নভেল করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ঠিক তখনই বাংলাদেশের গবেষকেরা বলছেন, এটা নতুন নয়। দু’মাস আগেই তারা এক গবেষণায় এর সন্ধান পেয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তারপরও তারা কেন নীরব ছিলেন।
ভয়েস আমেরিকা জানায়, বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে নতুন স্ট্রেইন নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে, এখন তারা বলছে, বাংলাদেশে আগে থেকেই ছিল। তারা কেন জাতীয় কমিটিকে এ তথ্য দেয়নি।’
যুক্তরাজ্যে নতুন স্ট্রেইন হানা দিয়েছে এমন খবরে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এর জেরে ৪০টি দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, নতুন স্ট্রেইন এতটাই ছোঁয়াচে যা কিনা চলমান করোনা থেকে ৭০ ভাগ দ্রুত গতিতে ছড়ায়। বাংলাদেশেও আতঙ্ক রয়েছে। কারণ লন্ডনের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ এখনো বহাল।
বৃহস্পতিবার ১৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট সিলেটে অবতরণ করেছে। সাত দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে তাদের।
এরমধ্যেই প্রকাশ পায়, যুক্তরাজ্যে যে স্ট্রেইনের সন্ধান মিলেছে তার সঙ্গে বাংলাদেশে পাওয়া স্ট্রেইনের মিল রয়েছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম খান জানান, তারা ক’মাস আগেই গবেষণা করে ১৭টি জিনোম সিকোয়েন্সের মধ্যে পাঁচটি করোনার এই নতুন স্ট্রেইন খুঁজে পান।
তিনি বলেন, ‘নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ যে সিকোয়েন্স করা হয়েছে, তাতে ভাইরাসটির দুটি স্পাইকে প্রোটিন মিউটেশন পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যে শনাক্ত নতুন ভাইরাসটির স্ট্রেইনে যে বৈশিষ্ট্য আছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশে পাওয়া ভাইরাসটির পুরোপুরি মিল না থাকলেও অনেকটাই মিল রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের দায়িত্ব ছিল নতুন স্ট্রেইন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জানানো। কারণ, যুক্তরাজ্যে যেরকম নতুন স্ট্রেইন উদ্ভব হলো, আমাদের দেশেও তো সেরকম একটা হতে পারে। পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জানালে সেটা নিয়ে আমরা আরও গবেষণা করে দেখতে পারব। পেয়ে সেটা নিয়ে চুপ করে বসে থাকলে, এ ধরনের গবেষণা করে লাভ কী?’
‘সারা দেশে মানুষ যেখানে বিপদগ্রস্ত, সবাই ভাবছে যে, কী করা যায়, এর মধ্যে তারা এরকম একটা তথ্য দিলো। এই তথ্য তো গোপন করে রাখার মতো কোনো তথ্য না। এটা পাওয়ার পরেও তারা কেন চুপ করে ছিল?’, যোগ করেন এ ভাইরাস বিশেষজ্ঞ।
এদিকে করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৩ হাজার ২২৭টি নমুনা পরীক্ষা করে এ সময়ে নতুন ১ হাজার ২৩৪ রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
দেশে গত মার্চের শুরুর দিকে কভিড-১৯ এর সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭ হাজার ৩৭৮ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ১০২ জনে।