জামালপুর জেলার একমাত্র আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমা (৭৩) আর নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের দিঘলাকোনা গ্রামে নিজ বাড়িতে পরলোকগমন করেন তিনি। পাকস্থলীতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পেরে অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমা তাঁর সহধর্মিনী মিলন দাংগো ও একমাত্র ছেলে বকশীগঞ্জের সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জয় দাংগোসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। দরিদ্র হলেও তিনি ছিলেন পরোপকারী ও সাদামনের মানুষ। তাঁর মৃত্যুতে গারো আদিবাসীসহ পাহাড়ি বাঙালি পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।
জয় দাংগো কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর বাবা এবেন্দ্র সাংমা মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। জামালপুর জেলায় তিনিই ছিলেন একমাত্র আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মাত্র ১৯ বছর বয়সে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে টানা নয়মাস যুদ্ধের রণাঙ্গণে সক্রিয় ছিলেন তিনি। তিনি প্রথমে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় এবং পরে জামালপুরের ঐতিহাসিক কামালপুরে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশের জন্য অবদান রাখেন। সামান্য কিছু জমি চাষাবাদ ও মুক্তিযোদ্ধাভাতায় তাদের সংসার চালানোই দায় ছিল। দীর্ঘদিন ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন তিনি।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবর মাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তার পাকস্থলিতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে ব্যয়বহুল চিকিৎসা শুরু করতে না পেরে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
বিষয়টি জানতে পেরে বকশীগঞ্জের ইউএনও মুন মুন জাহান লিজা তাঁর পাশে দাঁড়ান। চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা অনুদান এবং আরো সহায়তার আশ্বাস দেন। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার বিধায় আরো টাকার জন্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিয়েও কোনো আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়নি। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকেও ৫০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ইউএনও। সেই টাকাও পাওয়া যায়নি। ফলে জরুরি উন্নত চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হল বীর এই মুক্তিযোদ্ধাকে।
জয় দাংগো আরো জানান, বকশীগঞ্জের ইউএনও মুন মুন জাহান লিজা নিজে উপস্থিত থেকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় দিঘলাকোনা গ্রামের নিজ বাড়িতে তাঁর বাবাকে গার্ড অব অনার দেওয়ার কর্মসূচি দিয়েছেন। গার্ড অব অনার শেষে খ্রিস্টান ধর্মীয় রীতি অনুসারে পারিবারিক সমাধিতে তাকে সমাহিত করা হবে।