রাজনীতিতে বিএনপির তৎপরতায় সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই মন্তব্য করে শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া তাদের তুরুপের তাস। বিএনপি অতিতৎপর হলেই খালেদা জিয়ার প্যারোল ধরে টান মারবে তারা। ফলে বিএনপিকে ভয় পাওয়ার কোনো আপাত কারণ নেই।
ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার মতে, বিএনপির নিয়ন্ত্রক খালেদা জিয়া, আর সেই খালেদা জিয়াকে হাতের মুঠোয় রেখেছে সরকার। এই দুই মিলে বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে ক্ষমতাসীনরা। খালেদা জিয়া প্রশ্নে এই মুহূর্তে সরকারের মর্জির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই বিএনপির। তারা বলছেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া শর্তেই খালেদা বাইরে আছেন। সব শর্ত ঠিকঠাক মেনে চললে প্যারোলও ঠিক থাকবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা আরও বলেন, বিএনপির নেতা খালেদা জিয়াকে আপাতত আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে যে সমঝোতার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া বাইরে আছেন তার ব্যত্যয় ঘটলে আবার তাকে জেলে যেতে হতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার একটি বিধান রয়েছে। সেই বিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়া প্যারোলের আবেদন করেন এবং কিছু শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তিও দেয় সরকার। ওই শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে এবং প্যারোলের প্রয়োজনীয়তা না থাকলে যে কাউকে যেকোনো সময়ে আইন অনুযায়ী কারাগারে যেতে হয়।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, খালেদা জিয়া প্যারোলে জেলের বাইরে আছেন। কিছু শর্তসাপেক্ষে প্যারোল দেওয়া হয়। সেই শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে নিশ্চয়ই জেলে যাবেন তিনি। প্যারোলে মুক্তির সময়সীমা আরও বাড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্যারোলে মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়ার ওপরই নির্ভর করবে তা বাড়বে কি না।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর একজন সদস্য বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকবেন, না বাইরে থাকবেন এটা বিএনপির ওপর নির্ভর করছে। খালেদা জিয়া এ সময়টাতে আর জেলে থাকতে চান না। সেই চাওয়া অনুযায়ী তার আত্মীয়র পক্ষ থেকে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুক্তি মেলে খালেদা জিয়ার। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলও এ বয়সে তাকে জেলে রাখার ঝুঁকি নিতে চান না। দুপক্ষের একই চাওয়া সরকারের জন্য এক ধরনের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে একটি শর্তের মধ্য দিয়ে সমঝোতায় এসেছেন বিএনপির নেতারা। তাতেই জেলমুক্ত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সভাপতিমন্ডলীর ওই সদস্য আরও বলেন, বিএনপি যতদিন নিয়ন্ত্রণে থাকবে খালেদা জিয়াও কারাগারের বাইরে থাকবেন। সুতরাং চাইলেও বিএনপির এখন সরকারের বিরুদ্ধে যা-তা করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, খালেদা প্রশ্নে বিএনপির আর বেশি কিছু করার নেই সরকারের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর একজন সদস্য বলেন, খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সাহসের প্রদর্শনী হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এখন তিনি জেলে থাকলেও যে কথা, বাইরেও সেই একই কথা। তবে বাইরে রাখার মধ্য দিয়ে যদি বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেটাই ক্ষমতাসীনদের জন্য বাড়তি সুযোগ। সেই কৌশলে গেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিও সেই সুযোগ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীনদের। বিএনপি চায় খালেদা জিয়ার মুক্তি, আওয়ামী লীগ চায় তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা। সম্পাদকমন্ডলীর ওই নেতা আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে সরকার।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর অন্য এক সদস্য বলেন, সমঝোতার রাজনীতি করার নীতি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে চায় সরকার। ফলে সমঝোতার বিকল্প নেই। তাই সমঝোতার নীতি অনুসরণ করেছে সরকার।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, খালেদা জিয়া এখন বিদেশ যেতে চান। এ নিয়েও সরকারের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বজনদের দেনদরবার চলছে। তবে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় বিষয়টি সুফল-কুফল কী হতে পারে তা নিয়ে ভাবছেন। বিদেশ ইস্যু নিয়ে এখনো রফা হয়নি।