মাদকসংক্রান্ত কোনো বিধিনিষেধ সতর্কতাই মানেননি তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ‘মাদক ডোপ টেস্টে পজিটিভ’ আসায় চাকরি হারালেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ১০ সদস্য। গতকাল রবিবার ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
এ ছাড়া ওই সূত্র আরো জানিয়েছে, ডিএমপিতে ‘ডোপ টেস্টে’ এখন পর্যন্ত মোট অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ৬৮ জন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে ৪৩টি। বিভাগীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন ২৫ জনের বিরুদ্ধে। সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি হয়েছে ১৮ জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ৬৮ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে এসআই সাতজন, সার্জেন্ট একজন, এএসআই পাঁচজন, নায়েক পাঁচজন ও কনস্টেবল ৫০ জন।
এ ছাড়া মাদকসংক্রান্ত অন্যান্য অভিযোগ, যেমন মাদক বিক্রিতে অভিযুক্ত হয়েছেন ১০ জন, মাদক সেবনে অভিযুক্ত পাঁচজন এবং উদ্ধার করা মাদক উদ্ধারের তুলনায় কম দেখিয়ে অর্থগ্রহণে অভিযুক্ত হয়েছেন চারজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, যাঁদেরকে মাদক সংশ্লিষ্টতায় শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। মূলত যাঁরা নিজেদের শোধরায়নি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনে নবসৃষ্ট ট্রাফিক মিরপুর বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয় উদ্বোধন শেষে ডিএমপি কমিশনার এসব কথা বলে। ওই অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ‘ডোপ টেস্টে যাঁদের পজিটিভ এসেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে বাকিদের জন্য সুস্পষ্ট বার্তা যাবে যে আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। এ উদ্যোগের ফলে অনেকে ভালো হয়েছে এবং এ রাস্তা থেকে ফিরে এসেছে।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য-সহিষ্ণু নীতি বাস্তবায়নে নিজেদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এর অংশ হিসেবে দুই মাস আগে ডিএমপি সদস্যদের ‘ডোপ টেস্ট’ শুরু হয়। গতকাল রবিবার পর্যন্ত ‘ডোপ টেস্টে’ পজিটিভের সংখ্যা ৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন ১৮ জন। এর মধ্যে ১০ জনকে চূড়ান্তভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে আদেশ জারি করা হয়েছে। এর বাইরে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ২৫ জনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, মাদক বিক্রি, সেবন ও মাদক দিয়ে ফাঁসানোসহ উদ্ধার করা মাদক তুলনায় কম দেখানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন ডিএমপির আরো ২৯ সদস্য।
ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, মূলত ডিএমপি কমিশনারের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা (ইন্টেলিজেন্স অ্যানালিসিস ডিভিশন-এনআইডি) পুলিশের মাদক সেবন ও মাদক কারবারে সম্পৃক্ততার বিষয় তদন্ত করছে। এই ধারাবাহিকতায় মাদক সেবন ও এর কারবারে জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যাঁরা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন বা মাদক কারবারিদের সহযোগিতা করছেন, সরাসরি তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো রকম শিথিলতা দেখানো হচ্ছে না। সাধারণ মাদক কারবারির বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, ঠিক সেভাবেই মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে মাদকাসক্ত হিসেবে সন্দেহভাজনদের তালিকা করা হয়। এরপর সিআইডির ল্যাবে তাঁদের রক্ত ও প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হয়েই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।