ঈদুল আজহা উদযাপনের জন্য আট দিন বিরতি দিয়ে আবার যখন বিধিনিষেধ ফিরবে তখন অফিস-আদালতের মতো শিল্পকারখানাও বন্ধ থাকবে। ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আগের বিধিনিষেধগুলো আবারও ফিরে আসবে। তবে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের বিস্তারের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদুল আজহা উদযাপনের জন্য ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সব বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে।
ঈদুল আজহা উদযাপন, ঈদ-পূর্ববর্তী ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে বিধিনিষেধ শিথিল করার কথা জানানো হয় গতকাল জারি করা অফিস আদেশে। ২৩ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া বিধিনিষেধে কয়েকটি নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ রাখা।
করোনাভাইরাসসংক্রান্ত বিধিনিষেধ চালু করার পর থেকেই অর্থনীতির চাকা সচল রাখার স্বার্থে শিল্পকারখানা খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। গত বছর ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তখন অনেক কারখানা বন্ধ করলেও কিছু খোলা ছিল। পরে হঠাৎ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সাধারণ ছুটির মধ্যে কারখানা খোলার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হেঁটে, রিকশাভ্যানে চড়ে কারখানায় পৌঁছান শ্রমিকরা। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে আবার কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হন মালিকরা।
একই বছরের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে কারখানা আবার খুলে দেওয়া হয়। চলতি বছর এপ্রিলে সরকার আবার বিধিনিষেধ দিলেও রপ্তানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা উৎপাদন চালানোর সুযোগ পায়। সর্বশেষ গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত ও পরে ১ জুলাই থেকে চলমান কঠোর বিধিনিষেধেও পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা চালু রয়েছে।
আরও যে বিষয়গুলো বিধিনিষেধে নতুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ভার্চুয়াল অফিস অন্যতম। অফিস বন্ধ থাকলেও সরকারি কর্মচারীরা দাপ্তরিক কাজ ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যমে ভার্চুয়ালি করবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করার বিষয়টিও নতুন। নতুন নির্দেশনায় দুই ঘণ্টা সময় কমিয়ে কাঁচাবাজার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। যা এতদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছিল। এগুলো ছাড়া অন্যসব বিষয়ই পুরনো আদেশের প্রায় অনুরূপ।
উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়া ২৩ দফা বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিমানসহ সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন এবং সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিং মল বা মার্কেটসহ দোকানপাট বন্ধ থাকবে। পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র আগের মতোই বন্ধ থাকবে। বন্ধ রাখা হয়েছে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টির মতো জনসমাবেশ হয় এমন ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান।
যা কিছু খোলা : আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কভিড-১৯ টিকা দেওয়া, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসহ অন্যান্য জরুরি বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে চলাচল করতে পারবে। জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, নৌযান, পণ্যবাহী রেল ও ফেরি কার্গো এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং সংশ্লিষ্ট অফিস নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি করতে পারবে।
সাধারণ চলাচল : ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার এসবের মতো অতিজরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা করোনাভাইরাসের টিকার তারিখ পেয়েছেন, তারা টিকাকার্ড দেখিয়ে নির্ধারিত দিনে টিকাকেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারবেন। এ সময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট দেখিয়ে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।
বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে। ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশ দেবে।
‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলাপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি বা কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব, আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি এবং সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এ বিষয়ে মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। সংক্রামক রোগ আইনের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশে গত ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের জন্য সরকার সারা দেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে তা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। যার মেয়াদ আজ বুধবার (১৪ জুলাই) মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে।