বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বস্তরের জনগণ। আজ শুক্রবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মওদুদ আহমদের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়।
এরপর বিএনপি, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), এনডিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ মওদুদ আহমদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানায়।
শ্রদ্ধা জানানোর পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মওদুদ আহমদ সারা জীবন একজন সংগ্রামী নেতা ছিলেন। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারে থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য অবদান রেখেছেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আজকে মওদুদ আহমদকে হারিয়ে আমরা একজন বিশিষ্ট, বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদকে হারালাম। জাতি হারাল একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদকে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল হারাল একজন অভিভাবককে।’
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ও মওদুদ আহমদের ভায়রা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এ রকম হওয়া উচিত নয়।’বিজ্ঞাপন
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে গেলে, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের প্রসঙ্গ লিখতে গেলে মওদুদ আহমদের নাম বাদ দেওয়া যাবে না। একজন নায়ককে আমরা হারালাম।’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মওদুদ আহমদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাগপার একাংশের সভাপতি লুৎফর রহমান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ হলে সকাল পৌনে ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মওদুদ আহমদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মওদুদ আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি নুরুজ্জামান, বিচারপতি সৈয়দ জিয়াউল করিম, বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন ও মনির উল্লাহ। এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষেও মওদুদ আহমদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর মধ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতি ফোরাম, মওদুদ আহমদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস, ল রিপোর্টার্স ফোরাম এবং ফেনী-নোয়াখালী আইনজীবী ফোরাম শ্রদ্ধা জানায়।
আজ বেলা ১১টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মওদুদ আহমদের আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেও দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে মওদুদ আহমদের কফিন দলীয় পতাকা দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়। পরে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। এরপর দলের অন্য নেতা ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতারা এই নেতার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মওদুদ আহমদের মরদেহ নেওয়া হবে তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানিকপুরে। নোয়াখালীর কবিরহাট ডিগ্রি কলেজ মাঠে বেলা আড়াইটায় আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল চারটায় বসুরহাট কোম্পানীগঞ্জ সরকারি মুজিব মহাবিদ্যালয়ের মাঠে আরও একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।এরপর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মানিকপুর কোম্পানীগঞ্জে নিজ বাসভবনের সামনে সবশেষ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মা–বাবার পাশেই শায়িত হবেন প্রবীণ এই রাজনীতিক।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সিঙ্গাপুরে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন রাজনীতিবিদ মওদুদ আহমদ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। আর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর মরদেহ দেশে এসে পৌঁছায়।