নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নিয়ম উপেক্ষা করে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নারীর সাথে হলমার্ক কেলেঙ্কারির সাজাপ্রাপ্ত বন্দি তুষারের সময় কাটানোর ঘটনায় কারাগারের জড়িতরা বিধি অনুযায়ী শাস্তি পাবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আজ শনিবার দেশের একটি জাতীয় গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাতকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘কারাবন্দি অবস্থায় নারীসঙ্গের ঘটনা জঘন্যতম অপরাধ। কারাগারের ভেতরে এ ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। বিধি অনুযায়ী শাস্তি পাবে অভিযুক্তরা। যেই এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকবে, বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এরইমধ্যে অভিযুক্ত তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এদিকে এ ঘটনায় শনিবার (২৩ জানুয়ারি) কারা অধিদফতরে একটি বেসরকারি চ্যানেলকে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন জানান, নিয়ম ভেঙে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নারীর সঙ্গে হলমার্ক কেলেঙ্কারির সাজাপ্রাপ্ত বন্দি তুষারের সময় কাটানোর ঘটনায় কারাগারের জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে প্রত্যাহার করা হবে জেল সুপারকে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে বিষয়টি লক্ষ্য রেখে বাড়ানো হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এ ঘটনায় এরিমধ্যে ডেপুটি জেল সুপার মোহাম্মদ সাকলাইন, সার্জেন্ট আব্দুল বারী ও সহকারী প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত ৬ জানুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের পার্ট-১ এ আটক হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতা মালিক তানভীরের ভায়রা কোম্পানির জিএম তুষারের সাথে এক নারী সাক্ষাৎ করেন। ডেপুটি জেলার সাকলাইন সাক্ষাতের অনুমতির জন্য ১২টা ২২ মিনিটে সুপারের রুমে প্রবেশ করেন। সুপারের রুম থেকে অনুমতি নিয়ে ১২টা ৪০ মিনিটে বের হন সাকলাইন। ১২টা ৫৬ মিনিটে ওই নারী কারাগারে প্রবেশ করেন।
সিসিটিভিতে দেখা যায়, ডেপুটি জেলার সাকলাইন ১২টা ৫৭ মিনিটে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে ১টা ০৪ মিনিটে তুষারকে সাথে নিয়ে ওই নারীর সাথে সাক্ষাৎ করতে একটি কক্ষে নেন। ১টা ১৫ মিনিটে জেল সুপার কারাগার থেকে বের হয়ে যান। এরপর তুষার একটি কক্ষে প্রায় ৪৬ মিনিট সময় কাটায় ওই নারীর সাথে।
এ ঘটনায় কারাগারের জেল সুপার রত্না রায়ের সাথে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে ডেপুটি জেলার সাকলাইন ক্ষিপ্ত হয়ে জানান, সুপার স্যারের অনুমতিতেই সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়।
তিনি বলেন, আমার কি ক্ষমতা আছে, জেলের ভেতর থেকে আসামি নিয়ে আসবো। গেট অর্ডার, যৌথ বাহিনী, হাবিলদার, সুবেদার আছে। আমি একাই আসামি নিয়ে আসলাম। এটা কি সম্ভব!
ভিডিও ফুটেজে তাকেই আসামি নিয়ে আসতে দেখা যাওয়ার বিষয়টি তুললে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিই তো নিয়ে এসেছি। এটা তো অস্বীকার করছি না। আমাকে বলেছে তাই আমি আনতে গেছি। আমাকে না বললে তো আর আমি আনতে যেতাম না।’
এ ঘটনায় গাজীপুর জেলা প্রশাসকের অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত টিম কাজ করছে। তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে সাক্ষাতের বিষয়টির সত্যতা পেয়েছে বলে জানান গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, দেশের ইতিহাসে সবচে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি কারণে হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ও তার ভায়রা প্রতিষ্ঠানের জিএম তুষার ২০১২ সাল থেকে কারাগারে রয়েছেন।