সব
facebook apsnews24.com
মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব - APSNews24.Com

মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব

মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব

ভাষা আল্লাহর দান। মানুষের সৃষ্টির পর সর্বপ্রথম মনের ভাব প্রকাশের জন্য আল্লাহ তাকে ভাষা শিক্ষা দেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে শিখিয়েছেন কথা বলার ভঙ্গি।’ (সুরা রহমান, আয়াত : ৩-৪)।

আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তাকে ভাষা শিখিয়ে দেন। এবং ভাষা ও বুদ্ধিমত্তার কারণেই তাকে ফেরেশতাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। সেই ঘটনার অবতারণা করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘এবং তিনি আদম (আ.)-কে সব বস্তুর নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন এবং বললেন, এ বস্তুগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বলল, আপনি পবিত্র মহান, আপনি আমাদের যা শিক্ষা দিয়েছেন, তাছাড়া আমাদের কোনো জ্ঞানই নেই, নিশ্চয়ই আপনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। তিনি নির্দেশ করলেন, ‘হে আদম, এ জিনিসগুলোর নাম তাদের জানিয়ে দাও’। যখন সে এসব নাম তাদের বলে দিল, তখন তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদের বলিনি নভোমন্ডল ও ভূম-লের অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে আমি নিশ্চিতভাবে অবহিত এবং তোমরা যা প্রকাশ করো ও গোপন করো, আমি তাও অবগত?’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩১-৩৩)

পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের প্রতিটি জাতির মুখে আল্লাহ আলাদা ভাষা দান করেছেন। এই জাতিবৈচিত্র্য ও ভাষাভিন্নতা আল্লাহর অপূর্ব নিদর্শন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তার অন্যতম নিদর্শন হলো আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২২)

আমরা গর্বিত বাঙালি। মাতৃভাষা বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। এই ভাষার স্বীকৃতি আদায়ে আমরা প্রাণ দিতেও কুণ্ঠিত হইনি। তাই বাংলার প্রতি আমাদের রয়েছে অসীম মমত্ব। এই ভাষার উৎকর্ষ-উন্নয়নে আমাদের কাজ করতে হবে নিরন্তর।

ইসলামের দৃষ্টিকোণে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মাতৃভাষার চর্চা ও বিকাশে ইসলামের রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। কোরআন-হাদিসের মহান বাণী প্রচারের জন্য প্রত্যেক দাঈর জন্য মাতৃভাষায় দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক। পৃথিবীতে যত নবী-রাসুল এসেছেন, সবাই নিজের মাতৃভাষায় আল্লাহর আদেশ নিয়ে এসেছেন। তাই সর্বজনীন দাওয়াতের কাজে নিজের ভাষায় বিশুদ্ধতা অর্জনের বিকল্প নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি রাসুলদের মাতৃভাষা দিয়েই প্রেরণ করেছি, যাতে তারা জাতিকে সুষ্ঠুভাবে বোঝাতে পারে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪)

নবী মুসা (আ.)-এর মুখে জড়তা ছিল। তার বড় ভাই হারুন (আ.) ছিলেন তার চেয়ে বেশি বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল ভাষার অধিকারী। মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে আবেদন করে বলেছিলেন, ‘আর আমার ভাই হারুন আমার চেয়ে অধিক সাবলীল ও বিশুদ্ধভাষী। তাই তাকে আমার সহকারী হিসেবে আমার সঙ্গে নবুয়তের দায়িত্বপালনে প্রেরণ করুন। সে আমাকে সমর্থন করবে। আমি আশঙ্কা করছি, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রত্যাখ্যান করবে।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৩৪)

প্রিয়নবী (সা.)-এর সর্বশ্রেষ্ঠ মোজেজা পবিত্র কোরআন। এই গ্রন্থ আরবের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। ব্যাকরণ, ভাষাতত্ত্ব ও অলংকার বিবেচনায় এ গ্রন্থ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আরবি গ্রন্থ। পবিত্র কোরআনের অসাধারণ ভাষাশৈলীতে মুগ্ধ-বিস্মিত পৃথিবীর কবি-সাহিত্যিক ও ভাষাবিজ্ঞানীরা।

প্রিয়নবী (সা.)-এর মুখের ভাষাও ছিল বিশুদ্ধ ও মানোত্তীর্ণ। দৈনন্দিন জীবনে তিনি বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন। অশুদ্ধ ভাষা সবসময় এড়িয়ে চলতেন। হাদিসের গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হাজার হাজার হাদিস তার জ¦লন্ত প্রমাণ। জাল হাদিস যাচাইয়ের একটি স্বতন্ত্র মানদ-ই হলো হাদিসের ভাষ্যে ভাষাগত ভুল থাকা।

রাসুল (সা.) মদিনা রাষ্ট্রের সব কাজই নিজের মাতৃভাষা আরবিতেই সম্পাদন করতেন। খোলাফায়ে রাশিদিন ও পরবর্তী মুসলিম শাসকরাও এই নীতি অনুসরণ করেন। সাহাবায়ে কেরাম দাওয়াত ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের উদ্দেশে পৃথিবীর যেখানেই গিয়েছেন, সর্বপ্রথম সেই অঞ্চলের ভাষা আয়ত্ত করেছেন এবং তাদের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। বাংলা ভাষায় অসংখ্য আরবি শব্দের প্রবেশ এবং আরব বংশোদ্ভূত বাঙালিরা তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

কথা বলার সময় সুন্দর শব্দচয়নও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে শব্দচয়নের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। যেমন অর্থবিকৃতির আশঙ্কা থাকায় মুমিনদের নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা ‘রায়িনা’ বলো না, ‘উনজুরনা’ বলো এবং শুনতে থাকো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১০৪)

সাহাবিদের দৈনন্দিন কাজকর্মেও রাসুল (সা.) ভাষার বিশুদ্ধতা, উপযুক্ত শব্দচয়ন ইত্যাদির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। একবার জনৈক সাহাবি রাসুল সা.-এর কাছে এলেন। তিনি বাইরে থেকে সালাম দিয়ে বললেন, ‘আ-আলিজু?’ প্রবেশ করা অর্থে এই শব্দের ব্যবহার আরবি ভাষায় আছে, কিন্তু অনুমতি কিংবা প্রার্থনার ক্ষেত্রে তা প্রমিত শব্দ নয়। প্রমিত শব্দ হলো ‘আ-আদখুলু?’। নবী (সা.) তাকে বললেন, তুমি ‘আ-আদখুলু’ বলো। রাসুল (সা.) এভাবে তার শব্দপ্রয়োগ ঠিক করেছেন।

বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থ সহিহ মুসলিমে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায়ই আছে ‘কিতাবুল আলফাজ’ তথা ‘শব্দচয়ন অধ্যায়’। সেখানে বিভিন্ন হাদিসে রাসুল (সা.)-এর শব্দ প্রয়োগের নির্দেশনা বিবৃত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা এশার নামাজকে ‘আতামা’ বলো না, বরং ‘এশা’ বলো।’ অন্য হাদিসে ইরশাদ করেছেন, তোমরা ‘আঙুরকে’ ‘করম’ বলো না, ‘ইনাব’ বলো।’

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) নিজের আদরের কন্যাকে বিশুদ্ধ ভাষা শেখার প্রতি বেশ গুরুত্বারোপ করেছিলেন। ভুল হলে তাকেও মৃদু শাস্তিও প্রদান করতেন। এসব কারণেই পৃথিবীর সব প্রান্তেরই মুসলিম মননে মাতৃভাষার প্রতি অসাধারণ প্রেম আমরা দেখতে পাই।

তাই বাংলার স্বকীয়তা রক্ষা, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য মুসলমানদের সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। রাষ্ট্রের সর্বত্র মাতৃভাষার বিশুদ্ধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মানবতার কল্যাণে ইসলামের মহান শিক্ষা বাংলায় রূপান্তর করে ছড়িয়ে দিতে হবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। এভাবেই মুসলমানদের ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

আপনার মতামত লিখুন :

আপিল বিভাগে নিয়োগ পাচ্ছেন তিনজন বিচারপতি

আপিল বিভাগে নিয়োগ পাচ্ছেন তিনজন বিচারপতি

বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা

বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা

থানচিতে পুলিশ সন্ত্রাসী গোলাগুলি, থমথমে পরিস্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি

থানচিতে পুলিশ সন্ত্রাসী গোলাগুলি, থমথমে পরিস্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি

ফের বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম, স্বস্তি নেই মাছ-মাংসে

ফের বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম, স্বস্তি নেই মাছ-মাংসে

স্বাধীনতা দিবসে বীর শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

স্বাধীনতা দিবসে বীর শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

দেশে আইনের শাসন না থাকায় নিরপরাধীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে- মির্জা ফখরুল

দেশে আইনের শাসন না থাকায় নিরপরাধীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে- মির্জা ফখরুল

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj