করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে ২১ জুন ঘোষিত নির্বাচনগুলো আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোটার এবং প্রার্থীরা। কোথাও সেভাবে নেই নির্বাচনি আমেজ। প্রার্থীরা আছেন চুপচাপ। উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় এখনো পর্যন্ত প্রচারণা শুরু করতে পারেননি প্রার্থীরা। টুকটাক দুই-এক জায়গায় প্রার্থীর পক্ষে মাইকিং হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনি কার্যক্রম লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার জন্য বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এরই মধ্যে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোতে এখনই ভোটগ্রহণের বিপক্ষে মত দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার। এই পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বা মাঠ প্রশাসন থেকে এখনই ভোট না করার ব্যাপারে যে মতামত এসেছে তা গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গত কমিশন সভায় আমি আমার অবস্থান তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভোট করার সিদ্ধান্ত হয়। জনস্বার্থকে সবার আগে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
গত ২ জুন নির্বাচন কমিশনের সভায় ইসির সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার স্থগিত থাকা ৩৭১টি ইউপি, ১১টি পৌরসভা, জাতীয় সংসদের লক্ষ্মীপুর-২ উপনির্বাচন এবং নতুন করে জাতীয় সংসদের সিলেট-৩, ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ উপনির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী ২১ জুন স্থগিত নির্বাচনগুলোর ভোট হবে। আর ১৪ জুলাই হবে তিন সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন। জাতীয় পার্টি-জাপা ১৪ জুলাই ভোটগ্রহণে আপত্তি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) চিঠি দিয়েছে। ১৪ জুলাই দলটির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী হওয়ায় তারা এই আপত্তি দেন।
তপশিল ঘোষণার পর গত ৬ জুন নির্বাচন কমিশন থেকে এক চিঠিতে ঘোষিত নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনি কার্যক্রম ও নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন অফিস, স্থাপনা বা এলাকা লকডাউনের আওতামুক্ত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু কোথাও এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ এলাকায় প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে পারছেন না।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বরাত দিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তারিখ পেছাতে অনুরোধ জানিয়ে ইসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও যশোরের বিভিন্ন উপজেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার উল্লেখ করে ভোট পেছানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। এর বাইরেও কয়েকটি জেলার জেলা প্রশাসকরা নির্বাচন পেছাতে ইসিকে মৌখিকভাবে অনুরোধ জানান।
ইউপি নির্বাচন ঘিরে গরম হচ্ছে রাজনীতি
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় লকডাউন ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা, নাটোর ও বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় লকডাউন চলছে। সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন রয়েছে। এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন করা হয়েছিল। লকডাউনের কারণে ভোটের কোনো প্রস্তুতি নেই।
চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, রাজশাহী, কক্সবাজার, খুলনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, সাতক্ষীরা, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মৌলভীবাজার, বাগেরহাট, ফেনী, গোপালগঞ্জ ও মেহেরপুর জেলাকে উচ্চ সংক্রমণ ঝুঁকি হিসাবে বিবেচনা করছে আইইডিসিআর। এর মধ্যে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচন রয়েছে। ২১ জুন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ১০টি ও তালায় ১১টিসহ মোট ২১টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। একই দিন বাগেরহাট জেলার মোংলায় ছয়টি, মোরেলগঞ্জে ১৫টি, ফকিরহাটে সাতটি ও শরণখোলা উপজেলায় চারটিসহ মোট ৩২টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটের তারিখ রয়েছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলা নির্বাচনও ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে। ঐ নির্বাচনি এলাকায় এখনো পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেনি প্রার্থীরা।