অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের ছয় জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিপতসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা, মুহুরী, খোয়াই, কংস, ভোগাই, যাদুকাটা, চেল্লাখালী, সোমেশ্বরী ও মহারশি নদীর পানি।
কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। হালুয়াঘাটে হঠাৎ বন্যা হয়েছে মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলে। ঘরবাড়ি, স্কুল, বাজারে পানি ঢুকে মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলেছে। নালিতাবাড়ী, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে নদনদীর পানি। উজানের ঢলে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ছাপিয়ে দুই পাড়ের গ্রামগঞ্জ প্লাবিত করে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। কুড়িগ্রামে উজানের ঢলে ৫০ চরগ্রাম প্লাবিত। পানি বৃদ্ধির ফলে ধরলা ও তিস্তার ৫০টি চরের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার পাট, ভুট্টা, আউশ ধান, বীজতলা ও সবজিখেত নিমজ্জিত হয়েছে।
ধরলার ভাঙনে সারডোবে বিকল্প বাঁধের অবশিষ্টাংশ ভেঙে পানি ঢুকছে। ফলে ভাটিতে থাকা ১৫টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার গ্রামীণ সড়ক ডুবে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যোগাযোগ। উজান থেকে নেমে আসা ভোগাই-চেল্লাখালি নদীর পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ীসহ ছয়টি ইউনিয়নের ৫০টির অধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঢলের পানিতে ঝিনাইগাতী সদর বাজারসহ সদর ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাড়িঘরে পানি উঠেছে। ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে অন্তত ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে জানিয়েছে, টানা ভারী বৃষ্টি এবং সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা, সুরমার পানি বাড়ছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বেড়ে কিছু এলাকায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং কাছাকাছি ভারতের হিমালয় পাদদেশের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্র জানায়, কয়েক দিন দেশের অভ্যন্তরে ও সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলোতে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদনদীর পানি বাড়ছে ও বিপত্সীমার ওপরে উঠে এসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা নদনদীর পানির উচ্চতা বাড়ছে, যা আজো অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৫ থেকে ৭ জুলাই এর মধ্যে বাহাদুরাবাদ স্টেশনে পানি সমতল বিপতসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা রয়েছে। তখন বিশাল এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়তে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ক্রমান্বয়ে বাড়তে পারে।
আগামী ছয় দিনে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় বিপতসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা নেই। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানির উচ্চতা ক্রমান্বয়ে বাড়তে পারে। তবে আপাতত বিপত্সীমা অতিক্রমের আশঙ্কা নেই। পাউবোর পর্যবেক্ষণাধীন বিভিন্ন নদনদীর ১০১টি পয়েন্টের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭৮ পয়েন্টে পানি বেড়েছে। কমেছে ২২টি পয়েন্টের পানির উচ্চতা। মুহুরী নদীর পানি পরশুরাম পয়েন্টে বিপত্সীমার ১১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কংশ নদীর পানি জারিয়াজাঞ্জাইল পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নীলফামারী জেলার ডিমলার ডালিয়া পয়েন্টের তিস্তার পানি বিপত্সীমার দশমিক ৭ মিটার ওপরে এবং শেরপুরের নালিতাবাড়ির নাকুগাঁও পয়েন্টে মেঘালয় থেকে নেমে আসা ভোগাই নদীর পানি দশমিক ২০ মিটার ওপরে উঠে আসে।