দেশে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার রেকর্ড হয়েছে। রোববার সকাল আটটা থেকে সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ৫ হাজার ১৮১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত বছরের ২ জুলাই করোনায় সংক্রমিত ৪ হাজার ১৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এতদিন এটাই ছিল একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড
দেশে করোনা সংক্রমণের ৩৮৭ তম দিন আজ সোমবার। এই সময়ে দেশে নিশ্চিত করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিকে গুরুতর বলে বর্ণনা করেছেন গবেষকেরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ পর্যন্ত দেশে ৬ লাখ ৮৯৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৯৪৯ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৮ জন।
মহামারির শুরু থেকে বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চলের করোনা সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৬ লাখের বেশি, বিশ্বে এমন দেশের সংখ্যা এত দিন ছিল ৩২টি। আজ বিশ্বের ৩৩ তম দেশ হিসেবে এই তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
আইইডিসিআরের পরামর্শক মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়েছে মানে হলো, বিরতি ছাড়াই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা যে গুরুতর জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির মধ্যে আছি, সেই বার্তাই দিচ্ছে এই সংখ্যা।’
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয়। গত ১৮ জুন দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়ায়। ১৮ জুলাই ছাড়ায় ২ লাখ। শনাক্তের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়ায় ২৬ আগস্ট। ৪ লাখ ছাড়ায় ২৬ অক্টোবর। ২০ ডিসেম্বর দেশে করোনা সংক্রমণের ২৮৮তম দিনে শনাক্তের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়ায়। আজ সংক্রমণের ৩৮৭তম দিনে শনাক্ত ৬ লাখ ছাড়াল।
১০৩ দিনে প্রথম লাখ শনাক্ত হয়। দ্বিতীয় লাখ শনাক্ত হয় ৩০ দিনে। তৃতীয় লাখ শনাক্ত হয় ৩৯ দিনে। চতুর্থ লাখ শনাক্ত হয় ৬১ দিনে। পঞ্চম লাখ শনাক্ত হয় ৫৫ দিনে। আর ষষ্ঠ লাখ শনাক্ত হয় ৯৯ দিনে।
দেশে করোনার সংক্রমণ প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুরুর দিকে সংক্রমণ ধীরগতিতে ছড়িয়েছে। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে শুরু করে। জুনে পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করে।
দেশে করোনার সংক্রমণ চূড়ায় (পিক) উঠেছিল গত বছরের জুন-জুলাই মাসে। সে সময় বিশেষ করে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার রোগী শনাক্ত হয়। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ কমতে দেখা যায়। বেশ কিছু সময় পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশে সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী।
দেশে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়েছে মানে হলো, বিরতি ছাড়াই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা যে গুরুতর জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির মধ্যে আছি, সেই বার্তাই দিচ্ছে এই সংখ্যা।
মুশতাক হোসেন, আইইডিসিআরের পরামর্শক
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ লক্ষণীয়ভাবে বাড়ছে। এক সপ্তাহ ধরে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল আটটা থেকে সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ৫ হাজার ১৮১ জন রোগী শনাক্তের তথ্য দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশে এক দিনে এত রোগী আগে কখনো শনাক্ত হয়নি। আজকের আগে গত বছরের ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জন রোগী শনাক্তের তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা গত বছরের জুন-জুলাইয়ের মতো হওয়ার আভাস মিলছে। এই প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে আইইডিসিআরের পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, রোগী শনাক্তের ভিত্তিতে সংক্রমণের উৎস চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। অজানা উৎসের ঝুঁকি থাকায় সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য বিধি মানতে হবে। আর যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিতে হবে।