নিজস্ব প্রতিবেদক
ইরফান খান অভিনেতা হিসেবে ছিলেন খুবই আলোচিত, নন্দিত। বলিউডের বাইরে হলিউডের ছবিতেও তিনি অভিনয় করেছেন। মুল ধারার বাইরের সিনেমাগুলোতে তার ছিল শক্তিমান উপস্থিতি।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি মস্তিষ্কের এক বিরল রোগে ভুগছিলেন। ইরফানের মৃত্যুর খবরে একটা কথা খুব মনে হচ্ছে। এই যে এত নাম, যশ, খ্যাতি, অর্থ বিত্ত…সব ছেড়ে একদিন সব মানুষকেই চলে যেতে হয়। পৃথিবীতে যতই তার প্রতিপত্তি থাকুক, পরিচিতি থাকুক, একদিন ঠিক ঠিক ফিরতে হয় শুন্য হাতে। এ থেকে কারোরই নিস্তার নেই।
অভিনেতা অভিনেত্রীরা মারা গেলে কেন যেন তাদের জন্য আমার খারাপ লাগে, করুনা হয়। মনে হয়, একটামাত্র জীবন কি বাজেভাবেই না খরচ হল! পুরো জীবনটা চলে গেল অপচয়ের খাতায়। এই জীবন, এই জীবনের কর্ম খ্যাতি যশ মৃত্যুর পর কোন কাজেই আসবে না। পরকালের প্রাপ্তির খাতায় নেহায়েত শুন্য! আল্লাহর কাছে হাজারবার কাদলেও এই জীবন ফিরে পাবার উপায় নেই। নেই পুণ্য কামিয়ে পরকালে সুখি হবার সুযোগ। আরও একটা কথা প্রায় ভাবি। বেচে থাকতে অভিনেতা অভিনেত্রীরা যশ চান, খ্যাতি চান। চান, হাজার হাজার মানুষ তাদের চিনুক, জানুক। তারা তাদের কাজের মাঝে শত শত বছর বেচে থাকতে চান।
তারা চান, তাদের মৃত্যুর পরেও মানুষ তাদের অভিনয় দেখুক, সিনেমা দেখুক। তাদের অভিনয় দেখে তাদের স্মরণ করুক, প্রশংসা করুক। অথচ, মৃত্যুর পরে এই নাটক সিনেমাই তাদের গলার ফাস হয়ে যায়। যতবার মানুষ এইসব সিনেমা দেখে, ততবার তাদের আমলনামায় পাপ যোগ হতে থাকে। পাপের পাল্লা দিনকে দিন ভারি হয়। কবরের শীতল অন্ধকারে তারা হয়তো চিতকার করে, কাদে। আর্তনাদ করে। ভাবে “আহা! কেউ যদি এই সিনেমাগুলো বন্ধ করে দিত! যদি কেউ তাদের দৃশ্যগুলো ঘষে ঘষে মুছে ফেলত”
কিন্তু তা আর হবার নয়। তাদের আর্তনাদ মানুষের কান অবধি পৌছায় না। কবরে ডাকাতের পাপের শাস্তি একসময় শেষ হয়, চোরের শাস্তি শেষ হয়। কিন্তু শিল্পীর শাস্তি চলতেই থাকে। যতদিন তার কাজ মানুষের মাঝে বেচে থাকে, ঠিক ততদিন। কী অদ্ভুত বৈপরিত্য! বেচে থাকতে যা পরম গর্বের, মৃত্যুর পরেই তা নিদারুন যন্ত্রনার! তবুও দুনিয়ার চকমকে জীবন আমাদের দুর্নিবার আকর্ষনে টানতে থাকে। দুনিয়ার ফেরে আমরা পরকাল খুইয়ে বসি।
আল্লাহ সবাইকে বোঝার তাওফিক দিন। আমিন।
এপিএস/২৯এপ্রিল/পিটিআই