সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার পরও কমছে না ধর্ষণ। ২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৭৪ নারী। মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলছেন, শুধু আইন নয়, প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং বদলাতে হবে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি।
আর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ হেলাল বলছেন, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে মূল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে সহিংসতা রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই ঘটছে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ। গত ৭ জানুয়ারি ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড কলেজের শিক্ষার্থী আনুশকাকে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে ২০২০ সালে ৩ হাজার ৪৪০ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ১০৭৪ জন ধর্ষণ, ২৩৬ জন গণ-ধর্ষণ ও ৩৩ জন ধর্ষণের পর হত্যা ও ৩ জন ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যাসহ মোট ১৩৪৬ জন নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বিধান করার পরও কমছে না নারীর প্রতি এমন সহিংসতা। মানবাধিকার নেত্রীরা বলছেন, মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ঘোষণা হলেও এটা কার্যকরের হার খুবই কম।
অ্যাডভোকেট এলিনা খান আরও বলেন, সাজা বাড়িয়ে এরকম অপরাধ শেষ করতে পারবো না। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের মাঝে নৈতিকতা আর মূলবোধ না আসবে ততদিন এমন অপরাধ বন্ধ করা যাবে না।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিকভাবে নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সিটিটিউট সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সামাজিক কাঠামোতে যত বেশি আমরা নারীকে সম্মান দেবো আর তার মতামতের মূল্য দেবো। তখনি এমন অপরাধ কমে আসবে। এছাড়াও আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক পরিবর্তন হওয়া দরকার। পরিবারের ভেতর যখন দেখে নারীকে সম্মান দেয়া হচ্ছে না, তখন প্রাপ্ত বয়সে তারাও নারীকে মূল্য দেয় না। আমাদেরকে বিজ্ঞানসম্মত যৌন শিক্ষা কিছুটা হলেও চালু করতে হবে। না হলে কিন্তু এরকম যৌন অপরাধ চলতেই থাকবে।
শিশু বয়স থেকে নারীর প্রতি সম্মান ও মূল্যবোধের ভিত তৈরি করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের ভূমিকা জরুরি। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানীর মতো সামাজিক ব্যাধি ও সহিংসতা থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতা ও সামাজিক সংহতি প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।