ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নতুন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান। এতদিন তিনি টুরিস্ট পুলিশের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখার এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেন উপসচিব সিরাজাম মুনিরা।
Nagad_Ad
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানবিক ও সমাজকল্যাণমূলক কাজ করে ব্যতিক্রমী এই পুলিশ কর্মকর্তা ৩৬তম ডিএমপি কমিশনার হলেন। তিনি ডিএমপির বর্তমান কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। গেল বছর ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া গোলাম ফারুকের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলাসহ নানা কারণে ডিএমপি কমিশনারের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই হিসাবে এই গুরুদায়িত্ব পালন করবেন মানবিক ও ডায়নামিক পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান।
অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমানের পেশাদারি মনোভাব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি শতভাগ আনুগত্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ধরন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বলে মন্তব্য সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলের।
মেধাবী এই কর্মকর্তা ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি এবং সবশেষ অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান হিসেবে ব্যাপক প্রশংসিত হন ও সুনাম কুড়ান। এছাড়া চাকরিজীবনে তার ওপর পেশাগত যে দায়িত্বই অর্পিত হয়েছে, তিনি তা সঠিকভাবে পালন করেছেন।
পেশায় পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হলেও সময় পেলেই কাছে টেনে নেন সুবিধাবঞ্চিতদের। তিনি মানবিক কাজ করতে সবসময় ভালোবাসেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে বদলে দিয়েছেন। কাজ করছেন যৌনপল্লীর শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে।
শুধু তাই নয়, ভালো কাজ করতে সহযোগিতার পাশাপাশি দেন দিকনির্দেশনাও। এজন্য খ্যাতি আছে ‘মানবিক পুলিশ অফিসার’ হিসেবে। পাশাপাশি লেখালেখির মতো সৃষ্টিশীল কর্মেও সমান সক্রিয় হাবিবুর রহমান।
গত ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘চিঠিপত্র: শেখ মুজিবুর রহমান’ ও একই বইয়ের ইংরেজি সংস্করণ ‘লেটারস অব শেখ মুজিবুর রহমানের’ মোড়কও উন্মোচন করেন। এই বই দুটি সম্পাদনায় হাবিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. এনায়েত করিম।
‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে তার গ্রন্থিত আরেকটি বইয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত উঠে আসে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি সম্পাদনায় মুন্সিয়ানাও দেখিয়েছেন হাবিবুর রহমান। এছাড়াও হাবিবুর রহমানের গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘ঠার’ আলোচিত। এই বইয়ে তিনি বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে কাজ করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন হাবিবুর রহমান। নিজ গ্রামের মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই তার প্রারম্ভিক শিক্ষাজীবন।
এস এম মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করে গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে ১৯৯৮ সালে কর্মজীবন শুরু করেন। হাবিবুর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে এনে মাত্র একশ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেন; যা নিয়ে তিনি অনন্য নজির স্থাপন করেন। সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে উচ্চ প্রশংসা পান।
২০১৬ সালে হাবিবুর রহমান অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পুলিশ সদরদপ্তরে পদায়িত হন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান। ২০১৯ সালে তিনি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্ব পান। দীর্ঘ তিন বছর তিন মাসের বেশি সময় দায়িত্ব পালন শেষে গেল বছরের ১০ অক্টোবর হাবিবুর রহমান ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান হন।