নুরন্নবী সবুজ
গত ১১ ডিসেস্বর ২০১৯ ইং ই-জুডিশিয়ারি স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া হাইকোর্টে রিট করেন। অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া বলেন, বিচার কার্য দ্রুত সম্পাদন ও বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তি দূরসহ সংবিধানের ৩১, ৩২ এবং ৩৫ এর (৩) অনুচ্ছেদের চেতনার সঙ্গে বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থা সাংঘর্ষিক বিধায় এ রিট করি। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া।
রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ১৯ জানুয়ারি ২০২০ সারাদেশের আদালতে ই-জুডিশিয়ারি ও ই-কোর্ট রুম দ্রুত স্থাপনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে, ই-জুডিশিয়ারি স্থাপনের বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন আগামী ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতেও বলা হয়। আদালতের এই আদেশের পর থেকে ই-জুডিশিয়ারী গঠন করার বিষয়ে কাজ শুরু হয়। এর আগে ২০১৭ সালে ই-জুডিশিয়ারির প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও প্রকল্পটি আইন মন্ত্রণালয় নাকি সুপ্রিম কোর্ট এই প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করবে তা নিয়ে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে টানাপোড়ন তৈরী হলে কাজটি বেশী দূর আগায়নি। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়ার হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের আদেশের পর নতুন করে ই-জুডিশিয়ারী নিয়ে কাজ শুরু হয়।
ই-জুডিশিয়ারীর আওতায় প্রায় ১৫০০ এজলাসকে ই-আদালত কক্ষে রুপান্তর করা হবে। ৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে রায়ের কপি পর্যন্ত সবই মিলবে অনলাইনে। মামলাজট কমাতে ও অধস্তন আদালতকে আরও গতিশীল করার পাশাপশি করোনার এই সংকট মোকাবেলায় ই-জুডিশায়ী একটি কার্যকর ব্যবস্থা হবে। বিশ্বের অনেক দেশেই ই-জুডিশিয়ারি সক্রিয় রয়েছে। মুজিববর্ষে এমন একটি সুখকর সংবাদ বিচার বিভাগের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় অন্যন্য ভুমিকা রাখবে।
বর্তমানে সময় বিবেচনায় ও বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় আরো দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান অনেকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন বিশ্লেষক ও কলামিস্ট এবং বিচারক জনাব তাজুল ইসলাম বলেন, “ই-জুডিশিয়ারি চালু হলে বিচার কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সহ বিচারপ্রার্থীরা সুফল পাবেন। মামলার দ্রুত নিস্পত্তি ও ন্যায়বিচার আরো সহজ হবে। মুজিববর্ষে এমন একটি ভালো কাজ ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে আইনের জগতে।”
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া তার মন্তব্য জানতে চাইলে বলেন “ ই-জুডিশিয়ারী এবং ই-কোর্ট রুম সফল ভাবে চালু হলে বাংলাদেশে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে ও মামলাজট শুন্যের কোটায় নেমে আসবে ও দূর্নীতির আর কোন সুযোগ থাকবে না। বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী, জনগণসহ বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে এর থেকে সুফল পাবে। বিভিন্ন আদালতে Order Communicate করা সহজ হবে। দেওয়ানী মোকদ্দমা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে, দেওয়ানী মামলার দীর্ঘসূত্রীতা থাকবে না। ই-জুডিশিয়ারীর বাস্তবায়ন প্রমাণ করে আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা অন্য কোন দেশের চেয়ে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই।”
সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আদালতে মামলাজট কমে আসবে, বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি লাঘব হবে এবং সর্বপরি দুর্নীতি কমবে। তিনি আরো দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান করেন। তবে এ বিষয়ে এখন থেকে আদালত সংশ্লিস্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ডিজিটাল কোর্টরুম পরিচালনার উপরে দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের উপরেও গুরুত্বারোপ করেন।
এপিএস/১৭জুন/পিটিআই/এনএস