করোনা মহামারীর প্রভাবে গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশের ৬২ শতাংশ শ্রমিকের মজুরি কমে গেছে। এ সময় কর্ম হারিয়েছেন ৭ দশমিক ৯ শতাংশ শ্রমিক। প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শ্রমিক এ সময়ে কাজ হারান। আর নানা কারণে ৫ শতাংশ শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের ‘জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি’র খানা জরিপে এসব তথ্য জানানো হয়। গতকাল বুধবার এক ওয়েবিনারে ‘কর্মসংস্থান ও অভিবাসনের ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সংগঠনের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা।
তিনি বলেন, ‘কর্মসংস্থান ও অভিবাসনের ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পেতে সানেম ২০২১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে খানা পর্যায়ে জরিপটি পরিচালনা করে। এতে মোবাইল ফোন কলের মাধ্যমে ২৭৩ প্রবাসী শ্রমিক, দেশের মধ্যে অন্যত্র কাজের জন্য স্থানান্তরিত ২৩০ কর্মী বা শ্রমিক এবং দেশ বা দেশের বাইরে কাজের জন্য স্থানান্তরিত নন এমন ২ হাজার ৮৪৫ কর্মী বা শ্রমিকের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।’
সানেমের জরিপ বলছে, বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন এমন ৬২ শতাংশ কর্মী বা শ্রমিক গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বেতন ২০১৯ সালের তুলনায় কমে গেছে বলে জানান। ৭ দশমিক ৯ শতাংশ শ্রমিক এ সময়ে কাজ হারানোর কথা জানান এবং এদের মধ্যে ১ দশমিক ৭ শতাংশ এখনো কাজ ফিরে পাননি। সাময়িকভাবে কাজ হারানোর এ হার ৫ দশমিক ৪। ৭ শতাংশ পুরুষ জানান এখনো তারা কাজে যোগ দিতে পারেননি; নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ১৬ শতাংশ।
কৃষি খাতে বেতন বা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন এমন ৬৮ শতাংশ জানান, ২০১৯ সালের তুলনায় তাদের আয় কমে গেছে। তৈরি পোশাক খাতে এ হার ৬৯, অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ৫৮, নির্মাণ খাতে ৭৪, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় ৫৭ এবং পরিবহন খাতে এ হার ৮০ শতাংশ। তবে ৩৮ শতাংশ কর্মজীবী এ সময়কালে তাদের বেতন কমেনি জানান। আর ২৮ শতাংশ জানান তাদের বেতন বা মজুরি কমলেও জরিপকালে আগের অবস্থায় এসেছে।
ওয়েবিনার পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ‘করোনার আগেও জীবিকার জন্য অভ্যন্তরীণ অভিবাসন খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু এখন অভ্যন্তরীণ অভিবাসন কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব প্রকাশ করছে। পুঁজিবাজার ও শ্রমবাজার নিয়ে দুর্বল নীতি বা নীতির অনুপস্থিতি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের ওপর প্রভাব ফেলবে।’
অনুষ্ঠানে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘লোকজন ধীরে ধীরে কাজে ফিরে যাচ্ছে, এটা ইতিবাচক। কিন্তু নতুন বিনিয়োগ না হলে শ্রমশক্তিতে যোগ দেওয়া নতুনদের আমরা কোথায় জায়গা দেব? কারণ এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের বেকার জনগোষ্ঠীর জন্যই তেমন কিছু করতে পারিনি।’
ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পওতিয়ানেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ বক্তব্য দেন।