এ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান
নাবালকের চুক্তি (Minor’s contract) বাংলাদেশে প্রচলিত ১৮৭৫ সালের সাবালকত্ব অাইনের ৩ ধারা অনুযায়ী যার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে তাকে সাবালক বলে গন্য করা হবে। সাবালকত্ব আইন অনুযায়ী যার বয়স ১৮ বছরের কম তারা নাবালক হিসাবে গণ্য হন। কারা চুক্তি সম্পাদন করার যোগ্য তা ১৮৭২ সালের চুক্তি অাইনের ১১ ধারায় বলা হয়েছে, উক্ত ধারানুযায়ী’ প্রত্যেক ব্যক্তিই চুক্তি করার যোগ্য যদি সে সাবালক,সুস্থ্য মস্তিষ্কসম্পন্ন এবং প্রচলিত অাইনের বিধান অনুযায়ী অযোগ্য না হয়ে থাকে। এখানে ব্যক্তি বলতে প্রাকৃতিক ব্যক্তি(নারী-পুরুষ) এবং কৃত্রিম ব্যক্তি ( কোম্পানী) বুঝায়। তাই (১) নাবালক,কিংবা (২) সুস্থ মনের অধিকারী নয় অর্থাৎ পাগল বা মাতাল বা অপ্রকৃতস্থ ব্যক্তি যিনি নিজের ভাল-মন্দ বোঝেন না, অথবা(৩) প্রচলিত অাইনে যার চুক্তি করার যোগ্যতা খর্ব করা হয়েছে এরুপ ব্যক্তি চুক্তি করতে পারে না।
নাবালকের চুক্তি সাধারনত বাতিলঃ কতিপয় ব্যতিক্রম ছাড়া নাবালকের চুক্তি প্রথম হতেই বাতিল (void ab initio) ।চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিচার বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করার মত মানসিক পরিপক্কতা নাবালকের নেই। সেজন্য নাবালকের চুক্তিকে চূড়ান্তভাবে বাতিল হিসেবে গন্য করা হয়েছে। নাবালক নিজে কোন সম্পত্তি বা কোন চুক্তি করতে পারেন না। নাবালকের পক্ষে তার পিতা বা মাতা কিংবা অন্য কোন অভিভাবক সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। পিতা স্বাভাবিক অভিভাবক, তাই পিতাকে নাবালকের গার্ডিয়ান নিযুক্ত হতে হয় না। পিতা ব্যতীত অন্যরা নাবালকের সম্পত্তি বিক্রয় করতে চাইলে প্রথমে আদালত থেকে গার্ডিয়ান নিযুক্ত হতে হবে। তৎপর ঐ গার্ডিয়ানকে সম্পত্তি বিক্রয়ের অনুমতি নিতে হবে। যদি প্রমানিত না হয় যে অভিভাবক নাবালকের স্বার্থের প্রতিকূলে কাজ করেছে তাহলে সে চুক্তি বলবৎ থাকবে। তাছাড়া অাদালতের অনুমতিক্রমে বা অাদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক এরুপ চুক্তি সম্পাদন করলে তা নাবালকের জন্য অবশ্য পালনীয়।নাবালকের চুক্তি শুরু থেকেই বাতিল বিধায় সাবালকত্ব অর্জনের পরে অনুসমর্থন (ractification) দ্বারা সেই চুক্তিকে বৈধ করা যায়না।
নাবালক কর্তৃক সুবিধাভোগ ফেরৎযোগ্য নয়ঃ নাবালক কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তি শুরু থেকেই বাতিল বিধায় এর অধীনে সে নাবালক কোন সুবিধা সম্পাদিত চুক্তি শুরু হতে বাতিল বিধায় এর অধীনে সে নাবালক কোন সুবিধা ভোগ করে থাকলে সাধারন অাইনে সেই সুবিধা ফেরত দিতে তাকে বাধ্য করা যাবে না। #মানসিক অসুস্থ বা পাগল ব্যক্তির চুক্তি( Contract by petsons of unsound mind) নাবালকের মতই কোন মানসিক প্রতিবন্ধী বা পাগলের সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্যেও বিজ্ঞ আদালতের অনুমতি নিতে হয়। অাদালতের অনুমতি ছাড়া পাগল-পাগলীর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় প্রথম থেকেই বাতিল(void ab initio)।যেহেতু পাগলের সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অাদালতের অনুমতির প্রয়োজন,সেকারনে বাতিল চুক্তি মোতাবেক তার দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে তার প্রতি সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের(Specific petformance of the contract) অাদেশ দেয়া যায়না।#উল্লেখ থাকে যে চুক্তি অাইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী চুক্তিভুক্ত পক্ষের মধ্যে বিশেষ সম্পর্কের কারনে একপক্ষ যদি অপর পক্ষের ইচ্ছাকে অহেতুক প্রভাবিত করতে পারে এবং এ অবস্থার সুযোগ গ্রহন করে সে পক্ষ কোন সুবিধা অাদায় করে বা কোন দলিল সম্পাদন করে তবে সে চুক্তিটি অনুচিৎ প্রভাব বলে সম্পাদিত হয়েছে বলে ধরা যাবে।
এ ধারা মতে নিম্নবর্নিত ক্ষেত্রে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির অনুচিত প্রভাব বিস্তার করতে পারেঃ(১) উক্ত ব্যক্তি যদি অপর ব্যক্তির উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কর্তৃত্ত খাটানোর অবস্থায় থাকে অথবা যেখানে অপর পক্ষের সাথে তার বিশ্বাসমূলক সম্পর্ক (feduciary relation) বিদ্যমান থাকে। অথবা(২) অপর ব্যক্তি যদি বার্ধক্য,পীড়া বা অন্য কোন কারনে এরুপভাবে শারিরীক বা মানসিকভাবে অাঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে যাতে তার স্বাভাবিক মানসিক ভারসাম্য সাময়িক বা চিরতরে বিনষ্ট হয়ে যায়।এরুপ অবস্থায় সম্পাদিত চুক্তি বাতিল বলে গন্য হবে।#একজন নাবালক কি হস্তান্তর গ্রহীতা হতে পারে কি?
১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন এবং ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের বিধান অনুযায়ী একজন নাবালক সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে না। তবে তার অনুকূলে বা বরাবরে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে আইনে কোন বিধি-নিষেধ নেই। সুতরাং একজন নাবালক হস্তান্তর গ্রহীতা হতে পারে। কিন্তু দাতা হতে পারে না। দাতা হতে হলে যথাযথ আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তার পক্ষে তার অভিভাবক সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন।তাই চুক্তিমূলে কোন সম্পত্তি বিক্রয় বা অন্যভাবে হস্তান্তর করতে না পারলেও নাবালক ক্রয় বা অন্যভাবে সম্পত্তি অর্জন করতে পারে।
লেখকঃ মোঃ মিজানুর রহমান, আইনজীবী জজকোর্ট মেহেরপুর।