নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের উপ-নির্বাচন পেছানোর বিএনপির দাবি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার (৭ জুলাই) দুপুরে নিজ দফতরে ইসি সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বিয়ষটি জানান।
তিনি বলেন, বিএনপি তার আবেদনে নির্বাচন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু তারা একথা খুব ভালো করেই জানেন, যে নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, এখন নির্বাচন পেছালে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো আসন শূন্য হলে তার পরবর্তীতে নব্বই দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন করতে হয়। দৈবদুর্বিপাকের কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আরো নব্বই দিন সময় নিতে পারেন। সেই সময়ও পার হয়ে গেলে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ব্যাখ্যা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আসন দু’টিতে যথাক্রমে মেয়াদ শেষ হবে ১৫ জুলাই ও ১৮ জুলাই। কোনো পক্ষ যাতে আঙুল তুলতে না পারে, সেজন্য কমিশন সুপ্রিম কোর্টের কাছে যেতে চেয়েছিল। এজন্য আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতও নেওয়া হয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই। আর সুপ্রিম কোর্টে গেলে শুনানি হবে, এছাড়াও অন্যান্য প্রক্রিয়ার জন্য সে সময়ের প্রয়োজন সেটাও হাতে নেই। তাই আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী কমিশন ১৪ জুলাই ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইসি সচিব আরও বলেন, এই সময়ের মধ্যে ভোট না করলে রাষ্ট্রের যে কোনো ব্যক্তি সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে মামলা করতে পারেন। আর সংবিধান লঙ্ঘনের শাস্তি খুব মারাত্মক। মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। কাজেই এ দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয়ও নেবে না, কমিশনও নেবে, কেউ নেবে না। এর আগে বিএনপির নির্বাচন পেছানোর দাবিটি ইসি সচিবের কাছে তুলে ধরেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, করোনার এই সময়ে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই কমিশনের কাছে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। কমিশন যদি নির্বাচন না পেছায় তবে আমরাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না।
এক প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, নির্বাচন না পেছালে ব্যালট পেপারে আমাদের প্রার্থীর প্রতীক না রাখারও জন্যও ইসি সচিবকে বলেছি। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কিনা জানি না। ব্যালট পেপারে বিএনপির প্রার্থীর প্রতীক না রাখার দাবির প্রসঙ্গে মো. আলমগীর বলেন, আইন অনুযায়ী নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। এই সময়ের পর আইনগতভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার বা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবার কোনো সুযোগ নেই। কোনো বৈধ প্রার্থী যদি প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে নির্বাচন বর্জন করেন, তবুও তার নামে প্রতীক ব্যালট পেপারে ছাপা হবে।
বগুড়া-১ আসন মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর আসনটির উপ-নির্বাচনের বৈধ ছয় প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। প্রার্থীরা হলেন—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের সহধর্মিণী সাহাদারা মান্নান (নৌকা), বিএনপির একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির মোকছেদুল আলম (লাঙ্গল), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) মো. রনি (বাঘ), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নজরুল ইসলাম (বটগাছ) ও স্বতন্ত্র ইয়াসির রহমতুল্লাহ ইন্তাজ (ট্রাক)। এ নির্বাচনে মোট ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৯৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
গত ১৮ জানুয়ারি সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান মারা গেলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। এরপর শূন্য আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। যশোর-৬ আসন এ আসনে বৈধ তিন প্রার্থী প্রতীক পেয়েছিলেন। তারা হলেন—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন চাকলাদার (নৌকা), বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ (ধানের শীষ) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (লাঙ্গল)। এ আসনে ২ লাখ ৩ হাজার ১৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইসমাত আরা সাদেক জয়ী হন। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি তিনি মারা যান। তার শুন্য আসবে নির্বাচনের তফসিল দেয় ইসি।