ডেস্ক রিপোর্টঃ চট্টগ্রামের উড়ালসড়কগুলোতে (ফ্লাইওভার) ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব বলছে, তাঁরা রশি বেঁধে অভিনব কায়দায় ছিনতাই করে আসছেন।
গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন জাকির হোসেন (৩২), মো. সুমন (১৯), মো. দেলোয়ার (১৯) ও মো. হাছান ওরফে আকাশ (১৯)। বাকি দুজন কিশোর। আজ মঙ্গলবার নগরের আকবর শাহ থানার ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাহেরপাড়া এলাকার সড়কের পাশ থেকে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে তাঁদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। উল্লেখ্য, গত শনিবার
শুধু প্রথম আলোয় ‘উড়ালসড়কে রশি বেঁধে ছিনতাই’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ফেব্রুয়ারির পর গত ছয় মাসে ৫০টি মতো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে রয়েছেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। অনেকে বিকল্প পথে আসা–যাওয়া শুরু করেছেন। ঝামেলা এড়াতে মামলা করছেন না ভুক্তভোগীরা। ঘটনা অনেক হলেও মামলা হয়েছে মাত্র একটি। প্রতিবেদন আসার পরপরই র্যাব ও পুলিশ ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্তে নামে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হয়। ভুক্তভোগীরা তাঁদের দুর্ভোগের কথা সেখানে তুলে ধরেন।
এদিকে র্যাব সদর দপ্তর থেকে ঘটনা তদন্তে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একটি দল প্রতিবেদন প্রকাশের দিনই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসে। তারা তিন দিন অবস্থান করে গতকাল সোমবার ঢাকা চলে যায়। র্যাব–৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, উড়ালসড়কে একটি চক্র রশি বেঁধে ছিনতাই করছে প্রতিবেদন প্রকাশের পর র্যাব অভিযান শুরু করে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আকবর শাহ এলাকা থেকে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে ছয়জকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে চারটি ছুরি উদ্ধার করা হয়। মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা জানিয়েছেন, তাঁরা নিরীহ পথচারীদের মালামাল ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। তাঁদের কাছে দেশীয় অস্ত্র রয়েছে। নগরের উড়ালসড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা ছিনতাই করে থাকেন। উড়ালসড়কে রশি বেঁধে করে থাকেন। দীর্ঘদিন থেকে তাঁরা উড়ালসড়কগুলোয় ডাকাতিও করে আসছেন সুতো বেঁধে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে নগরের আকবর শাহ থানায় মামলা হয়েছে।
এদিকে উড়ালসড়কে যাতায়াতকারীদের নিরাপত্তা জোরদার করতে চট্টগ্রামের ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন উই আর চিটাগাং উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় নগরের আক্তারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়কের ২ নম্বর গেট এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে। ওই সময় অংশগ্রহণকারীরা হাতে মোমবাতি প্রজ্বালন করে সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান।
মানববন্ধনে উই আর চিটাগাংয়ের অ্যাডমিন কাজী ইমরান চৌধুরী বলেন, উড়ালসড়কগুলো দিনে ছিনতাইকারী ও রাতে অন্ধকারের কবলে থাকে। অথচ সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে এগুলো মানুষের জন্য করেছে। কিন্তু উড়ালসড়কের নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশি পাহারা এবং বাতির ব্যবস্থা করার কেউ নেই। জনপ্রতিনিধিদেরও এদিকে তাকানোর সময় নেই। অবিলম্বে উড়ালসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করে যাতায়াতকারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেবেন তাঁরা।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উই আর চিটাগাংয়ের সদস্য মেহেরাজ আবিদ, সাইদুল মিনহাজ, গাজী নাবিদুল হক, আসিফ আহমেদ, টিপু আহমেদ, আশরাফ আহমেদ, ইয়াছিন তৌকির, মো. অভি প্রমুখ। ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপটিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরা হয়। উড়ালসড়কে ছিনতাইয়ের শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী সেখানে তাঁদের সুতোয় গলা কেটে যাওয়ার ছবিও দেয়। আজ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ঘটনার শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগীও উপস্থিত ছিলেন। আর কেউ যাতে ঘটনার শিকার না হন, তাঁরা সেই দাবি জানান প্রশাসনের কাছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে গলায় রশি আটকে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে আহত হয়ে আরোহীরা মারা যাওয়ার শঙ্কা করছেন। তার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন।