কোর্ট প্রতিবেদক
করোনাতে আদালতে ছুটি থাকায় কারাবন্দি ও কোর্ট সংশ্লিষ্ট সকলেই ভোগান্তিতে পড়েছে। আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কারাবন্দিদের জামিন শুনানির সুযোগও আপাতত মিলছে না। তার সঙ্গে প্রতিদিন আটক কিংবা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসছেন নতুন অনেক আসামি। এতে করে কারাবন্ধির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চাপ কমাতে কারাবন্দি আসামিদের জামিন শুনানি অব্যাহত রাখা উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে বন্ধ রয়েছে সারাদেশের আদালতের কার্যক্রম। একারণে বিভিন্ন মামলার আসামিদেরও জামিন শুনানি হচ্ছে না।
বিভিন্ন আদালত থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ কারাবন্দি জামিনে ছাড়া পেতেন, আপাতত তা আর হচ্ছে না। কিন্তু ছুটিতে আটক বা গ্রেপ্তর কার্যক্রম থেমে নেই। এ অবস্থায় কারাগার থেকে কোনো বন্দি মুক্তি না পেলেও প্রতিদিনই বন্দির সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, দায়রা জজ আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগ থেকে জামিন নিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রায় ১৫০ থেকে ১৮০ জন বন্দি মুক্তি পান। ছুটির আগে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ জনও মুক্তি পেতেন।
তার বিপরীতে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন কারাগারে যেত ১২০ থেকে ১৫০ জন। কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন বন্দির সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজারের মতো। যেখানে কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন।
ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ কারাবন্দি নিয়ে করোনায় এমনিতেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত কারা কর্তৃপক্ষ। তার উপর সরকার ঘোষিত ছুটির কারণে আদালত বন্ধ থাকায় হচ্ছে না কারাবন্দি আসামিদের জামিন শুনানিও।
শুধু নতুনভাবে গ্রেপ্তার বা আটক আসামিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজিরের বাধ্যবাধকতা রক্ষায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে প্রতিদিন দুজন বিচারক বসেন। তারা বিভিন্ন থানায় গ্রেপ্তার বা আটকদের জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করেন। কিন্তু কারাবন্দি আসামিদের জামিন আবেদন নিষ্পত্তির জন্য কোনো আদালত ছুটিতে বসছে না। তাই কারাগারে প্রতিদিনই বন্দির সংখ্যা বাড়ছে।
এ অবস্থায় কারাবন্দিদের জামিন আবেদন নিষ্পত্তি অব্যাহত রাখলে কিছু বন্দি মুক্তি পেতেন। এতে কিছুটা সুবিধা হতো বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। তাই কারাবন্দি আসামিদের জামিন শুনানি অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করছেন কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী।
এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটিকে কেন্দ্র করে গত চারদিনে কারাবন্দি আসামিদের জামিন শুনানি হয়নি। সাপ্তাহিক ছুটিসহ আরও ছয়দিন চলবে এই বন্ধ। সংখ্যায় কম হলেও বিভিন্নভাবে প্রতিদিন কেন্দ্রীয় কারাগারে নতুন বন্দি আসছেন, কিন্তু কেউ মুক্তি পাচ্ছেন না। বের হচ্ছেন না।’
‘তাই কারাগারে প্রতিদিনই বন্দি সংখ্যা বাড়ছেই। সার্বিক বিবেচনায় কারাবন্দি আসামিদের জামিন শুনানি বিশেষ ব্যবস্থায় হলেও চালু রাখা উচিত। না হয় এই চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে।
এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস পর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ গণমাধ্যমকে কে বলেন, ‘দুর্যোগের এই সময়ে মানবাধিকার তো লংঘন হচ্ছেই। কিছু করার নেই। তবে কারাগারে থাকা আসামিদের জামিন দেওয়ার ব্যাপারে বিচারকরা খাস কামরায় বসে আদেশ দিতে পারেন। আসামিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন যেহেতু কারাগারে বন্দি সংখ্যা বাড়ছেই। এই বাড়তি চাপ কমাতে এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এখন জামিন হলে তো লোক মারফত আদেশের কপি পাঠানোর প্রয়োজন নাই। কারণ আদেশের কপি কমিউনিকেশনের জন্য ডিজিটাল সিস্টেম আছে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাইজুল্লাহ ফয়েজ হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, ‘কারাগারে চাপ কমাতে সরকার এক্সিকিউটিভ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। লঘু অপরাধে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের সরকার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী। যেমন খালেদা জিয়াকে জামিনে মু্ক্তি দিয়েছে সরকার।’
উল্লেখ্য, আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। সেটি বাড়িয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। এতে কারাবন্দীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কারা সংশ্লিষ্টরা।
এপিএস নিউজ/টিআই