সব
facebook apsnews24.com
লড়ছেন ব্যবসায়ীরা - APSNews24.Com

লড়ছেন ব্যবসায়ীরা

লড়ছেন ব্যবসায়ীরা

করোনায় বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন ও উৎপাদনশীল শিল্প খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহামারির শুরুর দিকে বিশ্বজুড়ে লকডাউনে কাঁচামাল সংগ্রহ ও রপ্তানি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন ও বিক্রি স্বাভাবিক না হওয়ায় ভারী শিল্পে বেড়েই চলেছে ব্যাংকঋণের বোঝা। অন্যদিকে ইউরোপ-আমেরিকার মতো প্রধান বাজারগুলোতে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ফের হোঁচট খেয়েছে রপ্তানি। এমন সংকটকালেও দেশের ‘অদম্য’ ব্যবসায়ীরা লড়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে চালু রেখেছেন শিল্পের চাকা। ‘বিশের’ বেদনা কাটিয়ে একুশে ঘুরে দাঁড়াতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়ছেন তাঁরা। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘জয়ী’ হতে ব্যবসায়ীরা চান আরেকটু সহায়তা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে করোনার ধকল এখনো কাটেনি। শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে কলকারখানা চালু রাখলেও ক্রেতাদের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমেছে। এ অবস্থায় ঋণ পরিশোধে সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, অতীতেও ক্ষেত্রবিশেষে ঋণ পরিশোধে দীর্ঘ সময় দেওয়া হয়েছিল। অনেক উদ্যোক্তাই এই সুবিধা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ছোট আকারের কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করেছেন। ফলে ঋণ পরিশোধে সময়সীমা বাড়িয়ে দিলে উদ্যোক্তারা যেমন বাঁচবেন, তেমনি ব্যাংকও আটকা পড়বে না।

দেশীয় উৎপাদনমুখী শিল্প খাত গভীর অনিশ্চয়তা নিমজ্জিত বলে জানান রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান। তিনি গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমন কোনো খাত নেই যেখানে করোনার প্রভাব পড়েনি। করোনাকালে প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের লোকসান দিয়েছে। সরকার প্রণোদনার মাধ্যমে ঋণ দিয়ে তা কিছুটা কাটানোর চেষ্টা করেছে, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু এই ঋণের টাকা শোধ দিতে হলে আয় করতে হবে। মানুষের চলাফেরা স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে বিক্রি এখনো স্বাভাবিক হচ্ছে না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ এসে গেল। এ অবস্থায় আরো সহায়তা ছাড়া টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়বে।’ গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরো সাপোর্ট দিয়ে এটাকে আগে জাগিয়ে তোলার পরামর্শ দেন এই উদ্যোক্তা।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএজানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পোশাকের খুচরা বিক্রি কমে যাওয়াসহ নজিরবিহীন দরপতন হয়েছে, যা মোকাবেলায় নতুন করে প্রণোদনা এবং পুরনো প্যাকেজের মেয়াদ বাড়ানো দরকার। আগামী দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই আবারও প্রণোদনা প্রয়োজন বলে দাবি উদ্যোক্তাদের।

দেশবাসীর উদ্দেশে বৃহস্পতিবার পাঠানো এক খোলা চিঠিতে তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ‘শিল্প আজ সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ, এমনকি প্রস্থান নীতি না থাকায় পশ্চিমা ক্রেতাদের দেউলিয়াত্ব বরণ, নির্দয়ভাবে ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে শিল্প চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কারখানাগুলো টালমাটাল পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাণান্ত সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে।’ খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘পোশাকশিল্পের আজকের বাস্তবতা হলো—বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০২১ সালের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই নির্দেশনা এমন সময়ে দেওয়া হলো, যখন কিনা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ছয় মাসের জন্য স্থগিতকরণ অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্ততপক্ষে আরো অতিরিক্ত এক বছর সম্প্রসারিত করা না হলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের বার্ষিক রপ্তানিতে ১৬.৯৪ শতাংশ পতন ঘটেছে। ২০২০ সালের জুনের পর থেকে ওভেন পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। এ মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৮.০৭ শতাংশ। উল্লিখিত মাসে নিটওয়্যার রপ্তানি ঋণাত্মক ০.৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে।

ড. রুবানা হক বলেন, ‘সমগ্র বিশ্ব দেখেছে, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের প্রভাব কী এবং খুচরা বিক্রয় ও চাহিদার ওপর সেগুলো কী প্রভাব রেখেছে। বিশ্ব দেখেছে স্মরণকালের সবচেয়ে মন্দার কবলে পড়ে ক্রিসমাস সেল। এসবের প্রভাবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় আমরা বিপর্যস্ত। যেহেতু ভ্যাকসিন প্রাপ্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি এবং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাজ করছে, তাই আমাদের আশঙ্কা, রপ্তানির এই নিম্নমুখী প্রবণতা সম্ভবত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বজায় থাকবে।’

ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি রপ্তানি খাত। সেখানে গত বছর ১৭ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রতিবছর খরচ ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। আমরা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ার কেন্দ্রিক পোশাকের ব্যবসা হারিয়েছি। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় আছে ব্যবসায়ী সমাজ।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তা আমাদের জন্য বড় আশীর্বাদ। আমরা আশা করেছিলাম, হয়তো দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারব। কিন্তু সেই ঘুরে দাঁড়ানো এখনো যায়নি। এখনো আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। তাই প্রণোদনার ঋণের অর্থ জানুয়ারি থেকে ফেরত দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। অন্তত জুলাই পর্যন্ত এটা বাড়ানো দরকার। যেসব খাত সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়বে সেগুলোকে আবার সহায়তা দিতে হবে।’

অর্থনতীবিদরাও মনে করছেন, বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে শতভাগ পুনরুদ্ধার করতে হলে প্রয়োজন ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি, যা এখনো ফিরে আসেনি। তাই অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকঋণ শোধ ও অন্যান্য নীতি সহায়তায় আরো ছাড় দেওয়া দরকার।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি খাতকে গতিশীল করতে যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, বড় ব্যবসায়ীরা তা ভালোই ব্যবহার করতে পেরেছেন। কিন্তু ছোট উদ্যোক্তাদেরও এই সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসরকারি খাত আরেকটি ধাক্কা খেতে পারে। সে কারণে আবার তাদের প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া যেতে পারে। সরকার যেসব সুবিধা দিয়েছিল, সেগুলোও অব্যাহত রাখা যেতে পারে। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে সরকারি খাতে যদি প্রাণচাঞ্চল্য না থাকে তাহলে বেসরকারি খাতও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। সে জন্য মহামারিকালে অর্থনীতি স্বাভাবিক ধারায় ফেরত আনতে সরকারি ব্যয় ও বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়াতে হবে। এতে কর্মসংস্থান হবে, মানুষের আয় বাড়বে। সেটার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যক্তি খাতেও।

অর্থনীতির ঝুঁকি প্রশমন করতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া এই মুহূর্তে জরুরি বলে মনে করেন ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই সৃষ্টি হয়েছে অর্থনীতির ঝুঁকি। ভ্যাকসিন যেহেতু সরবরাহ শুরু হয়েছে, এটা দ্রুত এনে সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে। ভ্যাকসিন যদি ৮০-৯০ শতাংশ মানুষ প্রথম ধাপে না পায় তাহলে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েই যাবে। তাই ভ্যাকসিনের সঠিক ও ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।

করোনার প্রথম ধাক্কায় প্রণোদনা দেওয়া হলেও তার প্রকৃত সুফল পাননি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও বিতরণ করা হয়েছে সামান্য। সবচেয়ে কম বিতরণ করা হয় এসএমই ও কৃষি খাতে। অথচ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বাইরে এ দুটি খাতেই সবচেয়ে বেশি মানুষের কর্মসংস্থান। তাই এসএমই ও কৃষির মতো খাতে তা বাস্তবায়নে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার দাবি উঠেছে। ২০১৯ সালের শিল্প খাতের জরিপ বলছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের অবদান জিডিপির ৪.৮৫ শতাংশ। আর কর্মসংস্থানের সাড়ে ৩১ শতাংশ এ খাতে। তাই এ শিল্পে বিশেষ মনোযোগের পরামর্শ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিল্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও নতুন ব্যবসায়ীরা এই প্রণোদনার সুফল ভোগ করতে পারেননি। এ জন্য ব্যাংকিং জটিলতাকে সহজ করাসহ সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

আপনার মতামত লিখুন :

আপিল বিভাগে নিয়োগ পাচ্ছেন তিনজন বিচারপতি

আপিল বিভাগে নিয়োগ পাচ্ছেন তিনজন বিচারপতি

বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা

বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা

থানচিতে পুলিশ সন্ত্রাসী গোলাগুলি, থমথমে পরিস্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি

থানচিতে পুলিশ সন্ত্রাসী গোলাগুলি, থমথমে পরিস্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি

ফের বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম, স্বস্তি নেই মাছ-মাংসে

ফের বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম, স্বস্তি নেই মাছ-মাংসে

স্বাধীনতা দিবসে বীর শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

স্বাধীনতা দিবসে বীর শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

দেশে আইনের শাসন না থাকায় নিরপরাধীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে- মির্জা ফখরুল

দেশে আইনের শাসন না থাকায় নিরপরাধীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে- মির্জা ফখরুল

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj