বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের আবিষ্কৃত তিনটি করোনাভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর ফলে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের নামও উঠে এলো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বিজ্ঞানীরা জানতে পারল বাংলাদেশও করোনাভ্যাকসিন আবিষ্কার করছে।
গতকাল শনিবার গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ অব কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ ও গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ড. কাকন নাগ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, গত ১৫ অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গ্লোব বায়োটেকের আবিষ্কার করা তিনটি ভ্যাকসিনকে কভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ভ্যাকসিন তিনটি হলো ডি৬১৪জি ভ্যারিয়ান্ট এমআরএনএ ভ্যাকসিন, ডিএনএ প্লাজমিড ভ্যাকসিন ও অ্যাডিনোভাইরাস টাইপ-৫ ভেক্টর ভ্যাকসিন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেক-ই বিশ্বের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যাদের সর্বোচ্চ তিনটি ভ্যাকসিনের নাম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের তালিকাতে রয়েছে।
এ ব্যাপারে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত হওয়া মানে সারা বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের নামটা জানতে পারছে। বাংলাদেশি হিসেবে অনেক গর্বের একটা বিষয়। অন্যান্য ভ্যাকসিনের নাম একটা করে ক্যান্ডিডেটের অধীনে আছে। সেখানে বাংলাদেশের নাম তিনটি ভিন্ন ক্যান্ডিডেটের তালিকায় আছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে যে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের তালিকায় অন্যান্য দেশের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার। সারা বিশ্বের মানুষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট সার্চ করে। দেখে কোন ভ্যাকসিনের কী অবস্থা। সেখানে বাংলাদেশের নামও মানুষ দেখতে পারবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে ১৫ অক্টোবরের ‘ড্রাফট ল্যান্ডস্কেপ অব কভিড-১৯ ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিনস’ তালিকায় দেখা গেছে, প্রি-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে থাকা ১৫৬টি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের শুরুতেই গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের ‘ডিএনএ প্লাজমিড ভ্যাকসিন’-এর নাম রয়েছে। তালিকার ২৯ নম্বরে ‘অ্যাডিনোভাইরাস টাইপ-৫ ভেক্টর’ ও ১২২ নম্বর তালিকায় ‘ডি৬১৪জি ভ্যারিয়ান্ট এলএনপি-এনক্যাপসুলেটেড এমআরএনএ’ ভ্যাকসিনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে মানবদেহে পরীক্ষা চলছে এমন ৪৮টি ভ্যাকসিনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে সংস্থাটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া তিনটি ভ্যাকসিনের মধ্যে ‘ডি৬১৪জি ভ্যারিয়ান্ট এমআরএন ‘ বা ‘ব্যানকভিড’ ভ্যাকসিনটি মানবদেহে পরীক্ষা করবে বলে জানিয়েছেন ডা. আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, তিনটি ভ্যাকসিনের মধ্যে ব্যানকভিড ভ্যাকসিন নিয়ে মানবদেহে ট্রায়ালে যাব। এ জন্য গত ১৩ অক্টোবর আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আইসিডিডিআর,বি এখন প্রটোকল তৈরি করে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) জমা দেবে। বিএমআরসির অনুমোদন পেলে মানবদেহে পরীক্ষা শুরু হবে।
এই গবেষক আরও বলেন, ব্যানকভিড ভ্যাকসিন প্রাণীদেহে পরীক্ষা শেষ করেছি। সেই পরীক্ষার ফল অনলাইনভিত্তিক জার্নাল বায়ো আর্কাইভে প্রকাশ করেছি। এখানে প্রকাশের পেছনে আমাদের সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য ছিল। যেহেতু বাংলাদেশ থেকে প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছি আমরা, এখানে একটা প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল। তাই আমরা এটা সায়েন্টেফিক কমিউনিটিকে জানাতে চেয়েছিলাম। সে জন্য এখানে প্রকাশ করা। এই জার্নাল সবার জন্য উন্মুক্ত। সেখানে সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীরা কী ধরনের মন্তব্য করছেন, সেটা আমরা জানতে পারব। মডার্না ও অ্যাস্ট্রোজেনেকাসহ অন্যান্য ভ্যাকসিনও প্রথমে বায়ো আর্কাইভে প্রকাশ করা হয়েছে। তারপর তারা মুদ্রিত জার্নালে প্রকাশ করেছে।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের তিনটি ভ্যাকসিন সম্পর্কে ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন, আমাদের তিনটি ভ্যাকসিনের প্লাটফর্ম তিন ধরনের। একটি ডিএনএ ভ্যাকসিন, একটি এমআরএনএ ও আরেকটি ভাইরাল ভেক্টর। বিশ্বে যেসব ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে, সেগুলোর মধ্যে ফাইজার, জনসন অ্যান্ড জনসন ও মডার্না‘এমআরএনএ’ টাইপ ভ্যাকসিন। অক্সফোর্ড, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও চীনের কানসিনোবায়ো ‘ভেক্টর’ টাইপ ভ্যাকসিন এবং চীনের ইনোবায়ো ‘ডিএনএ’ টাইপের ভ্যাকসিন।