সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে সারা দেশে ২২০টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৩০৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। একই সময়ে ২০২০ সালে ১৬২টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় মোট ১৮৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিল।
গত বছর থেকে কোভিড মহামারি চলমান থাকার পরেও দুর্ঘটনা এবং নিহত শ্রমিকের সংখ্যা কমেনি বরং আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারি সংস্থা সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি ২৬টি দৈনিক সংবাদপত্র (১৫টি জাতীয় এবং ১১টি স্থানীয়) মনিটরিং করে বুধবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে যে সব শ্রমিক কর্মক্ষেত্রের বাইরে অথবা কর্মক্ষেত্র থেকে আসা-যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় তাদের জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
জরিপে প্রাপ্ত কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে পরিবহন খাতে। যাদের সংখ্যা মোট ১২০। এর পরেই রয়েছে নির্মাণ খাত—এই খাতে নিহত হয়েছে ৭৮, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে (যেমন-ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) ৫০, কৃষি খাতে ৩১ এবং কলকারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে এ সংখ্যা ২৭ জন।
মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ১২২ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে ১২০ জনই পরিবহন খাতের শ্রমিক; বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৪২ জন; ছাদ, মাচা বা ওপর থেকে পড়ে মারা গেছে ৩২ জন; বজ্রপাতে ২৯ জন; শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ২২ জন; পাহাড় বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ, দেওয়াল ধসে ২২ জন; আগুনে পুড়ে ২১ জন; রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাংক বা পানির ট্যাংকের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ জন শ্রমিক এবং পানিতে ডুবে ছয় জন শ্রমিক নিহত হন।
সেইফটি অ্যান্ড রাইটস-এর নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমজীবীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে। বিগত সময়ে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি যতটুকু এগিয়েছিল বর্তমানে তা আবার পিছিয়ে পড়ছে। কেননা পরিদর্শন ব্যবস্থা দুর্বল। কর্মদুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নির্মাণ খাতের শ্রমিকরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। কাজ করাকালীন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান না করায় এবং সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকায় এই খাতে শ্রমিকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষাসহ জীবন মান উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে কোনোরকম বিশেষ বরাদ্দ বা ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বজ্রপাতে শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মৃত্যু প্রতিবছর বেড়েই চলছে, যা প্রতিরোধে চুম্বকদণ্ড স্থাপনসহ অন্যান্য ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। শ্রমিকের সুরক্ষার জন্য শ্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে এবং বাজেটে শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।
কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির প্রস্তাব হচ্ছে—সব সেক্টরের জন্য পরিদর্শন ব্যবস্থা জোরদার, রাজউক ও কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবশ্যই যথাযথভাবে আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন, নির্মাণ কাজ শুরুর পূর্বে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুসরণ, বিনা মূল্যে যথাযথ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদান, নিয়মিত অগ্নি মহড়া এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।