সব
facebook apsnews24.com
আমার দেখা ভয়াবহ আগস্টঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকন - APSNews24.Com

আমার দেখা ভয়াবহ আগস্টঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকন

আমার দেখা ভয়াবহ আগস্টঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকন

এস এ মারুফ :

উপদেষ্টা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, পাবনা জেলা শাখা ও নির্বাহী সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এবং সভাপতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থা পাবনা জেলা শাখা, সাবেক কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক পারমাণুবিক শক্তি সংস্থা, প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (১৯৭৩-৭৫) বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকনের দেখা ভয়াবহ আগস্টের বর্ননা
১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার জনগণ পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসক ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি দেশ জন্মদেয়। ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বাঙ্গালীর প্রাণপ্রিয় নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলেন এবং দেশবাসীকে বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সোনার বাংলা রুপান্তরিত করার লক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহব্বান জানালেন। বাঙ্গালী তাতে সাড়া দিলেন কিন্তু দেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি ও কিছু রাজনৈতিক উচ্চ বিলাসীরা নানা ভাবে তার গঠনমূলক কর্মসূচিকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করতে শুরু করেন এবং বৈজ্ঞানিক সামাজতন্ত্রের নামে একটি রাজনৈতিক দলের জন্মদেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সমস্ত ষড়যন্ত্র অপেক্ষা করে বাংলার জনগনকে সঙ্গে নিয়ে তার দেওয়া প্রতিশ্রতি মোতাবেক দেশ পুর্নগঠনে আন্তরিকভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসাবে বাঙ্গালী জাতির জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ বন্যা আর এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে পুজিঁ করে আন্তর্জাতিক ও দেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী অতি উৎসাহী বিপ্লবীরা একত্রে হয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যেমে দেশের মধ্যে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেন এবং সরকার পতনের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। সেই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা অনুযায়ী স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট রাতের অন্ধকারে জাতির পিতাসহ তার পরিবারের সকল সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরম করুণাময় আল্লাহর রহমতে জাতির পিতার দুই সুযোগ্য কন্যা দেশে না থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। সেদিন তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষান্ত হননি। তারা সামরিক শাসনের নামে শুরু করে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠেকে নিধন করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল গুম, হত্যা, গৃহবন্দি এবং অনেকেই জীবন বাচাতে ছাড়তে হয়েছিল তাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এই নির্যাতন ও অত্যাচার থেকে আমিও রক্ষা পাই নাই।
১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট শহীদ এম.মনসুর আলীর সহধর্মীনি মরহুম আমেনা মনসুর মহিলা সমিতির সভায় যোগ দেওয়ার লক্ষে পাবনায় আসেন। এদিকে বন্যার ত্রান ও অন্যদিকে সন্ত্রাসীদের হিংসাতক কার্যাবলি প্রতিহত ও শ্রদ্ধাভাজন চাচীকে (আমেনা মনসুর) নিরপত্তা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকি।
চাচীকে কালাচাঁদ পাড়া তার বাসায় রেখে ১৪ আগস্ট সকল কাজ শেষ করে গভীর রাতে বাসায় আসি। আমার বাবা প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে রেডিওতে খবর শুনতো। সেই দিন সকালে ফজরের নামাজ পড়ে খবর শুনতেই বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সবাইকে হত্যার খবর শুনতে পায়। তখন আমার আমায় ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সবাইকে বিপদগামী কিছু সন্ত্রাসীবাহিনীর সদস্যরা হত্যা করেছে। আমি শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। একি শুনলাম আমি তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে চাচীর বাসায় কালাচাঁদ পাড়া যাই। আমি চাচীর বাসায় গিয়ে দেখি তৎকালীন পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতা চাচীর সঙ্গে অবস্থান করছে এবং দেখি চাচীও বিমস্ম অবস্থায় অবস্থান করছে। আমরা সবাই শোকে কাতর হয়ে তার পাশে অবস্থান করি।

ইতিমধ্যে পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের কিছু নেতা স্বাধীনতার বিরোধী শক্তির হাত থেকে পাবনার সাধারণ মানুষদের রক্ষা করতে পাবনা টাউন হল, ইন্দিরা মোড় সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শত্রæদের হাত থেকে শহরকে রক্ষা করতে অবস্থান করেন। আমরা চাচীর বাসায় থাকা অবস্থায় শহীদ এম. মনসুর আলী চাচা তিন বার টেলিফোন করেন। প্রথমবার টেলিফোন করে তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। তোমরা
পাবনায় অবস্থান করবে এবং পাবনা শহরকে স্বাধীনতা বিরোধী, গণবাহিনী ও সন্ত্রাসীরা যেন শহরে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে সর্তক থাকবে।

দ্বিতীয় টেলিফোনে চাচা বলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে সৈয়েদ নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং এই হত্যাকরীদের দমনের জন্য সেনাবাহিনী, রক্ষীবাহিনী,বিডিআর ও পুলিশ বাহিনীর সাথে তিনি যোগাযোগ স্থাপন করছেন।
সকল সস্ত্রতবাহিনী আত্মসর্ম্পন করার কিছুক্ষণ পর তিনি আবার ফোন দিয়ে বলেন তোমরা সবাই তোমাদের চাচীকে (আমেনা মনসুর) নিরাপদ স্থানে রেখে যার যার মতো নিরাপদ স্থানে চলে যাও। আমরা তখন চাচীকে (আমেনা মনসুর) দ্বিপচড়ে এক শুভাকাঙ্খীর বাসায় রেখে যার যার মতো নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই। এরমধ্যে যে সমস্ত আওয়ামীলীগনেতা কর্মীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছিল তাদের পুলিশ বাহিনী স্থান ত্যাগ করার জন্য আহব্বান জানায় নইলে পুলিশবাহিনী বলে আমরা লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হবো। তখন তারা বাধ্য হয়ে স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।
এরপর আমি বিভিন্নসুত্রে জানতে পারলাম সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মরহুম নাসিম ভাইসহ অন্যান্য নেতাবৃন্দ ভারতের কলকাতায় গিয়ে এই হত্যার প্রতিবাদ করার লক্ষে সংঘবন্ধ হচ্ছেন। আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে কলকাতায় চলে যাই এবং নসিম ভাইসহ অন্যান্য নেতাবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই। সেখানে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে ছয় মাস থাকার পর নেতাবৃন্দের পরামর্শক্রমে আবার দেশে ফিরে আসি এবং সামরিক বাহিনীকর্তূক গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আত্মগোপনে যাই। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ১৯৭৬ সালের ১১ই আগস্ট সকাল ১০ টার দিকে তৎকালীন সামরিক সরকারর গোয়িন্দাবাহিনী কর্তূক ঢাকার নবাবপুর রোডের একটি অফিস থেকে আমি গ্রেফতার হই। গ্রেফতার হওয়ার পর আমাকে গোয়িন্দা বাহিনীর লোকেরা তৎকালীন গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডে তাদের রাখা গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের

কাছে আসার পর আমাকে কালো কাপড় দিয়ে দিয়ে চোখ বেঁধে অঙ্গাত স্থানে নিয়ে যায়। পরে আমার চোখ খোলার পর জানতে পারি আমায় নির্যাতন ও ইন্টারোগেশন সেল।
সেই নির্জনসেলে আমাকে আড়াইটি মাস একাকীত্ব জীবন-যাপন ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নির্যাতনের অংশ হিসাবে ছিলো চোখ বেঁধে ঝুলন্ত অবস্থায় আঘাত এমনকি পুরুষ লিঙ্গের সঙ্গে ইট বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো। সেখানে আমি আড়াই মাস দুনিয়ার আলোথেকে বঞ্চিত ছিলাম। তারপর চোখ বেঁধে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসে। কেন্দ্রীয় কারাগারে যাওয়ার পর সেখানে আমি সাবেক মন্ত্রী মরহুম আব্দুল আজিজ, মরহুম মোমিন তালুকদার, আওয়ামীলীগ নেতা আমু ভাই, মরহুম গাজী গোলাম মোস্তফা, পল্টু ভাই, মায়া ভাই, পাহাড়ী ভাই, এসপি মাহাবুব ভাইসহ শতাধিক আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগের নেতানৃন্দের সংস্পর্শে এসে আমি ফিরে পেলাম নতুন জীবন। জেলে থাকা কালীন সময় আমিসহ নেতৃবৃন্দ সামরিক সরকার কর্তূক পাগলা ঘন্টার মাধ্যেমে নির্যাতনের শিকার হই। আড়াই বছর পরে আমি হাইর্কোটে রিটের মাধ্যেমে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করি। (সংক্ষিপ্ত)
বীর মুক্তিযোদ্ধা পাকন বলেন আমি শোকবাহ আগস্ট মাসে যাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি

আপনার মতামত লিখুন :

আপিল বিভাগে নিয়োগ পাচ্ছেন তিনজন বিচারপতি

আপিল বিভাগে নিয়োগ পাচ্ছেন তিনজন বিচারপতি

বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা

বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা

থানচিতে পুলিশ সন্ত্রাসী গোলাগুলি, থমথমে পরিস্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি

থানচিতে পুলিশ সন্ত্রাসী গোলাগুলি, থমথমে পরিস্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি

ফের বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম, স্বস্তি নেই মাছ-মাংসে

ফের বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম, স্বস্তি নেই মাছ-মাংসে

স্বাধীনতা দিবসে বীর শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

স্বাধীনতা দিবসে বীর শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

দেশে আইনের শাসন না থাকায় নিরপরাধীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে- মির্জা ফখরুল

দেশে আইনের শাসন না থাকায় নিরপরাধীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে- মির্জা ফখরুল

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj