মীর আব্দুল হালিম
বাংলাদেশের একমাত্র স্বয়ংসম্পুর্ন জেলা প্রাণের ব্রাহ্মণবাড়িয়া৷৷ বাংলাদেশের ৭ম ধনী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আমাদের অহংকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আমাদের প্রাণের জেলা, গর্ববোধ করি আমি, আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান। ৩২ লক্ষ মানুষের বসবাসের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সম্প্রতি এই জেলাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ট্রল করা হচ্ছে, এসব ট্রলের কারণে আঞ্চলিকতার ভালোবাসায় সিক্ত অনেকে আহত হচ্ছে তবে এখনো নিহত হবার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
সাংবাদিক জ.ই মামুন, অভিনেতা মারজুক রাসেল, ডাক্তার আব্দুন নূর তুষার সহ নানা গুণী ব্যক্তিদের নামও দেখি এ তালিকায়। এদের বিপক্ষে আইনি নোটিশ প্রেরণসহ মামলাও হয়েছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিবাসী যে সকল অন্তপ্রাণ ব্যক্তিগণ আহত হয়েছেন তারা নানাভাবে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমার বাড়িও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর গ্রামের রূপসদী ইউনিয়নের খাউরপুর গ্রামে, ইহাতে কিছুটা হইলেও আহত হই বিধায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
পক্ষে কলম ধরার মন চায়।ব্রাহ্মণবাড়িয়া সবদিক থেকেই বিখ্যাত তাই সবাই এর পিছনে লেগেছে, ওই যে কথায় আছে না, হিরোদের কে তো সবাই পছন্দ করে, এটাই তো স্বাভাবিক। হিরোরা সরাসরি মারে না, তাঁরা মারে কৌশলে সুতরাং বাউনবাইরা বাসিরাও কৌশলে মার শিখতে হবে যেটা আমাদের বাপ-দাদারা শিখিয়ে গেছে, মনে আছে? তাই ওদেরকে আতে না ভাতে মারতে অইব কারণ যেরে মারণ আতে হেরে মারন ভাতে! ইহাই বাপ-দাদারা শিখিয়ে গেছে।
স্বীকার করি, বাউনবাইরা এলাকার কিছু মানু মারামারি কোপাকুপি করে চাপাতি, টেটা, বল্লম, চল, কোছ, লাঠি, বান্দা ইত্যাদি ব্যবহার করে! আসলেই তাদের কোনো দোষ নাই তাহারা তো পিস্তল বন্দুক, একে ফরটি সেভেন, বোমা ইত্যাদি কিনে না, তাই বাধ্য হয়েই তাদেরকে দেশীয় মাধ্যমের ওপর নির্ভর করতে হয়, কেন? বেশিরভাগ মানুষই তো দেশি জিনিসপত্র পছন্দ
করে এই ধরুন যেমন দেশি পেঁয়াজ, দেশি রসুন, দেশী মোরগ, দেশি গরু এমনকি দেশি ভাষা ও বটে! বাউনবাইরার মানুরা দেশী অস্ত্র ব্যবহার করলে তাদের প্রতি এরকম দুমুখো নীতি কেন হবে? বলি প্রবাদের কথা কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ পাকলে করে টাস টাস তাই তাদেরকে কাঁচা থাকতেই সোজা করতে হইবো, আইয়েন কেমনে সোজা করতে হয় তা দেখা যাবে।
আরও বলা হয়ে থাকে এরা নাকি মাজার পূজা, খন্ডিত পা নিয়ে জয় বাংলা মিছিল করে, আমরা করেছি এটাও স্বীকার করি… জমি নিয়ে মারামারি দখল নিয়ে কাড়াকাড়ি এগুলো হয়। কিন্তু যেটা হয় না সেটা কি জানেন? আমরা মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করিনা, বাবার সামনে ছেলেকে মারিনা, কাউকে হত্যা করে টুকরা টুকরা করিনা, কাউকে গাছে বেঁধে রাখি না, কাউকে ডুবিয়ে বা
চুবিয়ে মারিনা, মারিনা পিস্তলের গুলিতে বা এখানে একে ফরটি সেভেন ক্লাসিনকভ আনিনা, আনিনা কোন বোমা, সুতরাং ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটু বেশি প্রিয়, একটু বেশিই ভালো। এখানে কোন বিশ্বজিৎ নাই, এখানে কোন জেমস বন্ড নাই, এখানে কোন বাংলা ভাই নাই, নাই কোন বদি ভাই বা অদি ভাইদের আস্তানা।
ট্রল কারীদেরকে অনেকেই লাডি দিয়া পিডানের কথা বলে আর বাউনবাইরার শান্তির বাণী হইলো গিয়া, লাউডা করলেই দাউডার কাম, চিল্লাইয়া ঠিক কিনা কইয়া তেরে আসতে চায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
নামডা বদলাইয়া যাইবগা এটা মানা যায় না । তবে আমি বলি কি অইন্য জেলার কেউ যদি জিগায় বাড়ি কই? বুকটা ফুলায়া বাঘটার মতন কইবাইন বাউনবাইরা! আরো কইবেন আমরার বাড়ি বাউনবাইরা তোমরার বাড়ি কই? কারণ আপনার গর্বিত হওয়ার মতো অনেক কিছু আপনার বাপ দাদারা রেখে গেছে, যে জমিদারি আপনাদেরকে দিয়ে গিয়েছে আরও কয়েকযুগ বসিয়া বসিয়া শুইয়া ঘুমাইয়া খাইলেও তাহা ফুরাইবে না । ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য কিছু হবে না কারণ ইতিহাসের আরেক নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া! অন্য জেলার লোকদের কে বলি আর দয়া করে বাউনবাইরা নিয়ে এত ভাববেন না, বেশি ভাবলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রেমে পড়ে যাবেন! মনেরাখবেন, বাঘ বাঘ ই থাকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরুদ্ধে কথা বললে পায়ের তলে মাটি থাকবেনা! সব মাটি তিতাসের নদীতে ভাসাইয়া দিব ।দেখেন না বড় বড় পন্ডিতরা ক্ষমাপ্রার্থী আপনি সে তো কোন ছারপোকা।
মনডা চাইতাছে কি জানেন ? সবাইরে ধইরা আয়না সামনে বসাইয়া বলি একটা তাহেরী কী যথেষ্ঠ না ব্রাহ্মণবাড়িয়া কে পরিচিত করার জন্য ? শোনেন ভালো জিনিস বেশি লাগে না। আরো লাগবে তাহলে আবার চা ঢেলে দেই? সুতরাং আর কাইজ্যা না কইরা, না চেইত্যা বুদ্ধি দিয়া উত্তর দিতে হইব। সে বুদ্ধি আমাদের বাপ-দাদারা দিয়ে গেছেন, সেই বুদ্ধি দিলেই যথেষ্ট হইবো তাহাদের জন্য আমাদের বুদ্ধি গুলো সঞ্চিত রাখলাম আরো পরে কাজে লাগাইব বলিয়া।
শুনেন যত নোয়াখাইল্লা, বরিশাইল্লা চাটগাঁইয়া, সিলেইট্যা, উত্তরবঙ্গীয়া, দক্ষিণবঙ্গীয়া, ঢাকাইয়া, আধুনিক বিংলিইশ্যা, আমরাবাউনবাইরার মানু, বাউনবাইরার কতা কমু! কালহা দইরা হালি কারবারটা দেকতাছি, যে যেমনে পারতাছে এমনেঐ বাউনবাইরারে
বকতাছে, যের যা ইচ্ছা অইতাছে ইডাঐ কয়তাছে, কেরেঅ তোমরা কিতা হগলেঅই দুধে ধোয়া তুলশী পাতা? নাকিতা তোমরার জেলাত যারা বসবাস করে হগলতেঐ ফেরেস্তাক লেকতে কলম ভাংবো ৮টা হে অ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা লয়া ট্রল করে, ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে নিয়ে যারা ট্রল করতাছেন আফনেরার বাপ দাদারে জিগায়েন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার #ইতিহাস_ঐতিহ্য_শিক্ষা_সংস্কৃতি_সুনাম_খ্যাতি সম্পর্কে।
আমি গর্বিত আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ান। আপনি আমাকে অশিক্ষিত, মূর্খ, ঘাড়ত্যাড়া বলে গালি দিচ্ছেন, আপনি কি জানেন? আমাদের অখিলন্দ নন্দী, অতীন্দ্রৃমোহন রায়, গোপাল দেব, নৃপেন্দ্র রায়, উল্লাসকর দত্তের ঘাড়ত্যাড়ামিতে বৃটিশরা উপমহাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে যখন জিন্নাহ রাষ্ট্র ভাষা উর্দু বলে চাপিয়ে দিচ্ছিল তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ারই এক লোক ত্যাড়ামি করে বলেছিল “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”। উনি হলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। উনার এই ত্যাড়ামিকে আন্দোলনে রুপ দিয়ে ৫২ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন “অলি আহাদ”। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে পাকিস্তানকে চোখ রাঙ্গানি দেখান আরেক বীর। তিনিই “জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন”। তারপর ১৯৭১ এ ব্রাহ্মণবাড়িয়ানদের ঘাড়ত্যাড়ামি টের পেয়েছিল পাকিস্তানিরা। সামসুল হক(বীর বিক্রম), আবু সালেহ মোঃ নাসিম(বীর বিক্রম), আবু সালেক(বীর প্রতিক), আঃ রহমান(বীর প্রতীক), মোফাজ্জল হোসেন (বীর প্রতীক) সহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাড়ত্যাড়ামি টের পেয়েছিল হানাদারের দল। বৃটিশ উপনিবেশ থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ তৈরী হবার পিছনে আমাদের কতটুকু অবদান তা
নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। তারপর ১৯৮৪। প্রতিটি মহকুমাকে জেলা শহরে উন্নীত করা হল। বাদ পড়ল কেবল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। জেলার দাবিতেও আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পুরোনো রূপ দেখাতে হল। আন্দোলন করতে হল এবং একজন শহীদ হল। তিনিই শহীদ পলু। পরবর্তীতে ১৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ সালে
ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জেলা ঘোষণা করা হল। এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে জাতীয় প্রতিটি আন্দোলনে আমাদের ঘাড়ত্যামির অবদান রয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই ক্রিকেট খেলা দেখেন। যার ব্যাট প্রতিপক্ষের বলকে প্রতিনিয়ত চোখ রাঙ্গানি দিয়ে মাঠছাড়া করেছে। যার ঘাড়ত্যাড়া ব্যাটটি বাংলাদেশকে জিততে শিখিয়েছে। তিনিও কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ান। হ্যাঁ আমি আশরাফুলের কথাই বলছি। আব্দুর সাত্তার(নাসার বিজ্ঞানী), বিজ্ঞানী তাহের খান, বিজ্ঞানী জাকারিয়া কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ান। কবি আল মাহমুদ, আঃ কাদির, সুফিয়া কামালের কবিতাও পড়েছেন। ওরাও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলোকিত মানুষ। “তিতাস একটি নদীর নাম” উপনাসের স্রষ্টা অদৈত মল্লবর্মণ, তিতাস চৌধুরীও এ জেলার সন্তান। সাংস্কৃতিক জগতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অবস্থান আরো শক্ত। উস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ, আয়েত আলী খাঁ, আঃ হাদী, মনমোহন দত্ত কিংবা হাল আমলের আলমগীর, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, আঁখি আলমগীর, পড়শী, জাকিয়া বারী মম, সাজু খাদেমদের জন্যই
ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে দেশে সংস্কৃতি রাজধানী বলা হয়।
ইসলামী চিন্তাবিদ ফখরে বাঙ্গাল তাজুল ইসলাম (র), বড় হুজুর সিরাজুল ইসলাম র), মুফতি আমিনী (র) কিংবা হালের জুনায়েদ আল হাবীব, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবুল হাসনাত আমিনী, মনিরুজ্জামান সিরাজীরা যুগ যুগ ধরে ইসলামের প্রচার/খেদমত করে আসছে। রাজনীতিতেও আমাদের অবদান প্রশংসাযোগ্য। স্বাধীনতার পূর্বে নেতৃবৃন্দের কথাতো বললামই। এইতো গত মন্ত্রী পরিষদেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন
জন মন্ত্রী ছিল। এখনও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আমাদের একজন মন্ত্রী রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ম গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, মোটিভেশাল স্পিকার সোলাইমান সুখনসহ বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, অধ্যাপক অসংখ্য রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। দেশের একক জেলা হিসেবে ২য় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসীরা। দেশের এক তৃতীয়াংশ গ্যাস যোগান দেয় আমাদের তিতাস গ্যাস থেকে। এগুলোর সুবিধা প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে কিন্তু
আপনিও ভোগ করছেন। এবার ভাবুন তো আলাদা করে দিলে কার লাভ বেশি? এখন নিশ্চয়ই বলবেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ানরা ঝগড়া করে, এটাইতো? ভাই ঝগড়া কোন জেলায় নাই? দৈনিক পত্রিকাগুলো নিয়মিত পড়ে প্রতিদিন নোট করে রাখবেন কোথায় কোথায় ঝগড়া হচ্ছে। আর বছর শেষে মিলাবেন। দেখবেন সঠিক পরিসংখ্যান পেয়ে যাবেন কে সাধু আর ক তুলসী পাতা।
কত জ্ঞানী-গুণীজন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে, লেখা আছে সবই তার ইতিহাসের পাতে, বিস্তারিত বলবো না ভাই ইঙ্গিত দিব গানে,বাকিটুকু বুঝে নেবেন নিজ ক্ষমতা গুনে। এবার আমি আস্তে আস্তে আলোকপাত করবো আমাদের বাপ-দাদারা আমাদের জন্য কি রেখে গেছেন এবং আমরা দেশীয় মাধ্যম হিসেবে কি ব্যবহার করতে পারি কি
চর্চা করতে পারি ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিন কথা বলতে বলতে আমার এক বড় দাদা আমাকে বলল নাতি তুমি তো মেলা পড়াশোনা করেছ, আমি একখান হুলডুক বলি দেখতো ভাঙ্গাতে পারো নাকি?
"সর্প মরলো হেলাতে/হস্তি মরল গুমানে,
সাতশত শকুন মরল-বিষের কারণে
তাল পইরা শইল মরল/এক কথা থাক এমনে
, কইনছেন দেখি শাহাজাদী,
বিলাইডা ইন্দুরের গাতাত গেল কেমনে?"
আমি সেদিন পারিনাই এবং আজ বলতে চাই দেখি কোন জেলার কোন পণ্ডিত ব্যক্তি ইহা ভাঙ্গাইতে পারে? দাদা বলেছিল সব ডুবেই শামুক পাওয়া যায় না আরও বলেছিল তোমাদের এই কলিকালের পড়ালেখা চৈতের আন্ডা আর বৈশাখের ছাও এর মতই! আরো ভালো করে পড়ালেখা করো তবেই বলতে পারবা মানুষের রাও! সুতরাং দেহা দেহি বেহা নাচের মত নাচানাচি না করিয়া চেষ্টা করে দেখুন ইহা ভাঙ্গাইতে পারেন কিনা?
রাতের বেলা একথা বড় মাকে শোনাতেই সে বলল আচ্ছা তাহলে তোকে আমি কিছু সহজ করে বলি দেখ তো এগুলি ভাঙ্গাতে পারিস কিনা?
"আম তলাত ঝুমুর ঝুমুর, কাডল তলাত বিয়া
আইতাছে গো নন্দের জামাই, ছাতি মাতাত দিয়া।
আমি বললাম এটা তো কোন ধাঁধা হইল না, কোন উত্তর নেই, সে বলল আচ্ছা তাহলে তোকে আরেকটা শোনাই।
“টুকু টুকু কানাইয়া নৌকা দিমু বানাইয়া, যদি নৌকা ওরে বিয়া দিমু দূরে”
না ওটাও মন মত হইলো না তখন সে বলল আচ্ছা তাহলে শোন,
"আখির ভিতর পাখির বাসা, জলকে দিল ঢেউয়ে
দোপায়ার ওপর নি পায়া নাচে, চৌ পায়া নিলো কে?
সমুদ্রেতে বাঘের পা, ছাগলে খাইলো সাতশ না,
শোন কইন্যা বিবরণ, ইদুর হইয়া বিড়াল মারে, কোন কারণ?"
তারপর বড় মাকে বললাম এত জটিল ধাঁধাঁ আমার পক্ষে ভাঙ্গানো সম্ভব না এবং বললাম আমিও খেলার সঙ্গীদের সাথে স্কুলে একটি ছড়া শিখেছি, তোমাকে শোনাই আর ছড়াটি শুনাতে শুনাতে ঘুমিয়ে গেলাম ।
“আর স্কুলে যাইতাম না, বেতের বারি খাইতাম না, বেত গেছে ভাইঙ্গা, স্যারে দিছে কাইন্দা, ও স্যার কাইন্দেন না কাইন্দেন না, বাঘের রক্ত বইশের শিং, বাইদ্য বাজে তাধিন তুধিন।”
এসব কথা মাষ্টারমশাইকে বলতেই উনি যায় আরও দূর তার পাণ্ডিত্য জাহির করে আমাকে শুনাইলেন, গাজী কালু চম্পাবতীর পুথির কথা, বললেন সয়ফুল মুলক বদিউজ্জামান এর পুঁথির কথা আরো বলেন বহু ভাট কবিতার কথা আরো বলেন কবি গানের কথা তারপর তিনি আমাকে শুনিয়ে দিলেন।
"পন্ডিতে পন্ডিতে কথা, প্রতি কথায় ছন্দ,
মুরুক্ষে মুরুক্ষে কথা, প্রতি কোথায় দ্বন্দ্ব
যুবায় যুবায় কথা, কথায় কথায় হাসি
বুড়ায় বুড়ায় কথা, কথায় কথায় কাশি।
"আমিও সুযোগ পেয়ে শুনিয়ে দিলাম নানাজানের
শেখানো মলয়া সংগীত এর কিছু কথা।
"নানা মত নানা পথ বিভিন্ন স্বভাব
মানব হৃদয় ভরা অসংখ্য অভাব
সকলের মূলে সত্য নিত্য এক ভাব
যাহারে পাইলে হয় নিত্যানন্দ লাভ"
এসব কথা চাচ্চুর কাছে বলতেই চাচ্চু গরগর করে বলতে শুরু করল “আটটার সময় টিকেট কাটলাম গাড়ির লাগাল পাইলাম না, শাড়ি জোড়া কিন্যা রাখলাম মায়ের ডরে পাঠাই না। জুতা জোড়া কিন্যা রাখলাম বাপের ডরে পাঠাই না, তুমি কেন কও গো কন্যা, আমি ভালোবাসি না, দশটার সময় টিকেট কিনলাম বাসের দেখা পাইলাম না, তুমি কেনো কও গো কন্যা না আমি ভালোবাসি না। ”
একদিন পূর্ণিমা রাতে আমাদের ওঠানে বসল ধাধার আসর, শুনেছিলাম অনেকগুলো, মনে নেই, এর মধ্যে দু’একটি এখানে উপস্থাপন করছি যাতে অন্য জেলার জ্ঞানী গুনী ব্যক্তিরা সমাধান করতে পারে।
১. পানির তলে শীতল গাছ থাকতে লাগে বারো মাস (…)
২. আন্ধার ঘরে বান্দর নাচে, না না করলে আরো নাচে (…)
৩. উড়িতে ঝিকিমিকি পড়িতে ধান্দা, মস্তকের মইধ্যে তার লেঙ্গুর বান্দা (…)
৪. তিন তের দিয়া বার নয় দিয়া আইন্যা পূরণ করো আমার জামাই এই নাম পার কইরা দেও বাড়িত যাম (…)
৫. জন্মকালে সাদা যৌবনকালে লাল বৃদ্ধকালে কালো এই শিলুক ভাঙতে পারলে তোমরা অনেক ভালো (…)
সবশেষে ছোট একটি গল্প দিয়ে শেষ করতে চাই গল্পটি আমার বাবার বাবার মুখে শোনা, এক দেশে এক রাজা ছিল ।সে রাজার রাজদরবারে এক পন্ডিতের ছিল এক ছেলে । সে লেখাপড়া করতো না । ঘোরাফেরা করতো বেশি । পন্ডিত একদিন রাগ কইরা তার স্ত্রীকে কইলো “আজকে ওরে খাওন দিবা না, খাওনের পাতে দিবা ছালি” সে যখন খাইতে আইলো মায়ের মন তো, তাই একেবারে ছালি দিতে পারল না, ভাত তরকারি দিয়ে বাসনের কোনায় একটু ছালি দিয়ে দিল। ছেলে খেতে বসে পাতে ছালি দেখে মাকে বলল মা পাতে ছালি দিলা কেন? মা বলল, তোর বাপে এত বড় পন্ডিত, তুই পন্ডিতের ঘরে অইছস একটা কুপন্ডিত, তোর বাপে কইছে তর পাতে ভাতের বদলে ছালি দিতাম। ছেলেটা রাগ কইরা ভাতের বাসন ফেলে চলে গেল। কিছু দূর গিয়ে চিন্তা করল, অত বড় অপমান যখন করছে, আর দেশে থাকতাম না, চইলা যামু বিদেশে।
সে যুগে গাড়ি-ঘোড়া ছিলনা, ছেলেটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল- সময়টা ছিল অগ্রাহায়ণ মাসের শেষ । কিছুদূর যাওয়ার পর দেখল বিরাট এক প্রান্তরে একটা হাতি দক্ষিণ দিক থেকে আসছে, আরেকটা পানাশ সাপ আসছে উত্তর দিক থেকে, দুইটাই একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে, কেউ কাউরে রাস্তা দেয় না । পানাশ সাপ চিন্তা করতাছে আমার এত বিষ ! হাতিও ভাবতেছে আমি এত বড় একটা প্রাণী! সেও শূর তুলে চিৎকার করছে, সাতটা হাতিকে দিল একটা ছোবল । হাতিও লগে লগে বললে পরল সাপের ওপর । পন্ডিতের ছেলে এই দৃশ্যটা দেখে একটা ছড়া বানলো মনে মনে।
“সর্প মরলো হেলাতে/হস্তি মরল গুমানে” (অহংকার)
তার কিছুক্ষণ পর পন্ডিতের ছেলে দেখল অনেক শকুন উরে এসে হাতির উপর বসে হাতিটাকে ঠুকরে খাচ্ছে। যত গুলো শকুন ঠোকর দেয় ততগুলোই মারা যায়। সে গুনে দেখল সাতশ শকুন মারা গেল । তখন সে তার ছড়াটা বানালো। “সাতশত শকুন মরল-বিষের কারণে” তারপর সে আবার পথ চলতে শুরু করল। যেতে যেতে বেলা প্রায় দুপুর হয়ে এলো। সে ভাবল একটু পানি খাওয়া দরকার । সে দূরে একটা ছাড়া পুকুর দেখতে পেল পুকুরের পাড়ে একটা তালগাছ। পুকুরে গিয়ে দেখল পানি খুব ফন বা পরিষ্কার সে পানি খেয়ে তাল গাছের নিচে একটু বসল। এমন সময় একটা শইল মাছ পানিতে ভেসে উঠলো । হঠাৎ একটা তাল পড়ে শইল মাছটা মারা গেল,
তখন সে তার ছড়াটা একটা লাইন বাড়াইলো। “তাল পইরা শইল মরল/এক কথা থাক এমনে” এরপর আবার সে মাঠের পথ ধরে হাঁটা শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে চেয়ে দেখল নারা খেতে বোমা ইন্দুরের বাসা। একটা বিড়াল ইন্দুর ধরতে গেছে। বিড়ালটার মুখ ছিল একটা গর্তের দিকে আর বিড়ালের লেঙ্গুরটা ছিল অন্য একটা ইঁদুরের গর্তের ভিতর। সব ইন্দুর মিলে যুক্তি করছে আজকা বিড়ালটাকে একটা উচিত শিক্ষা দেবে। পেছন থেকে কয়েকটা বোমা ইন্দুর বিড়ালের লেজ কামড়ে ধরে বিড়ালটাকে টেনে নিয়ে গেল এক্কেবারে গর্তের ভেতরে তখন সে তার ছড়া বাঁধল “বিলাইডা ইন্দুরের গাতাত গেল কেমনে?”
এরপর সে যেতে যেতে পাশের রাজ্যে গিয়ে হাজির হল, সেখানে গিয়ে সে জানতে পারল, ওই রাজ্যের শাহজাদী চ্যালেঞ্জ করছে তার সাথে যে শিলক দিয়ে পারবে তাকেই সে বিয়ে করবে। আর যে হারবে সে শাহজাদীর গোলাম হয়ে থাকবে।
তখন পন্ডিতের ছেলে ভাবলো -আমার তো এমনিতেই কোন ঠাঁই নাই- হয় শাহজাদীর শিলক ভাঙ্গাইয়া শাহজাদী কে বিয়ে করবে, না হয় তার গোলামী করবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্ধ্যেবেলা সে রাজবাড়ীর দরজায় দিল একটা বাড়ি, রাজ বাড়ির লোকজন এসে তার উদ্দেশ্য জানতে চাইল, সে বলল আমি শাহজাদীর সাথে শিলক করতে আসছি। সে তার পরিচয় দিলো একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে।
রাজবাড়ির লোকজন তারে নিয়া গোসল করাইয়া রাজকীয় পোশাক পরাইয়া হাজির করল শিলকের আসরে। আসরে রাজা, উজির, নাজির সবাই বসলো তখন শাহজাদী তারে কইলো, আপনি শিলক বলেন। সে চিন্তা করল আমার তো একটাই শিলক, বলে ফেলি যা হওয়ার হবে, আল্লাহর নাম নিয়ে শিলক বলা শুরু করলো। “সর্প মরলো হেলাতে/হস্তি মরল গুমানে, সাতশত শকুন মরল-বিষের কারণে, তাল পইরা শইল মরল/এক কথা থাক এমনে, কইনছেন দেখি শাহাজাদী বিলাইডা ইন্দুরের গাতাত গেল কেমনে?”
শাহজাদী সারারাত চেষ্টা কইরা আর ভাঙতে পারল না, সকালে এসে হার মানল। তখন সে শাহজাদীর কাছে নিজের পরিচয় দিল, সে পাশের রাজ্যের রাজবাড়ীর পন্ডিতের ছেলে, রাজ পন্ডিতের ছেলে। এই কথা শুনে রাজা মহা খুশি, রাজা তখন সভাসদ কে বলল, তাইতো বলি পণ্ডিতের বাড়ির বিড়ালও আধা অক্ষর জানে! আয়োজন করো মহা ধুমধামে বিয়ে দিয়ে দাও।
সুতরাং, বাউনবাইরার বিড়ালের সাথে ও যাতে কেউ লাগতে না আসে, ভালো থাকুক বাউনবাইরার মানুরা ভালো থাকুক সারা বাংলাদেশ। আরেকটা কথা বলে রাখি যে সব গর্বিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাই বেরাদর থেকে, তাদের ওয়াল থেকে কিছু আইডিয়া, কিছু লিখা কপি পেষ্ট করেছি, অন্যজেলার ভাইদেরকে উচিত জবাব দেওয়ার জন্য ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। বাউনবাইরার মানুদেরকেও মনে রাখতে হবে এখানে এখন আগের মত ভাল নেই, নেই সুর আর জ্ঞানের পিপাসা, নেই বিজ্ঞানের অগ্রগতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বড় দ্রুতই ক্রমাগত পেছনের দিকে ছুটে চলেছে, যারা আহত হয় আসলে তাদেরকে বলছি, আমরা কি দায় এড়াতে পারি?
লেখকঃ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ।
মতামতের জন্য লেখক দায়বদ্ধ থাকিবে।