স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘পাঠাও’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত ফাহিম সালেহের (৩৩) হত্যাকারীকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নিউইয়র্ক পুলিশের দাবি, হত্যাকারীকে তারা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তবে স্মরণকালের নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কী কারণ থাকতে পারে সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি পুলিশ।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে বড় ধরনের কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন থাকতে পারে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া এবং হত্যাকারী গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাচ্ছে না।
প্রযুক্তিবিদ ফাহিম হত্যাকাণ্ড নিউইয়র্ক সিটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র, এমনকী বিশ্বপরিমÐলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ডের খবর নিউইয়র্ক টাইমস, নিউইয়র্ক পোস্টসহ প্রায় সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ফলাও করে প্রচার করেছে।
স্থানীয় সময় বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে লোয়ার ইস্ট ম্যানহাটনে নিজের বিলাসবহুল কনডোমিনিয়ামের (অ্যাপার্টমেন্ট) বাসা থেকে ফাহিম সালেহর মাথাবিহীন টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত বছর ২ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলারে কেনা এই কনডোমিনিয়ামে একাই থাকতেন ফাহিম সালেহ।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে নিহত ব্যক্তি ফাহিম সালেহ। পুলিশের ধারণা, ফাহিমকে আগে হত্যা করা হয়েছে এবং পরে মরদেহ টুকরো করা হয়েছে, যাতে সেগুলো অনত্র সরিয়ে ফেলা যায়। কিন্তু ফাহিমের খোঁজে তার এক আত্মীয় অ্যাপার্টমেন্টের কলবেল দেওয়ায় খুনি মরদেহ রেখে পালিয়ে যায়। মরদেহ টুকরো করা ইলেকট্রিক করাতও ফেলে যায়, যেটি বৈদ্যুতিক আউটলেটে লাগানো ছিল।
এদিকে ফাহিম হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা ওই ভবনের আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। গোয়েন্দারা স্থানীয় স্টোর, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন এবং সড়কের ট্র্যাফিক ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। এসব ফুটেজে খুনিকে দেখা গেছে কি না সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, খুনিকে সনাক্ত করা গেছে, খুব শিগগির গ্রেপ্তারও হবে।
গোয়েন্দাদের বিশ্বাস, ফাহিম সালেহকে নির্বৃত্ত করতে বৈদ্যুতিক স্টানগান ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর তার দেহ থেকে মাথা, দুই হাত এবং হাটুর নিচ থেকে দুই পা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সালেহর খোঁজে কেউ না গেলে খুনি তার লাশ সরিয়ে ফেলতো। পুলিশ বলছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। খুনের পর রক্ত মুছে ফেলা হয়েছিল। ভবনের সিসিটিভির ফুটেজে খুনির পালিয়ে যাবার কোনো দৃশ্য নেই। এ থেকে গোয়েন্দারা মনে করেন, খুনি অ্যাপার্টমেন্টের পেছনের দরজা দিয়ে এবং ভবনের সিঁড়িতে গিয়ে পালিয়ে গেছে।
ফাহিম সালেহ অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের নিরাপত্তায় কোনো দারোয়ান ছিল না, তবে ‘বিশাল সুরক্ষা’ ছিল বলে দাবি করেছেন ভবন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। সেই ‘বিশাল সুরক্ষা’ ভেদ করে একজন খুনি কিভাবে ভবনে প্রবেশ করলো পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
এদিকে ফাহিম হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতায় লোয়ার ইস্ট ম্যানহাটনের বাসিন্দারা স্তম্ভিত হয়ে গেছেন। এলাকার অনেকেই বলেছেন, এলাকাটি বসবাসের জন্য খুবই সুন্দর ছিল। এমন একটি সুন্দর ও অভিজাত এলাকায় এমন নৃশংস হত্যাকাÐ ঘটতে পারে তা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাদের হৃদয় ভেঙে গেছে।
বুধবার, বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক শোক প্রকাশ করেছেন এবং টুইটারে বলেছেন যে জনাব সালেহের মৃত্যু দেশের জন্য একটি বড় ক্ষতি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ফাহিমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি ফাহিমের নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এদিকে ফাহিম সালেহর পরিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে পরিবার, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে বা ফাহিমের বন্ধুর সঙ্গেও যোগাযোগ না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। পারিবারিক ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফাহিমের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আসা সংবাদ শিরোনাম এখনো আমাদের অনুধাবনের বাইরে। ফাহিম সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, তিনি তার চেয়েও বেশি ছিলেন। ফাহিমকে মেধাবী এবং সৃষ্টিশীল উল্লেখ করে পারিবারিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফাহিম খুব অল্প বয়সেই সাফল্য পেয়েছিলেন এবং অন্যের মঙ্গলের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি যাই করুন না কেন, বৃহত্তর ভালো এবং তার পরিবারের কথা ভেবে তিনি তা করতেন।
অপরদিকে এক বার্তায় শোক প্রকাশ করেছে ফাহিম সালেহর প্রতিষ্ঠিত নাইজেরিয়ার ডেলিভারি বাইক সাভিস ‘গোকাডা’।