সরকারের হিসাব মতে করোনাকালে ৯ শতাংশ কমেছে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব। ফলে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর হার বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা। সরকারের নানা কর্মসূচি ও পরিকল্পনায় চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে প্রসব করানোর হার বেড়ে ৫০-এ উন্নীত হয়। কিন্তু করোনা তা ব্যাহত করে। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা।
সরকারের হিসাব মতে, দেশে ৫০ শতাংশ মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের আওতায় ছিল। কিন্তু করোনার প্রভাবে তা কমে আসে। সর্বশেষ ‘ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম’(এমআইএস) রিপোর্ট মতে, এই হার বর্তমানে ৪১ শতাংশ। করোনার কারণে কমেছে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের চিকিত্সাকেন্দ্রে গিয়ে চিকিত্সা নেওয়ার হার। করোনাকালে মাতৃমৃত্যু বেড়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এমন তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত টিকাদান কর্মসূচি ইপিআই।
ইপিআইর মতে, মহামারির আগে ৫০ শতাংশ প্রসব হতো বাড়িতে, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭৩ শতাংশ। ২০১৯ সালের মার্চে প্রসব পূর্ব সেবা পাওয়া গর্ভবতী ছিলেন ৪২ হাজার ৫২৬ জন, ২০২০ সালের মার্চে সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ৩৬ হাজার ৪১৫। পরিস্থিতির আরো অবনতি হয় এপ্রিলে। মহামারির আগে, অর্থাৎ ২০১৯ সালে এপ্রিলে প্রসব পূর্ব সেবা পেয়েছিলেন ৪২ হাজার ৫৭১ জন গর্ভবতী। গত বছর এ সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৬২ জন। ব্র্যাক পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, করোনার কারণে ১১ শতাংশ গর্ভবতী নারী চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত চেকআপ করান নাই।
এমনই এক পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারিভাবে এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নানা কর্মসূচি পালন করছে।
ব্র্যাক স্বাস্থ্য-পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি পরিচালক ডা. মোর্শেদা চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, করোনার শুরুতে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসক-নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে যাওয়াটা সংক্রমণের বিষয় ধরা হতো। কিন্তু পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে এবং এই উন্নতির জন্যই কাজ করছি আমরা।
অবস্ট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিকাল সোসাইটি বাংলাদেশ (ওজিএসবি)-এর তথ্য মতে, মহামারির আগে বাড়িতে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ৩২ শতাংশের মতো। কিন্তু করোনাকালে ওজিএসবির ১৪টি শাখার তথ্য বলছে, শতকরা ৫৪ শতাংশ বাড়িতে মাতৃমৃত্যু বেড়েছে। যদিও এটা গবেষণালব্ধ জরিপ নয়।
প্রসূতি ও ধাত্রীবিদ্যা চিকিৎসক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রওশনআরা বেগম বলেন, মাতৃমৃত্যু একটা সময় দ্রুতগতিতে কমলেও কিছুটা ধীরগতি পেয়েছে। আর করোনার প্রভাব তা আরো কমিয়ে দিয়েছে।
গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে নিয়ে কাজ করা নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক সামিয়া আফরীন বলেন, করোনা কালে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ বিষয়টি ভীষণভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের চিকিৎসা। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচি পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বৃদ্ধির ফলে প্রসূতি মৃত্যুও বৃদ্ধি পাবে।