কুরিয়ার সার্ভিসে পার্সেলের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য পাচার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে সরকার। এ জন্য সরকারি বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসে পার্সেল বুকিং দিতে গেলে প্রেরকের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) কপি এবং ছবি তুলে সংরক্ষণে রাখতে পারবে সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। গতকাল রবিবার সচিবালয়ে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় মাদকের চালান শনাক্ত করতে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে ডগ স্কোয়াড রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে (ডিএনসি) একটি প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য অভিযান চালাতে ডিএনসির সিপাহি, এসআই ও ইন্সপেক্টরদের অস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারেও সভায় আলোচনা হয়। সরকারি চাকরিতে প্রবেশ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, পরিবহন শ্রমিক এবং স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ডোপ টেস্ট কার্যকর হচ্ছে। সভায় জানানো হয়, এ ব্যাপারে বিধিমালা তৈরির কাজ চলছে। সভাসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরাসহ ১৭ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব-প্রতিনিধি, সরকার মনোনীত সদস্য ডা. অরুপ রতন চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম ও ডা. মোহিত কামাল।
আগে মাদক নিয়ন্ত্রণ জাতীয় বোর্ড থাকলেও ২০১৮ সালের নতুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৬৩ (ক) নম্বর ধারায় জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। গতকালই প্রথমবারের মতো ভার্চুয়ালি সভায় মিলিত হয় কমিটি।
সভা শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিপাহি, এসআই ও ইন্সপেক্টরদের মাদক নির্মূলে সহযোগিতার জন্য অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব একটি কমিটি করেন। কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কুরিয়ার সার্ভিসে মালামাল পরিবহনের সময় প্রেরকের এনআইডি কপি ও ছবি সংরক্ষণ করতে পারবে সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। দেশের বন্দরগুলোতে মাদক শনাক্তকরণের জন্য ডগ স্কোয়াড মোতায়েনের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি ডগ স্কোয়াডের প্রকল্প তৈরি করবেন। পরবর্তী সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরে ডগ স্কোয়াড দেওয়া হবে। মাদক কারবারিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য এবং তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) কার্যালয়ে মাদকদ্রব্যের একজন কর্মকর্তা অবস্থান করবেন। মাদকের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাদকের কুফল প্রচারের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হবে। টিভি ও বেতারে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। এ ছাড়া পাঠ্যপুস্তকে মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করারও সিদ্ধান্ত হয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ইয়াবা এবং অপ্রচলিত মাদক পাচার ধরা পড়ে। এ কারণে কুরিয়ারের পার্সেলের মাধ্যমে মাদকপাচার ঠেকাতে প্রেরক শনাক্ত করা জরুরি। তাই বুকিংয়ে ছবি ও এনআইডির ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি তল্লাশির জন্য ডগ স্কোয়াড গঠনে গুরুত্ব দেওয়া হয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে ডিএনসির কর্মকর্তাদের হাতে অস্ত্র না থাকায় অভিযানে সমস্যা হচ্ছে বলে আলোচনা হয়।