অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান
অনেক ইতিহাস,ঐতিহ্য ধারন করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এক সাগর রক্ত পেরিয়ে লাল সবুজের পতাকা খচিত স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। যার নাম “গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার”। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এবং জনগণের অধিকার ও দায়িত্ব নিশ্চিত করণের জন্য ১৯৭২ সালে রচিত হয় আমাদের পবিত্র সংবিধান। বাস্তবতার নিরিখে, প্রয়োজনের তাগিদে সংবিধানের ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এতবার সংশোধন,সংযোজন এবং পরিমার্জনের পরও আমাদের সংবিধানের কিছু মৌলিক ভিত্তি অপরিবর্তিত রয়েছে। একমাত্র জরুরী অবস্থাকালীন সময় ব্যতীত সকল সংশোধনীতেই রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা বহাল রয়েছে। এই সংবিধানের ভূমিকায় প্রথম ভাগেই প্রাধান্য দিয়ে ৭(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে“ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে”। সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরুপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ;ততখানি বাতিল হইবে”। যাহা বাংলাদেশর সংবিধানের ২৬(১) ও (২) অনুচ্ছেদে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে। সংবিধানের ২৬(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “এই বিধানাবলীর সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ,,এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে”। সংবিধানের ২৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,“রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোন আইন প্রনয়ন করিবেন না এবং অনুরুপ কোন আইন প্রণিত হলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।”
আমাদের পবিত্র সংবিধান প্রদত্ত এই নিশ্চয়তা প্রদানমূলক যে গাইড লাইন সংবিধানের ভূমিকা পর্বেই তুলে ধরা হয়েছে, সে কারনে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সংবিধান সম্মত অধিকার আদায়ে রাষ্ট্রের দ্বারস্ত হবার সুযোগ রয়েছে। রাষ্ট্র কখনো কোন নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার বাস্তবায়নে অস্বীকার করিলে,ব্যর্থ হলে বা অনিহা প্রকাশ করিলে সে ক্ষেত্রে নাগরিকের সুযোগ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোট বিভাগের শরনাপন্ন হবার। রাষ্ট্র বা সরকার কর্তৃক সম্পন্ন করা কার্যাদি সংবিধানকে কষ্টি পাথর ভেবে তার সাথে মিলিয়ে দেখার বা কোন কিছু অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে তা চ্যালেঞ্জ করার জন্য সুপ্রিমকোর্টের শরনাপন্ন হবার এখতিয়ার নাগরিকদের রয়েছে।
সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,“ প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে। মানব স্বত্তার মর্যাদা ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে”
সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে“ রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশ সমূহকে সকল প্রকার শোষন হইতে মুক্তি দান করা”
সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদন শক্তির ক্রম বৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবন যাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতি সাধন,যাহাতে নাগরিকদের জন্য
ক) অন্ন,বস্ত্র,আশ্রয়,শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবন ধারনের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা।
খ) কর্মের অধিকার অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমান বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার।
গ) যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম,বিনোদন ও অবকাশের অধিকার।
ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার,অর্থাৎ বেকারত্ব,ব্যাধি বা পঙ্গুজনিত কিংবা বৈধব্য,মাতা-পিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা আয়ত্বাধীন কারনে অভাব গ্রস্থতার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্য লাভের অধিকার” সমূহ নিশ্চিত হয়
সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও ১৮৬০ সালের প্রণীত পনোল কোড,১৮৭২ সালের স্বাক্ষ্য আইন এবং ১৮৯৮ সালের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড দ্বারা ফৌজদারি বিচার কার্য পরিচালিত হয়ে আসছে। অথচ আমাদের সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে,রাষ্ট্র বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নিশ্চিত করিবেন। দীর্ঘদিন রাষ্ট্র বিচার বিভাগ পৃথকীকরনের কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেটগণ এবং প্রশাসন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিচারকগণ বিচারকার্য পরিচালনা করে আসছিলেন। জেলা জজ সহ সকল দেওয়ানি আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রন করা হত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ইচ্ছা মাফিক। মাসদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিচার বিভাগে পৃথকীকরণে কাজ শুরু হয়। সরকার উচ্চ আদালতের উক্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে বেশ কয়েক দফা সময় নিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে। অবশেষে ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সম্পর্কিত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আলোর মুখ দেখে। সমস্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয় সুপ্রিম কোর্টের অধীনে। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন গঠন করে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট/সহকারী জজ নিয়োগ প্রদান করা হয়। সুপ্রিম কোর্টর অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগ পৃথকীকরন সংক্রান্ত নির্দেশনার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়,যা অদ্যাবধি বাস্তবায়ন করা হয় নাই। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা অদ্যাবধি পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। আমাদের সরকারগুলো বিচার বিভাগকে পূর্ণাঙ্গরুপে পৃথকীকরণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কালক্ষেপণ করে আসছে।
অধস্তন আদালতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি বিধিমালা প্রনয়ণ করা হয় যাতে বলা হয় ‘অধস্তন আদালতে জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত বাচাই কমিটিতে আইন মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি রাখা বাধ্যতামূলক’। সরকার এই প্রণিত এই আইন ও বিধিটি প্রনয়ণের ফলে বিচার বিভাগের উপর মন্ত্রণালয়ের আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। সরকার প্রণিত এই আইন ও বিধিমালা আমাদের সংবিধানের ১১৬(ক) অনুচ্ছেদের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামক একটি মানবাধিকার সংগঠন রীট মোকদ্দমা দায়ের করিলে সম্প্রতি উক্ত মোকদ্দমার চূড়ান্ত শুনানি অন্তে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চ উক্ত বিধানকে বেআইনী,সংবিধান পরিপন্থী ও বাতিল ঘোষনা করে রায় প্রদান করেন।
সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘রাস্ট্রের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান’। অথচ এই বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে সরকার দুর্নীতি দমন আইন পাশ করে সেই সংশোধনী আইনের ৩২(ক) ধারায় বিধান রাখায় হয়“সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের বিরুদ্ধে সরকারের অনুমোদন ছাড়া দুর্নীতির মামলা করা যাবেনা” সরকার প্রণিত এই আইনটি আমাদের সংবিধানের সহিত সাংঘর্ষিক দাবি করে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামা সংগঠন রীট মোকদ্দমা দায়ের করেন। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারী পূর্নাঙ্গ শুনানী শেষে বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ সংশোধিত দুদক আইনের ৩২(ক) ধারা বেআইনী ,সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করে সংশোধিত দুদক আইনের ৩২(ক) ধারা বাতিল করেন।
রিমান্ড প্রসঙ্গঃ
বাংলাদেশের সংবিধানে রিমান্ড সর্ম্পকিত যেসব অনুচ্ছেদ আছে তা কখনো রিমান্ডকে বৈধতা দেয়না। সংবিধানের ৩৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী “গ্রেফতারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব গ্রেফতারের কারন জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবেনা। উক্ত ব্যক্তিকে তাহার মনোনিত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবেনা”। ৩৩(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেট-এর সম্মুখে গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে (গ্রেফতারের স্থান হইতে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে) হাজির করিতে হইবে এবং ম্যাজিস্টেটের আদেশ ব্যতিরেকে তাাহাকে তদারিক্ত কাল প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না।
সংবিধানের ৩৫(৪) অনুচ্ছেদে বলা আছে“ কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাহার নিজের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে না।” ৩৫(৫) অনুচ্ছে অনুযায়ী “কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর অমানুষিক বা লাঞ্জনাকর দন্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরুপ ব্যবহার করা যাইবে না”। ১৮৯৮ সালে প্রণীত ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোডের ১৬৭ ধারার প্রচলিত রিমান্ড আমাদের সংবিধানের ৩৫(৪) ধারার সাথে সাংঘর্ষিক। বøাস্ট বনাম বাংলাদেশ সরকার মামলায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ১৫ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন যা আমাদের দেশে বিচারিক কাজে নিয়োজিত বিজ্ঞ বিচারগকগণ এবং বিজ্ঞ আইনজীবীগণ সকলেই অবগত রয়েছেন। অন্যদিকে রিমান্ডের আবেদন বিষয়ে ১৯৪৩ সালের পিআরবি’র প্রবিধান ৩২৪ এর অধীন পুলিশ রিমান্ডের যে আবেদন করে সেই আবেদনটি করার কথা পিআরবি’র প্রবিধান ৪৫৮(ক) অনুযায়ী বিপি ফরম ৯০ এর মাধ্যমে। পিআরবি অনুযায়ী পুলিশ অফিসার কর্র্তৃক করা রিমান্ডের আবেদনে জেলার প্রধান পুলিশ অফিসার বা পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে যা অনেক সময় অনুসরণ করা হয় না।
রিমান্ড বিষয়ে উচ্চ আদালতের প্রদত্ত ১৫ দফার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নির্দেশনা নি¤œরুপঃ
নির্দেশনা-১) যদি তদন্ত কর্মকর্তা কোন আসামিকে রিমান্ডের নেওয়ার জন্য আবেদন করেন তাহলে তিনি জিজ্ঞসাবাদের জন্য কোন আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার সব গ্রাউন্ড বিস্তারিতভাবে তুল ধরবেন এবং আদালতের সামনে আদালতের সন্তুষ্টির জন্য কেস ডায়রী উপস্থাপন করবেন। ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন আছে তাহলে তিনি রিমান্ড দেওয়ার কারন লিপিবদ্ধ করে মঞ্জুর করবেন। ম্যাজিস্ট্রেট সন্তুষ্ট না হলে রিমান্ড না-মঞ্জুর করবেন।
নির্দেশনা-২) যদি ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড মঞ্জুর করেন,তাহলে তদন্তকরী কর্মকর্তার হেফাজতে পাঠানোর পুর্বে আসামিকে একজন ডেজিগনেটেড ডাক্তার বা এই উদ্দেশ্যে গঠিত মেডিকেল বোর্ড দ্বারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে এবং সেই ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট ম্যাজিট্রেটের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।
নির্দেশনা -৩) রিমান্ডে নেওয়ার পর শুধু তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অধিকারী হবেন এবং রিমান্ডের সময় পেরিয়ে যাবার পর আসামিকে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করবেন। আসামি যদি কোন নির্যাতনের অভিযোগ জানায়,তাহলে ম্যাজিস্ট্রে তৎক্ষনাৎ আসামিকে সেই ডাক্তার বা মেডিকেল বোর্ডের কাছে পাঠাবেন।
নির্দেশনা -৪) ম্যাজিস্ট্রেট যদি ডাক্তার বা মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন আসামিকে আঘাতের চিহ্ন পান,তাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোডের ১৯০(১)(গ) এর অধীনে পেনালকোডের ৩৩০ ধারা মোতাবেক আসামি কর্তৃক কোন প্রকার পিটিশন দায়ের ছাড়াই অপরাধ আমলে নিবেন।
উপরোন্ত পুনরায় রিমান্ডের ক্ষেত্রে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ কাঁচের ঘরে আসামির নিযুক্ত আইনজীবীর উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুপারিশ বা নিদেশনা দিয়েছেন।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও আমাদেরকে স্বীকার করতেই হবে যে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সমূহ সকলেই জানা স্বত্বেও রিমান্ডের ক্ষেত্রে তা অনুসরনে আমাদের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এবং তদন্তকারী কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। আমরা আইনজীবীরাও সঠিকভাবে আদালতের কাছে আইনী ব্যাখ্যাসমূহ যথাযথভাবে উপস্থাপন করছি কি না সেটাও ভেবে দেখা দরকার। যে কারনে পুলিশ হেফাজতে আসামি অমানবিক নির্যাতন এমনকি মৃত্যুর ঘটানোর খবর পত্রিকার পাতায় দেখা যায়। ঝালকাঠির কলেজ ছাত্র লিমনের পঙ্গুত্ব বরণের লোমহর্ষক নির্যাতনের কাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যাখ্যা কোনটাই আমরা ভুলি নাই। অনেক ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিক চাপ প্রয়োগের অভিযোগ পাওয়া যায়। পুলিশ হেফাজতে আসামি নির্যাতনের বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোট একটি রীট মামলায় যুগান্তকারী নির্দেশনা প্রদান করেছেন যা সকলের অনুসনরণ করা উচিৎ।
উপর্যুক্ত বিষয় সমূহ পর্যালোনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, আইনের শাসন,মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সংবিধানে প্রদত্ত বিধিমালা অনুসরণ,বাস্তবায়ন মেনে চলা এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ সামাজিক ও নাগরিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্টায় ও সমৃদ্ধি আনয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারে।
লেখকঃ অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, লেখক ও আইনজীবী, E-mail: mizanmpur06@gmail.com