এপিএস নিউজ ডেস্ক
তাপমাত্রার পারদ ক্রমেই কমেই যাচ্ছে। রাত থেকে দুপুর অবধি চারপাশে ঘন কুয়াশায় ঢাকা। মেঘমুক্ত আকাশে কমেছে জলীয়বাষ্পও। সঙ্গে যোগ হয়েছে শীতল হাওয়া। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে বয়ে যাওয়া হিম বাতাসে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। শীতে এই অঞ্চলের প্রতিটি জেলার মানুষের রোজকার ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ আর গরিব-দুস্থরা। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে দিন যাচ্ছে অহসায় মানুষদের। এছাড়া বেড়েছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা।
গত কয়েকদিন ধরেই উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের কারণে এমন স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন মাঝে মাঝে সূর্য উঁকি দিলেও তা কিছু সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। জীবিকার সন্ধানে যারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন সেইসব দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ যে যার সাধ্য অনুযায়ী নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন গরম কাপড়ে। কারও কারও গরম কাপড় না থাকায় হালকা কাপড় পরিধান করে বেরিয়ে পড়েছেন কাজের সন্ধানে।
বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর চাপ। বিশেষত শিশু ও বয়স্করা বেশি আসছেন হাসপাতালে।
উত্তরাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে শীত। হিমালয়ের নিকটবর্তী এ জেলার গ্রাম থেকে শহর আচ্ছন্ন হয়ে আছে ঘন কুয়াশায়। শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন জেলার চার শতাধিক চরাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষ। তীব্র শীতে বেশি বিপাকে পড়েছেন নদীগর্ভে বসতভিটা হারা মানুষ। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে মৃদু বাতাস।
শনিবার ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে গোটা জেলা। তীব্র কুয়াশায় দু’হাত দূরের রাস্তাও দেখা যাচ্ছে না। শীতবস্ত্রের অভাবে ঠান্ডায় কাঁপছেন চরাঞ্চলের মানুষ।
কুড়িগ্রামের মতো পঞ্চগড়েও তীব্র শীত পড়েছে। শীতের কারণে বিপর্যয়ে পড়েছে মানুষ। পঞ্চগড় শহরের রিকশাচালক শরিফুল জানান, কয়েকদিন ধরে কনকনে শীত শুরু হয়েছে। ঠান্ডায় রিকশা চালানো যাচ্ছে না। যাত্রীও কমে গেছে। মানুষ দরকার ছাড়া ঘর থেকে বের হয় না।
আমিনুল নামে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার এক কৃষক জানান, কয়েকদিন ধরে রোদ না থাকায় ঠান্ডা এতো বেড়েছে যে মাঠে কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। রোদ না থাকায় গরু-ছাগল নিয়েও বিপদে আছেন। ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রবিশস্য।
রংপুরের তারাগঞ্জে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিনদিন ধরে সূর্য দেখা যায়নি। উপজেলা সদরের বাসিন্দা রফিকুল জানান, ‘হামার মতো গরিবদের জন্য গরমেই ভালো। পাতলা ছিড়া কাপড় গাওত দিয়া থাকা যায়। ঠান্ডাত মোটা কাপড় নাই।’
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কোচ-ট্রাকগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে রাস্তায় চলাচল করছে। প্রতিটি গাড়ির গতি ছিল অনেক কম।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। তবে রংপুর বিভাগে দু-এক জায়গায় হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকতে পারে এবং তা কোথাও কোথাও বিকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।