স্টাফ রিপোর্টঃ গত বছর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেনি। গরিব ও এতিমদের হক চামড়ার দাম নিয়ে গত বছরের কারসাজি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ৩১ বছরের মধ্যে গতবার কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়ার দরে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় নেমে আসে। দাম না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভে চামড়া নদীতেও ফেলে দেন। তবে এবার যাতে সে পরিস্থিতি না ঘটে তাই আসন্ন ঈদুল আজহার চামড়া সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন সংক্রান্ত উদ্ভূত সমস্যা সমাধানর লক্ষ্যে কন্ট্রোল সেল খুলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ঈদুল আজহার চামড়া সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন সংক্রান্ত উদ্ভূত সমস্যা সমাধানর লক্ষ্যে কন্ট্রোল সেল খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল সেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চারটি মোবাইল নম্বরও দেয়া হয়েছে। মোবাইল নম্বরগুলো হলো- ০১৭১১-৭৩৪২২৫, ০১৭১৬-৪৬২৪৮৪, ০১৭১৩-৪২৫৫৯৩ এবং ০১৭১২-১৬৮৯১৭। চামড়া নিয়ে কোনো সমস্যা তৈরি হলে সমাধানের জন্য এসব নম্বরে যোগেোগ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে এবার কোরবানির পশুর চমড়ার দাম ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪৫-৫০ টাকা। এক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় দাম কমানো হয়েছে ২৯ শতাংশ। ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, গত বছর যা ছিল ৩৫-৪০ টাকা। এক্ষেত্রে গতবছরের চেয়ে দাম কমানো হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া ১৩-১৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ১৮-২০ টাকা। এক্ষেত্রে গত বছরের চেয়ে দাম কমানো হয়েছে ২৭ শতাংশ। পাশাপশি বকরির চামড়ার দাম নির্ধরণ করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা, গত বছর যা ছিল ১৩-১৫ টাকা। এক্ষেত্রেও দাম কমানো হয়েছে ২৩ শতাংশ।
এদিকে প্রায় ৩০ বছর এবার কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু (প্রক্রিয়াকরণের প্রথম ধাপ) চামড়া রফতানির অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কেস-টু-কেস ভিত্তিতে এ চামড়া রফতানির অনুমতি প্রদান করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বুধবার (২৯ জুলাই) প্রজ্ঞাপন জারি করে এবং আমদানি ও রফতানির প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতর এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চামড়া শিল্প খাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক শিল্পমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গঠিত টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২০ জুলাই সভার সিদ্ধান্ত এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয়, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কাঁচা চামড়ার চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য রফতানি নীতি ২০১৮-২০২১ এর অনুচ্ছেদ ৯.১৫ এ কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু চামড়া রফতানিতে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে শিথিল করা প্রয়োজন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু চামড়া রফতানির অনুমতি প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।
উল্লেখ্য, কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু চামড়া রফতানিতে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণের পরিপ্রেক্ষিতে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে উল্লিখিত চামড়া রফতানির আবেদন পর্যালোচনা ও সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, আমদানি-রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতর, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এবং এফবিসিসিআই- এর প্রতিনিধি রয়েছেন।