়েছে আজ। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে
ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শুনানি চেয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে ওই রিটটি জমা দেন
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এ ছাড়া জেএমআই গ্রুপের এন–৯৫ মাস্ক নিয়ে
কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে এ বিষয়ে তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. হুমায়ন
কবির একটি রিট একই বেঞ্চে জমা দিয়েছেন। এই বেঞ্চে আজ আটটি রিট জমা পড়ে, যার
মধ্যে ওই দুটিসহ তিনটি রিট ১৮ মে শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।
এইচআরপিবি করা রিটের বিষয়ে মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালে হলুদ জোন স্থাপন করে আগত রোগীকে জরুরি চিকিৎসা দিতে নির্দেশনা চেয়ে রিটটি জমা দেওয়া হয়েছে। করোনার উপসর্গ ছাড়া অনেক রোগী হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। চিকিৎসাসেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার, যে কারণে রিটটি করা হয়। চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের জন্য মাস্ক, গ্লাভসসহ করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিতের আরজিও রয়েছে রিটে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আদালতেও সাধারণ ছুটি চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে ৯ মে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ শিরোনামে অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ফলে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়। ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের পৃথক চারটি বেঞ্চ গঠন করে দেন। অধস্তন আদালতে শুধু জামিনসংক্রান্ত বিষয়গুলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানকে মনোনীত করা হয়।
ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে চেম্বার কোর্টের কার্যক্রম
ভার্চ্যুয়াল
উপস্থিতিতে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য আজ আপিল বিভাগের বিচারপতি মো.
নূরুজ্জামানের চেম্বার কোর্টে বসেন। আদালত সূত্র বলেছে, চেম্বার কোর্টে
আজ তিনটি আবেদন শুনানির জন্য ওঠে। বেলা সাড়ে ১১ থেকে ১টা পর্যন্ত আদালতের
কার্যক্রম চলে। এর মধ্যে দুটি আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আগামী সোমবার
পর্যন্ত শুনানি মুলতুবি করেছেন। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় অপর আবেদনটি আদালত
খোলার পর উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টে শুনানি হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের হাইকোর্ট
বেঞ্চে আজ ২৬টি জামিন আবেদন শুনানির জন্য ওঠে। এর মধ্যে আটটি আবেদনে
পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। অন্য ১২টির মধ্যে
কয়েকটিতে সময় নেওয়া হয়, আবার কোনো কোনোটিতে আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায়
শুনানি হয়নি। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় অপর ছয়টি আবেদন নিয়মিত বেঞ্চে (আদালত
খোলার পর) উপস্থাপন করতে বলা হয়। কার্যক্রম শুরুর পর এই বেঞ্চে ২৭০টি
আবেদন জমা পড়ে, যার মধ্যে ইতিমধ্যে ১৬টি নিষ্পত্তি হয়েছে।
আদালত সূত্র বলেছে, বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ পাচটি আবেদন শুনানির জন্য ওঠে, এর মধ্যে একটিতে জামিন মঞ্জুর হয়, অপর তিনটি উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ হয়। অপরটি ১৭ মে শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। কার্যক্রম শুরুর পর এই বেঞ্চে এখন পর্যন্ত ৩৫টি আবেদন জমা পড়ে, যার মধ্যে ৫টি নিষ্পত্তি হয়েছে। এ ছাড়া বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ ই–মেইলের মাধ্যমে একটি আবেদন জমা পড়েছে। তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো ।